তামিম মজিদ:
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) সমীক্ষা বলছে, চার কারণেই সিলেট নগরে যানজট লেগে থাকে। কারণ চিহ্নিত করতে পারলেও যানজট নিরসন করতে পারছে না সিসিক। যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপও নেই কর্তৃপক্ষের। এতে সড়কে বেড়েছে বিশৃঙ্খলা, ফলে নগরজুড়ে বেড়েছে তীব্র যানজট। যানজটের ভোগান্তি এখন নগরবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। নগরবাসী বলছেন, সিলেট নগরীর যানজট নিরসনে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব পড়বে নগরবাসীর উপর। ফলে ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠবে এই নগর। যানজট বাড়ায় মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি প্রভাব পড়ছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে।
তবে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহের বড় শহরগুলোতে নগর সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। নগর কর্তৃপক্ষের অধীনেই সেখানকার সকল সরকারি দপ্তর। ফলে নগর সরকার যেকোনো সিদ্ধান্ত
সহজেই বাস্তবায়ন করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে ঠিক উল্টো, এখানকার নগর কর্তৃপক্ষের অধীনে নেই কোনো সরকারি দপ্তর। যেকোনা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে চিঠি চালাচালিতেই সময় পার হয়ে যায়, সিদ্ধান্ত আর বাস্তবায়ন হয় না। ফলে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে না সিটি কর্পোরেশেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখার তথ্য বলছে, নগরের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে হকারদের ব্যবসা পরিচালনা, যত্রতত্র অস্থায়ী সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড, বিপণিবিতান ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পার্কিং না থাকা ও সরু রাস্তা, সিলেটে যানজটের এই চার কারণ।
জানা গেছে, নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, বারুতখানা, জেল রোড, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, মদিনা মার্কেট, লামাবাজার, তালতলা, সুরমা মার্কেট, রিকাবীবাজার, নাইওরপুল, সোবহানীঘাট, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, ইসলামপুর, উপশহর মোড়, কালীঘাট, লালদীঘিরপাড়, মহাজনপট্টি ও হুমায়ূন রশিদ চত্বর এলাকায় প্রতিদিনই যানজট হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি যানজট থাকে। দিনের বেলাও অনেক সময় কালীঘাট এলাকায় মালবাহী ট্রাক ঢুকে পড়ছে। এতে ওই এলাকার যানজট প্রকট আকার ধারণ করছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের বন্দরবাজার থেকে টিলাগড়-ইসলামপুর পর্যন্ত যানজট নিত্যদিনের চিত্র। সড়কটি সরু হওয়ায় এবং ওই সড়কের একাংশ দখল করে হকারেরা মাছ, সবজি, ফল, পোশাক বিক্রি করায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। মদিনা মার্কেট-বাগবাড়ীমুখী সড়কের পাশে অস্থায়ী সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড বসানোয় মূল সড়কটি অনেকটা সরু হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন এ কারণেই এ সড়কে যানজট হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বন্দরবাজার, আম্বরখানা, চৌহাট্টা ও উপশহর এলাকায় যানজট চরম আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই এসব সড়কে যানজট লেগে থাকে। ফলে নগরবাসীর ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। তথ্য বলছে, নগরের অন্তত ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড আছে, সেসব উচ্ছেদে ট্রাফিক পুলিশ কিংবা সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই।
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. তৌফিক মিয়া বলেন, জিন্দাবাজার এলাকায় সবসময়ই যানজট লেগে থাকে। এই এলাকায় মূলত সড়ক দখল করে হকারদের ভাসমান দোকানের কারণেই যানজট হয়।
নগরের পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, এই এলাকায় আগে এতটা যানজট ছিল না। দুই বছর ধরে এখানে যানজট বেড়েছে। এই সড়কে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতান আছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পার্কিং নেই। এতে অনেকে রাস্তার মধ্যে পার্কিং করছেন। এ ছাড়া ফুটপাত বেদখল ও সড়কে অস্থায়ী স্ট্যান্ড বসানোও যানজটের অন্যতম কারণ।
জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জালালাবাদকে বলেন, নানা কারণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যায় না। এই শহরের বেশিরভাগ সড়কই সরু। প্রশস্ত করতে গেলেই অনেক সমস্যা। তাও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাহেব সাধ্যমত কিছুটা সড়ক প্রশস্ত করে গেছেন। কিন্তু সব সড়ক তো প্রশস্ত করা যায়নি। যানজটের এটা একটা কারণ। তিনি বলেন, নগরে পার্কিং ব্যবস্থা নেই। বন্দরবাজারের রংমহল টাওয়ারের পেছনে সিটি কর্পোরেশন একটা বহুল পার্কিং জোন তৈরি করতে চেয়ছিল। কিন্তু সেই জায়গা জেল কর্তৃপক্ষের, অন্য দপ্তরের জায়গা হওয়ায় সেটা পাওয়াও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
নূর আজিজুর রহমান বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহের বড় শহরগুলোতে নগর সরকার ব্যবস্থাপনা বিদ্যমান। নগর কর্তৃপক্ষের অধীনেই সেখানকার সকল সরকারি দপ্তর। যেমন চীনে গিয়ে দেখেছি, তারা কিভাবে নগর ব্যবস্থাপনা করে। ওখানকার সবকিছু নগর কর্তৃপক্ষের অধীনে, তাই যেকোনো সমস্যা সকল স্টেকহোল্ডারকে ডেকে সভা করে মেয়র সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন। সহজেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে তো সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় সিটির অধীনে কোনো সরকারি সংস্থা বা অধিদপ্তর না। এছাড়াও অনেক স্টেকহোল্ডার রয়েছেন। এজন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত সহজে বাস্তবায়ন করা যায় না। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, তবুও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে নগরকে বাসযোগ্য রাখা যায়।
শেয়ার করুন