যালেমদের জন্য সতর্কবার্তা
মাহমুদুর রহমান দিলাওয়ার
দুনিয়ায় যুগে যুগে যুলুম ছিলো। আজও আছে। যালিমদের দাপট, ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা দাম্ভিকতা আগে ছিলো। আজও আছে। অধিকাংশ যালিমদের বদনসিব তারা ইতিহাস ও বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে না! আল্লাহ তা’য়ালার ঘোষণা: অতঃপর আমি বহু জনপদ ধ্বংস করেছি যেগুলোর বাসিন্দা ছিলো যালেম। (২২. সূরা আল-হাজ্জ: ৪৫)। হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিমকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যখন তিনি তাকে পাকড়াও করেন, তখন আর ছাড়েন না। (বুখারী ও মুসলিম)।
আর আমি কারূন, ফির’আউন ও হামানকে ধ্বংস করেছিলাম। আর অবশ্যই মুসা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিলো। অতঃপর তারা জমিনে অহংকার করেছিলো। কিন্তু তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি। সুতরাং তাদের প্রত্যেককেই আমি তার অপরাধের জন্য পাকড়াও করেছিলাম। তাদের কারো উপর আমি পাঠিয়েছিলাম প্রস্তরসহ প্রচন্ড ঝটিকা, তাদের কাউকে আঘাত করেছিলো মহানাদ, কাউকে আমি প্রোথিত করেছিলাম ভূগর্ভে এবং কাউকে আমি করেছিলাম নিমজ্জিত। আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদের প্রতি যুলুম করবেন। বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করছিলো। (২৯. সূরা আল-আনকাবুত: ৩৯-৪০)।
কারূন যালিম ছিলো। প্রাসাদ আর ধনভাণ্ডারের অহমিকায় সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। যার পরিপ্রেক্ষিতে ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠেছিলো এবং তাই হয়েছে! ২৮. সূরা আল-কাসাসে বর্ণিত হয়েছে: ৭৬. নিশ্চয়ই কারূন ছিলো মুসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিলো। আর আমি তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভাণ্ডার যার চাবিগুলো বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিলো। স্মরণ করুন, যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিলো, অহংকার করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। ৭৮. সে বললো, এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞানবলে পেয়েছি। সে কি জানতো না, আল্লাহ তার আগে ধ্বংস করেছেন বহু প্রজন্মকে, যারা তার চেয়ে শক্তিতে ছিলো প্রবল, জনসংখ্যায় ছিলো অধিক। আর অপরাধীকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না। ৮১. অতঃপর আমি কারূনকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে প্রোথিত করলাম। তার স্বপক্ষে এমন কোনো দল ছিলো না যে আল্লাহর শাস্তি হতে তাকে সাহায্য করতে পারতো এবং সে নিজেও নিজেকে সাহায্য করতে সক্ষম ছিলো না।
ফির’আউন ছিলো ক্ষমতার অপব্যবহারকারী একজন যালিম। নিজেকে সবচেয়ে বড় মনে করতো। দাম্ভিক কন্ঠে সে নিজেকে বড় রব হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলো। ৭৯. সূরা আন-নাযিয়াতে উল্লেখিত হয়েছে: ২৪. অতঃপর বললো, আমিই তোমাদের বড় রব। ২৫. অতঃপর আল্লাহ তাকে আখেরাতে ও দুনিয়ায় কঠিন শাস্তিতে পাকড়াও করলেন। ২৬. নিশ্চয়ই যে ভয় করে তার জন্য তো এতে শিক্ষা রয়েছে। ২৮. সূরা আল-কাসাসে বর্ণিত হয়েছে: ৩৯. আর ফির’আউন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে জমিনে অহংকার করেছিলো এবং তারা মনে করেছিলো যে, তাদেরকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনা হবে না। ৪০. অতঃপর আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম এবং তাদেরকে সাগরে নিক্ষেপ করলাম। সুতরাং দেখুন, যালিমদের পরিণতি কিরূপ হয়েছিলো।
নমরূদ ছিলো অহংকারী ও সীমালঙ্ঘনকারী কাফির। রাজত্ব পরিচালনায় ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারী। তার অহমিকা ধ্বংস করার জন্য, আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর ক্ষুদ্র সৃষ্টি মশাকে প্রেরণ করেছিলেন। ২. সূরা আল-বাকারাহ’য় বর্ণিত হয়েছে: ২৫৮. আপনি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখেন নি, যে ইব্রাহীমের সাথে তাঁর রব সম্বন্ধে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলো, যেহেতু আল্লাহ তাকে রাজত্ব দিয়েছিলেন। যখন ইব্রাহীম বললেন, আমার রব তিনিই যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্য ঘটান। সে বললো, আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই। ইব্রাহীম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদয় করান, তুমি সেটাকে পশ্চিম দিক থেকে উদয় করাও তো। তারপর যে কুফরী করেছিলো সে হতবুদ্ধি হয়ে গেলো। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
সর্বশেষ বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাঃ) একইরকম যুলুমের মুখোমুখি হয়েছেন। আবু জাহেল, উতবা-শাইবাদের মাত্রাতিরিক্ত যুলুম ও বিরোধিতায় কষ্ট ও ত্যাগ-কুরবানীর নজরানা পেশ করতে হয়েছে। পরবর্তী যুগ থেকে আজ অবধি সেই যুলুম অব্যাহত আছে। বর্তমান যুগের যালিমরা পূর্বসূরিদের ন্যায় ভূমিকা পালন করছে। তাদেরকে অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। নতুবা দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে ভয়াবহ পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
লেখক: সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি, বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরীন।
শেয়ার করুন