রাত পোহালেই মমতার পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র সমাজের সচিবালয় অভিযান

জাতীয়

অরাজনৈতিক ছাত্রগোষ্ঠী ছাত্র সমাজের ব্যানারে রাত পোহালেই মমতার পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র সমাজের সচিবালয় অভিযান। আরজিকর কাণ্ডের দোষীদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি এবং রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এই অভিযানের ডাক দেয়া হয়েছে।

অভিজান ঘিরে একদিকে যেমন রাজনৈতিক মহলে রয়েছে টানটান উত্তেজনা অন্যদিকে নবান্ন অভিযানে সতর্ক রাজ্য প্রশাসন। পুলিশের শীর্ষ কর্তারা মনে করছেন, মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) নবান্ন অভিযানের নামে শহরজুড়ে তাণ্ডব চলতে পারে। এমন আশঙ্কায় রাজ্যের সচিবালয় ও লাগোয়া এলাকাকে সেদিন কার্যত দুর্গে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য পুলিশ। লক্ষ্য একটাই,  জমায়েত ঘিরে যেন কোনো ভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়। মোতায়েন থাকবে দুই হাজারের বেশি পুলিসকর্মী। সঙ্গে আইজি, ডিআইজির মতো পুলিসের শীর্ষ পদাধিকারীরা।

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায় সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির আগের দিনই করা নিরাপত্তা বলয়ে কার্যত মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা রাজ্যে প্রশাসনিক প্রধান কার্যালয় নবান্নকে। আগামীকাল মূলত যে তিনটে পথ দিয়ে নবান্নের দিকে আন্দোলনকারীরা আসবেন, তাদের আটকাতে হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে নবান্ন থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কোনা এক্সপ্রেস ওয়ের সাতরাগাছি ব্রিজের আগে ও হাওড়া ময়দানে জি টি রোডের ওপর লোহার বিম ঝালাই করে ব্যারীকেট নির্মাণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রাস্তার দুই ধারে ঘিরে দেয়া হচ্ছে টিন দিয়ে। নজরদারি রাখার জন্য লাগানো হচ্ছে গোটা এলাকায় অতিরিক্ত সিসিটিভি।

এ ছাড়া আগামীকাল আন্দোলনকারীদের থামাতে ও অশান্তি এড়াতে তিনটি জায়গাতেই থাকছে ডিসি মর্যাদার একাধিক পুলিশ আধিকারিক, নবান্ন ও লাগোয়া এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবেন  ২১ জন আইজি এবং ডিআইজি পদমর্যাদার অফিসার,  ১৩ জন এসপি বা ডিসি পদমর্যাদার অফিসার,  ১৫ জন এডিসিপি বা এসিপি পদমর্যাদার অফিসার,  ২২ জন এসি বা ডেপুটি এসপি পদমর্যাদার আধিকারিক, এমননি ২৬ ইন্সপেক্টরও। থাকবে কম্ব্যাক্ট ফোর্স, র‍্যাফ, জল কামান সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। সব মিলিয়ে আগামীকাল নবান্ন অভিযানকে ঘিরে চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওড়া সিটি পুলিশের আধিকারীরা।

এমন করা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কলকাতা পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ ভার্মা এদিন সচিবালয় অভিযানকে বেআইনি বলে মন্তব্য করেন। সাধারণত নবান্ন চত্বরে কোনো রকম জমায়েত বা অভিযানের জন্য অনুমতি প্রয়োজন হয়। তবে ২৭ তারিখের সেই অভিযানের জন্য কেউ পুলিশের কাছে কোনো অনুমতিই চায়নি বলে জানান এডিজি মনোজ ভার্মা।

নবান্ন অভিযান উপলক্ষে সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিশ। সেখানে তিনি বলেন, ‘যেহেতু অনুমতি নেয়াই হয়নি, তাই এই কর্মসূচি আইনত বৈধ নয়। কারণ নবান্ন সংরক্ষিত জায়গা। এখানে যে কোনো কর্মসূচি করার জন্য অনুমতি নিতে হয়, কেউ অনুমতি নেয়নি। ফলে এটা বেআইনি। তারা অন্য কোথাও জমায়েত করলে আমরা সাহায্য করব। তবে নবান্নে নয়।’

ওই বৈঠকে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার জানান, পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজের নাম করে ডাক দেয়া হয়েছে এই অভিযানের। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ নামে কোনও সংগঠনই নেই। তিনি বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এই নামে কোনো সংগঠন নেই।

তিনি এদিন আরও বলেন, কিছু লোক গণ্ডগোল করে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। কালকের ভিড়ের মধ্যে কিছু দুষ্কৃতী মিশে গিয়ে ঝামেলা বাঁধানোর চেষ্টা করবে। সাধারণ মানুষের ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ এসব করার চেষ্টা করবে।

এদিকে নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে যখন রাজনীতির পারদ চড়ছে। এর মাঝেই এই অভিযানের পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করল তৃণমূল নেতৃত্ব। এই অভিযানের মাঝে গুলি চালানোর চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ, জয়প্রকাশ মজুমদাররা। এই মিছিলের পেছনে বিজেপির ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও দাবি করা হয়। সোমবার একটি সাংবাদিক বৈঠক করে দুটি গোপন ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয় তৃণমূলের তরফে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *