ঢাকায় আজ মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিলো বিএনপি। কিন্তু স্থান নিয়ে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল শুক্রবার। ‘চল চল ঢাকা চল’ স্লোগানে সারা দেশের নেতাকর্মীদের রাজধানীতে জড়ো করার চেষ্টা করছে দলটি। কর্মীদের অনুপ্রাণিত করতে লন্ডন থেকে অনলাইন মাধ্যমে যুক্ত হয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও।
সর্বশেষ পরিস্থিতি দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বুধবার অবহিত করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি খালেদা জিয়ার সাথে প্রায় এক ঘন্টা বৈঠক করেন।
এছাড়া বুধবার সকালে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেছেন বিএনপির দুই নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শামা ওবায়েদ।
ওদিকে, আজ ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন। বড় জমায়েতের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে সরকারি দলও। কোনভাবেই মাঠ ছেড়ে দিতে রাজি নয় আওয়ামীলীগ। মাঠ দখলের এই লড়াইয়ে শামিল হয়েছে ইসলামী আন্দোলনও। তবে তাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে আজ না করে অন্যদিন সমাবেশ করার। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোরও মাঠে থাকার কথা রয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ১ আগস্ট ঢাকায় সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
রাজনীতিতে এই যখন অবস্থা তখন কৌতূহল বাড়ছে আজ ঢাকায় কী ঘটতে চলেছে। ঢাকার মহানগর পুলিশ কমিশনার এরইমধ্যে এটা স্পষ্ট করেছেন, সব দল আজ অনুমতি পাচ্ছে না। কিছু দল অনুমতি পাবে। ভবিষ্যতে অফিস খোলার দিনে জনগণকে কষ্ট দিয়ে সমাবেশ না করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। আজ বিএনপি বিএনপি চেয়েছিলো নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গোলাপবাগ মাঠ সোহরাওয়ার্দী থেকে অনেক ছোট।
এদিকে রাতে দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপি ঢাকার নয়াপল্টনে তাদের কার্যালয়ের সামনে অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করতে চায়। প্রয়োজনে তারা সমাবেশ এক দিন পিছিয়ে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে সমাবেশের নতুন তারিখ হতে পারে আগামীকাল শুক্রবার। এ নিয়ে শেষ মুহূর্তে ঘটতে পারে নাটকীয়তা।
নাটকীয়তার মাঝে বুধবার রাত ৯টায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ঘোষণা দেন কাল শুক্রবার দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সমাবেশের স্থান ও দিনক্ষণ নিয়ে বুধবার রাতে বৈঠকে বসেছে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। এরপরই এ সিদ্ধান্ত আসে।
অন্যদিকে, সরকারি দলের সমাবেশটি হওয়ার কথা ছিলো বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে। বিএনপিকে গোলাপবাগে সমাবেশের পরামর্শ দেওয়ার পর পুলিশ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের জন্য দুই বিকল্প জায়গার কথা বলেছে। জায়গা দুটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠ অথবা মহানগর নাট্যমঞ্চ। স্বল্প দূরত্বে বড় সমাবেশে সংঘাতের আশঙ্কাও বিশ্লেষকরা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
তবে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে সমাবেশ থেকে বিএনপি কী ধরনের কর্মসূচি দেয় তা নিয়ে। সবচেয়ে জোরদার আলোচনা হচ্ছে সমাবেশ থেকে দাবি মানতে সরকারকে একটি সময় বেঁধে দেয়া হতে পারে। সময়সীমা কত তা নিয়েও বাড়ছে কৌতুহল। তারপর ঢাকা কেন্দ্রিক লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি আসতে পারে। অন্যদিকে, সরকারি দল সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখছে বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজধানী বা রাজধানী প্রবেশমুখে কোথাও বসে পড়েন কি-না সেদিকে।
অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এটাও ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভবিষ্যতে বিএনপিকে আর নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন নাও করতে দেয়া হতে পারে। তবে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন এবং হেফাজতে ইসলামের মতো সংগঠনগুলো কী ধরনের কর্মসূচি নিয়ে এগোয় সেদিকেও দৃষ্টি রয়েছে সবার।
কী হবে আজ-কাল? সম্ভবত এর চেয়েও বড় প্রশ্ন কী হবে এর পর? সরকার ও বিরোধী দুই শিবিরকেই আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে। কে না জানে রাজনীতিতে পরিস্থিতি পাল্টে যায় মুহূর্তেই। এ নিয়ে যেন কৌতুহলের শেষ নেই রাজনীতি সচেতন মানুষের।