রাজনীতিতে ‘কুল্লু খালাস হয়ে’ দেশ ছাড়ছেন বদরুজ্জামান সেলিম!

রাজনীতি সিলেট

ডেস্ক রিপোর্ট : সম্মেলন হবে। ভোটও হবে। তবে নেতৃত্ব নির্বাচিত হতে হবে পছন্দের। এ অদ্ভুত গণতান্ত্রিক চর্চা বিএনপির।সিলেট মহানগর বিএনপির সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম। ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা সেলিমের পক্ষে তৃণমূলের শক্তিশালী নেতৃত্ব পক্ষ নেয়। কারনটা অনুধাবন করা সহজ! অনুগত নেতৃত্ব না হলে প্রভাব থাকেনা। যদিও বলা হয়, নির্বাচন বা কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব তুলে আনা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিল হয়েছে। সেখানেও ব্যবসায়ী থেকে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হওয়া খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলয় কোনো জায়গায় কৌশলে, কোথাও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে ব্যবহার করে নিজস্ব প্রভাবের কথা বলে পছন্দের নেতা নির্বাচিত করেছেন। পছন্দের নেতৃত্বকে আনতে যা কিছু করা প্রয়োজন, তার সবই করা হচ্ছে। এখানে দল শক্তিশালী হলো কিনা, যায় আসে না। বলয় শক্তিশালী হবে, এটাই বড় কথা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে খন্দকার আব্দুল মোক্তাদিরের দহরম-মহরম রয়েছে।

সম্প্রতি মহানগর বিএনপির কাউন্সিল ঘিরে সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন বদরুজ্জামান সেলিম।ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা বদরুজ্জামান সেলিম প্রথমে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় না থাকলেও পরবর্তীতে তৃণমূল বিএনপির শক্তিশালী ৩/৪টি গ্রুপ তার পক্ষে নেপথ্যে কাজ শুরু করে। বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে ঢাকায় থাকা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির তড়িগড়ি করে সিলেটে আসেন। তিনি বদরুজ্জামান সেলিমকে চাপ সৃষ্টি করে সভাপতি পদে কাউন্সিলে নির্বাচন করা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হন।

সূত্র জানায়, মুক্তাদির বলয়ের ইচ্ছ, অনুগত ব্যক্তি হিসেবে পধন্দের প্রার্থী নাসিম হোসাইন হবেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি।

দলীয় নেতাকর্মীর অভিযোগ, ১/১১’র ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকারের সময় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নাসিম হোসাইনের দহরম মহরম ছিল অপেন সিক্রেট। তিনি বিএনপির কোনো আন্দোলন সংগ্রামেও মামলার ঘানি টানতে হয়নি। এসব অভিযোগের কারণে বদরুজ্জামান সেলিম সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

অন্যদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও বদরুজ্জামান সেলিম প্রার্থী হওয়ায় পাশে থাকার জন্য আশ্বস্থ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি তার বলয়ে মিফতাহ সিদ্দকীকে সভাপতি পদে প্রার্থী করে মাঝ পথ থেকে গাছে তুলে মই কেড়ে নেন।যে কারণে চাপে পড়ে প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন বদরুজ্জামান সেলিম।

২০১৮ সালে বিএনপি নেতা বদরুজ্জামান সেলিম সিলেট সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু বিএনপির একটি শক্তিশালী পক্ষ প্রকাশ্যে বদরুজ্জামান সেলিমের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। দলের হাইকমান্ডও ওই পক্ষে প্রভাবিত ছিল। ফলে দল থেকে বহিস্কারসহ নানামুখী চাপে মেয়র পদে প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়ান বদরুজ্জামান সেলিম। ওই বছরের ১৯ জুলাই বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর বাড়িতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন সেলিম। সেদিন তিনি বিমর্ষচিত্তে মেয়র পদ থেকে প্রার্থীতার প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বলেন ‘কুল্লু খালাস’- ‘আমাকে জবাই দেওয়া হয়েছে।’

এরপর যুক্তরাজ্য চলে যান। রাজনীতির মাঠ থেকে উঠাও হওয়া সেলিম সম্প্রতি দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।বিএনপির সভা, সমাবেশ, মিছিলে অংশ নেন। মহানগর বিএনপির ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনেও তার সরব উপস্থিতি ছিল।

মহানগর বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে তার এই সক্রিয় হয়ে ওঠা। সম্মেলনকে সামনে রেখে গত ২১ জানুয়ারি রাতে নগরীর একটি হোটেলে নগর ২৭টি ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়কালে সভাপতি পদে প্রার্থীতার ঘোষণা করেন তিনি।

দলীয় সূত্রমতে, সভাপতি পদে তৎপর থাকা বদরুজ্জামান সেলিমকে প্রথমে পাত্তা দেওয়া হয়নি। কিন্তু বিএনপির ৩/৪টি বলয়ের নেতাকর্মীরা তার পক্ষ নেওয়াতে রং বদলাতে শুরু করে। ফলে নিজের বলয়ের পছন্দের প্রার্থীকে টেনে তুলতে এবার মুক্তাদিরের কৌশলের বলি বদরুজ্জামান সেলিম। যে কারণে ফের রাজনীতির মাঠ থেকে স্বেচ্ছায় সরে চিরতরে যুক্তরাজ্য যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

বিএনপি নেতা কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার সতীর্থ সহকর্মীরা জানিয়েছেন, চাপের মুখে সভাপতি প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়ানোয় তিনি বিমর্ষ। তার সঙ্গে কথা বলাও যাচ্ছে না। অনেকটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় তিনি ফের যুক্তরাজ্য ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *