আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চূড়ান্ত মনোনয়ন নিয়ে চলছে চরম নাটকীয়তা। দলীয় হাইকমান্ড প্রাথমিকভাবে শওকতুল ইসলাম শকু-কে ধানের শীষের প্রতীক বরাদ্দ দিলেও, এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে নারাজ স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকরা। সাংগঠনিক অদক্ষতা এবং জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ তুলে তারা অবিলম্বে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।
নেতাকর্মীদের দাবি—আসনটি পুনরুদ্ধার করতে হলে পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা এডভোকেট আবেদ রাজার কোনো বিকল্প নেই।
তৃণমূলের ক্ষোভের মূল কারণ শওকতুল ইসলাম শকু-র সাম্প্রতিক সাংগঠনিক ব্যর্থতা। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর ২০২৫ - এ অনুষ্ঠিত কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে শওকতুল ইসলাম শকু সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়নাল আবেদীন বাচ্চু এর কাছে পরাজিত হন।
দলের একাংশের প্রশ্ন, "যিনি মাত্র দুই মাস আগে দলের অভ্যন্তরীণ কাউন্সিলে নিজ দলের কর্মীদের ভোটে পরাজিত হয়েছেন, তিনি কীভাবে জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষের মতো ভারী প্রতীক বহন করবেন?" এছাড়া দীর্ঘদিন প্রবাসে অবস্থানের কারণে দলের মূল স্রোত ও রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে তার অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সাধারণ ভোটার ও কর্মীদের মতে, মাঠের রাজনীতির বাইরে থাকা একজন নেতার হাতে প্রতীক তুলে দিলে এই আসনে বিএনপির বিজয় অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে, দলের দুর্দিনে রাজপথে থাকা এডভোকেট আবেদ রাজার পক্ষে জনমত ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনেও এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন।
তৃণমূল কর্মীরা জানান, গত ১৭ বছর ধরে মামলা, হামলা এবং সরকারি নির্যাতনের শিকার হয়েও আবেদ রাজা দল ছেড়ে যাননি। বরং কুলাউড়া বিএনপির প্রতিটি সংকটে তিনি ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এই ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে এবং আসনটি নিশ্চিতভাবে ঘরে তুলতে হলে আবেদ রাজাই যোগ্যতম প্রার্থী।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় কুলাউড়া
কুলাউড়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ ভোটারদের মতে, প্রাথমিক মনোনয়নের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করলে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট হতে পারে, যার সুবিধা নেবে প্রতিপক্ষ।
তৃণমূলের দাবি এখন একটাই—হাইকমান্ড যেন বাস্তবতা অনুধাবন করে। সাংগঠনিক বাস্তবতা ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ মুহূর্তে শওকতুল ইসলাম শকু-র পরিবর্তে এডভোকেট আবেদ রাজাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিলে মৌলভীবাজার-২ আসনে ধানের শীষের বিজয় সহজ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এখন দেখার বিষয়, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব তৃণমূলের এই আবেগের মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে কি না।
প্রধান সম্পাদকঃ সারওয়ার খান
সম্পাদকঃ জাকের খান (রুবেল)
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫