যুক্তরাষ্ট্র নিজের দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকে তাকায় না: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়

যুক্তরাষ্ট্র নিজের দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকে তাকায় না। অথচ আমাদের শ্রম অধিকার নিয়ে কথা বলে, সবক দিতে আসে। অন্য দেশের বিষয়ে নাক গলায়। তারা আমার বিরুদ্ধে লাগলেও তাতে কিছু আসে যায় না। জনগণের শক্তিই হলো বড় শক্তি।

আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সিআরআই (সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন) আয়োজিত লেটস টক অনুষ্ঠানে তরুণের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

গত শুক্রবার রাতে ধারণ করা অনুষ্ঠানটি প্রায় এক সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে তরুণদের ভাবনা ও তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো জেনে নেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তাদের নানা প্রশ্নের জবাবও দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে তখন নিজের দেশের দিকে তাকায় না। স্কুলে, রেস্টুরেন্টে মানুষকে গুলি করে মারে। তাদের মোড়লিপনা কে করতে দিল জানি না। প্যালেস্টাইনের বিষয়ে চুপ থাকে। ইউক্রেনে এক স্ট্যান্ড নেয়, প্যালেস্টাইনের বেলায় অন্য স্ট্যান্ড নেয়। ইসরায়েলকে অস্ত্র কেনার জন্য টাকা দিচ্ছে। দেশটির মানবাধিকারের ডেফিনেশন কী, তা–ই আমার প্রশ্ন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার নাতি-নাতনি বিদেশে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকায়, তাদের পাই না। আজ এক ঝাঁক নাতি-নাতনি পেলাম।

স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে দেখতে পাই কম্পিউটার ও বিজ্ঞানের প্রতি কারও খুব আগ্রহ ছিল না। তাই আমি ক্ষমতায় এসেই কম্পিউটারের ওপর জোর দিচ্ছিলাম। আমরা লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেছি। এখন দেশে ইন্টারনেট সংযোগ আছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। দেশে ফোর-জি ব্যবহার হচ্ছে। ফাইভ-জিও চালুর প্রস্তুতি চলছে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে ভাবার সময় আমার ছেলে (সজীব ওয়াজেদ জয়) বুদ্ধি দিল স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার।

তিনি বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা নিজের দক্ষতা অর্জন করবে এবং শিক্ষা-জ্ঞানে ও প্রযুক্তিবিজ্ঞানে দক্ষ জনশক্তি হিসেব গড়ে উঠবে। পাশাপাশি সরকারেকেও স্মার্ট সরকার করতে হবে। আমি যখন প্রথমবার এলাম দেখলাম কম্পিউটার সাজানো আছে, কিন্তু কেউ ছুঁয়ে দেখে না। এখন সবার হাতে হাতে এসব ডিভাইস আছে। সব ডিজিটাল করে দিলাম। আমি সরকারে আসার পর সবার জন্য মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দিলাম। স্কুলে কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু করলাম। এখন সব জায়গায়।

তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারি সব কাজ ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য। স্মার্ট সরকার হবে। পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতিও স্মার্ট হবে। সরকার ডিজিটালাইজড হলে আমাদের কর্মঘণ্টা বাঁচবে, যোগাযোগ ও যাতায়াতে সমস্যা হবে না। সেই সঙ্গে চাই আমাদের সোসাইটিও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করুক। এখন পেনসন থেকে শুরু করে সব কাজই অনলাইনে করতে পারে।

সরকার প্রধান বলেন, তিনি দেশের তরুণদের কোনো বিষয়ে বৈষম্যের শিকার দেখতে চান না। আঞ্চলিকতা বা লৈঙ্গিক, কোনো কারণে কেউ পিছিয়ে থাকবে- এটা তিনি চান না। তিনি চান, সবাই কাজ করে নিজের জীবনকে উন্নত করবে। সেই নিশ্চয়তাটুকুই দিতে চান।

তিনি আরও বলেন, আমি চাই তারা প্রত্যেকে একটা অধিকার নিয়ে সমাজে দাঁড়াবে এবং সেইভাবে কাজ করবে। এই অবস্থাটা আমরা সৃষ্টি করেছি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে হোক, পঞ্চগড়ে হোক, দক্ষিণের সুন্দরবনে হোক, সব জায়গায় ছেলে মেয়ে, মানুষ সমানভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। কাজ করবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। নিজের জীবনকে উন্নত করবে, সেই নিশ্চয়তাটুকু আমরা দিতে চাই।’

২০১৮ সালে লেটস টক অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো তরুণদের মুখোমুখি হন শেখ হাসিনা। এবারের অনুষ্ঠানে তিনি আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি এবং তরুণদের নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণ বিষয়ে কথা বলেন।

ট্রান্সজেন্ডার ও প্রতিবন্ধীরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে অধিকার নিয়ে সমাজে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *