আরিফুল ইসলাম, জেলা প্রতিনিধিঃ
টানা তিন মাস ১৭ দিন বন্ধ থাকার পর আগামী ১৮ আগস্ট থেকে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু হতে যাচ্ছে।
আজ বুধবার(১০ আগস্ট) বিকালে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক সূত্র জানা যায় রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু সংক্রান্ত করণীয় নির্ধারণে বুধবার বৈঠক ডাকে জেলা প্রশাসন।
প্রতি বছরের ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত এ তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও ১ আগস্ট থেকে স্বাভাবিক নিয়মে আহরণ শুরু হয়। তবে হ্রদের পানি পর্যাপ্ত না বাড়ায় ও মাছের পোনার বৃদ্ধির লক্ষে গত ২৮ জুলাই বৈঠক ডেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম দফায় ১৫ দিন আহরণ বন্ধের নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হয়। তবে এ বৈঠকে গেল বছরের মতো দ্বিতীয় দফায় আহরণ বন্ধের সময়সীমা বাড়ানো হয়নি।
বিকাল ৪টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. তৌহিদুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) রাঙ্গামাটি নদী উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা লিপন মিয়া, মৎস্য ব্যবসায়ী উদয়ন বড়ুয়া, আব্দুর শুক্কুর, হারুন, মজিদ, মান্না সওদাগরসহ অন্যরা। বৈঠকে সভার যৌথ সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে এখন ৯৫ দশমিক ৬০ মীনস সী লেভেল (এমএসএল) পানি রয়েছে। হ্রদে পানির সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ১০৯ এমএমএস। তবে ১০৫ এমএসএলের ওপর পানি বাড়লে স্লুইসগেইট পানি ছেড়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
মাছ আহরণ শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক জানান।১৮ আগস্ট থেকেই কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে ব্যবসায়ী, বিএফডিসি ও সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলাপ্রশাসক বলেন, হ্রদে বর্তমানে পানির পরিমাণ ৯৬ এমএসএল। যদিও ১০২ এমএসএল হলে হ্রদে আহরণ শুরু হতো। সামনের কদিনে বৃষ্টিপাত হলে হ্রদে পানি বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বিএফডিসি রাঙ্গামাটি বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, হ্রদে পানির পরিমাণ এখন কিছুটা কম হলেও ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২৮ জুলাইয়ের বৈঠকের সময় পানি ছিল ৯০ এমএসএলের মতো, এখন যেটা দাঁড়িয়েছে ৯৬ এমএসএলে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ১৮ আগস্ট থেকে মাছ আহরণ হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছরের ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের সুষম বৃদ্ধি, হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এসময় হ্রদের মাছ বাজারজাতকরণ ও স্থানীয় বরফকলগুলোও বন্ধ থাকে। হ্রদে নিষেধাজ্ঞা মানাতে নৌ-পুলিশের পাশাপাশি বিএফডিসির মনিটরিং টিম দায়িত্বপালন করে।
তবে বিগত ৩ বছর ধরে হ্রদের পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে না বাড়ার কারণে বিলম্বে মাছ আহরণ হচ্ছে। এর আগের বছরও ১০ দিন বাড়িতে ১১ জুলাই মধ্যে রাতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। তবে এর আগে স্বাভাবিক নিয়মে ব্যত্যয় ঘটেনি।এবার ও ৩ মাস ১৭ দিন পর মাছ ধরা শুরু হচ্ছে বৃহৎ জলরাশি কাপ্তাই হ্রদে।
শেয়ার করুন