বিছনাকান্দি, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলাভ‚মির নাম। কিন্তু গোয়াইনঘাট উপজেলার নয়নাভিরাম এই পর্যটনকেন্দ্রটি আজ ধুঁকছে। যাতায়াত ব্যবস্থায় নজিরবিহীন দুর্ভোগ, পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও স্থানীয়দের অনাগ্রহের কারণে বিছনাকান্দি এখন অনেকটা পর্যটকশূন্য। সাপ্তাহিক ছুটির দিন কিংবা বিশেষ কোনো দিবসেও হাতগোনা পর্যটকদের দেখা মিলে বিছনাকান্দিতে। সড়ক পথের দুর্ভোগ জয় করে যারা একবার ঘুরতে যান সেখানে তারাও আর দ্বিতীয়বার যাওয়ার আগ্রহ দেখান না।
তবে সিলেট ৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আরিফুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, গোয়াইনঘাট আসলে দেখা যায় ওরা দেশে উন্নয়নের মহাসড়ক নয় মহাগর্ত করে রেখেছে।
গত কয়েক বছর ধরে বিছনাকান্দির এই অবস্থা চলতে থাকলেও নিরব দর্শক স্থানীয় প্রশাসন। হাতেগোনা যে পর্যটক যান তাদের জন্যও নেই পর্যাপ্ত সুবিধা। নামেমাত্র একটি শৌচাগার সেটিও ব্যবহার অনুপযোগী। নেই নারীদের পোষাক পাল্টানোর নিরাপদ স্থান। পর্যটকদের টানতে স্থানীয়দেরও আগ্রহ নেই। এ যেন অযত্নে-অবহেলায় ধুঁকে ধুঁকে মরার মতো অবস্থা।
অন্যদিকে, পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় বিছনাকান্দির পাথর লুটও চলছে নিরবে। রাতের আধাঁরে ছোট ছোট পাথর লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। বড় বড় পাথর ছাড়া ছোট কোনো পাথরের অস্থিতত্বই নেই সেখানে।
আবার,পর্যটক কমে যাওয়ায় বেকার যুবক ও তরুণরা ঝুঁকছেন চোরাচালানের কাজে। চোরাকারবারিদের বেপরোয়া আচরণে পর্যটকরাও হেনস্থার মুখোমুখি হতে হয়। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্র বিছনাকান্দির আশেপাশে মোবাইলে প্রকৃতির ছবি তুলতেও বাধা দেন চোরকারবারিরা। এতে করে বিছনাকান্দি একদিকে যেমন পর্যটক হারাচ্ছে, অন্যদিকে তার সৌন্দর্যও হারিয়েছে বহুগুণে।
অবশ্য সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগেুলোকে নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনার কথা বলছে জেলা প্রশাসন। সেই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিছানাকান্দি ফিরে পেতে পারে তার আগের রূপ। তবে, এর আগেও বিছনাকান্দিসহ সিলেটের সকল পর্যটন কেন্দ্র নিয়ে মহাপরিকল্পনা করেছিল বাংলাদেশ ট্যুরিজম উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু এসব মহাপরিকল্পনা কেবল কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকায় বাস্তবে সরকারি উদ্যোগে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি এই পর্যটনকেন্দ্রে।
বিছনকান্দির অবস্থান গোয়াইনঘাট উপজেলায়। সিলেট শহর থেকে দূরত্ব মাত্র ২৬ কিলোমিটার। এই পথ পাড়ি দিতে সড়কপথে আধা ঘণ্টা লাগার কথা। কিন্তু ভাঙাচোরা ও বিধ্বস্ত সড়কের কারণে সেখানে পৌঁছতে অন্তত দুই ঘণ্টার মতো সময় লাগে। কখনও যানজটে আটকা পড়লে দুই ঘন্টারও বেশি সময় লাগে পৌঁছাতে।
স্থানীয় ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ ও ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিছনাকান্দি ছিল ভ্রমনপিপাসুদের অন্যতম পছন্দের পর্যটনকেন্দ্র। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত পর্যটক ভীড় করতেন বিছনাকান্দিতে। কিন্তু সালুটিকর-হাদারপাড় সড়কের অবস্থা খারাপ হতে শুরু হওয়ায় পর্যটক কমা শুরু হয়। এরপর সড়ক দুর্ভোগ আরও বাড়তে থাকায় পর্যটকরাও পিছু হটতে শুরু করেন।
বিশেষ করে সড়কের বঙ্গবীর এলাকা থেকে হাদারপাড় পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার সড়ক পুরোটাই বিধ্বস্ত হয়ে পড়ায় এই এলাকার পর্য়টন শিল্পে বড় ধাক্কা লাগে। এরপর কয়েক দফায় সড়ক সংস্কার করা হলেও পর্যটকদের ভীড় বাড়েনি।
সর্বশেষ ২০২০ সালের পর থেকে বিছনাকন্দির সড়ক যোগাযোগ একেবারে বেহাল হয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে পর্যটকদের উপর। ২০২২ সালে সালুটিকর-হাদারপাড় সড়কের কাজ শেষ শুরু হলেও তা এখনও শেষ হয়নি।
প্রধান সম্পাদকঃ সারওয়ার খান
সম্পাদকঃ জাকের খান (রুবেল)
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫