রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের রাখার দাবিতে সিলেটে বাম জোটের বিক্ষোভ

সিলেট
রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা এবং গ্রাম-শহরে শ্রমজীবী ও নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য রেশনিং ও ন্যায্য মূল্যের দোকান চালুর দাবিতে সিলেটে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্টিত হয়েছে।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (২২ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর সিটি পয়েন্টে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নগরীর গুরুত্ব পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিম মিনারে গিয়ে শেষ হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোট সিলেট জেলা শাখার সমন্বয়ক বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের জেলা সভাপতি সিরাজ আহমেদ এর সভাপতিত্বে ও সিপিবি জেলার নেতা দেবব্রত পাল মিন্টুর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, সিপিবি সিলেট বিভাগীয় সমনয়কারী এডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়, বাসদ জেলা আহবায়ক আবু জাফর।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, সিপিবি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাছান, বাসদ জেলার সদস্য সচিব প্রণব জ্যোতি পাল, ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) জেলার সাধারণ সম্পাদক হরিধন দাস, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা সদস্য মোখলেছুর রহমান।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ৩০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। সোনালি ও কর্কসহ দেশি মুরগির দামও ৬০০ টাকার বেশি। গরু-খাসির মাংসের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে অনেক আগেই চলে গেছে। সস্তা মাছ হিসাবে পরিচিত পাঙ্গাস, তেলাপিয়ার দামও ২০০ টাকার উপরে। চাল-আটা, তেল-চিনি, ডাল-ময়দা, মশলাসহ কনফেকশনারি পণ্যের দামও ক্রমাগত বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কাঁচা তরিতরকারির দামও। দ্রব্যমূল্যের এই পাগলা ঘোড়া কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। মন্ত্রীরা বারবারই বলছে, রমজানে সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। দেশে খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে তাই নয় বাজার সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সাধারণ মানুষের জীবন দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে চরমভাবে বিপর্যস্ত। অনেক আগেই ৬৪ শতাংশ মানুষ খাদ্য কিনতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ২৯ শতাংশ পরিবার তাদের সঞ্চয় ভেঙেছে। গত এক বছরে ১০ শতাংশ পরিবার তাদের সব সঞ্চয় ভেঙে খেয়েছে। মানুষ টিসিবি’র পণ্য কিনতে ৫-৬ ঘণ্টা ট্রাকের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে না পেরে মানুষের পুষ্টিহীনতা বেড়ে ইতিমধ্যে তা ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মানুষ তাদের খাদ্য তালিকা থেকে ইতিমধ্যেই মাছ-মাংস, দুধ-ডিম বাদ দিয়েছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি বিদ্যুৎ-গ্যাস, পানির মূল্যও বাড়ছে। বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া বৃদ্ধিও থেমে নেই। বাড়ছে শিক্ষা ব্যয় ও চিকিৎসা খরচ। বাস্তবে, মূল্যবৃদ্ধির চাপে দেশের মানুষ দিশেহারা। এ রকম পরিস্থিতিতে সব চেয়ে বেশি ভোগান্তি বেড়েছে শ্রমজীবী, মেহনতি নিন্ম আয়ের গরিব মানুষের। সরকার যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভ‚মিকা না রাখে তা হলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান এবং সারা দেশে ন্যায্য মূল্যের দোকান খুলে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার আহ্বান জানান। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দুইটি খাল খনন করে তিস্তা ও জলঢাকা নদীথেকে পানি প্রত্যাহার পরিকল্পনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ  করেছেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *