রানির চিরবিদায় আজ, সাত দশকের বর্ণিল অধ্যায়ের সমাপ্তি

জাতীয়

বিশ্বের ইতিহাসের এক বর্ণময় অধ্যায়ের সমাপ্তি আজ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সিংহাসনে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আসীন ও বিশ্বের প্রবীণতম রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য হবে আজ। ব্রিটেনকে দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে শাসন করে আসা এই রানিকে তাই রাজকীয়ভাবেই জানানো হবে বিদায়।

রানির শেষকৃত্যে যোগ দিতে বিশ্বের বহু দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে উপস্থিত হয়েছেন। উপস্থিত হয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন রাজপরিবারের প্রতিনিধিরাও।

গত ৮ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ব্রিটেনের রাজপরিবারের প্রধান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ৯৬ বছর বয়স্ক রানি বার্ধক্যজনিত শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

রাজপরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানী লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে এলাকার সেইন্ট পল গির্জায় সমাহিত করা হবে রানির মরদেহ। সমাহিত করার আগে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ব্রিটেনের পার্লামেন্ট ভবনের ওয়েস্ট মিনস্টার হলে তার মরদেহ চারদিনের জন্য রাখা হয়েছে।

সোমবার পর্যন্ত সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত থাকবেন রানি এলিজাবেথ। এর মধ্যেই রানির মৃত্যুতে ব্রিটেনে ১০ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন সম্পন্ন হবে এবং প্রয়াত এই রানির শেষকৃত্য শুরু হবে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাখা রয়েছে রানির কফিন। সোমবার সেখান থেকেই বাকিংহ্যাম প্যালেস হয়ে রাজকীয় নিয়মে রানির শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। সকল রাজকীয় প্রথা মেনে সমাধিস্ত করা হবে রানিকে। স্বামী প্রিন্স ফিলিপের পাশের কবরেই শায়িত হবেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

এদিকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষযাত্রায় যেন কোনো ত্রুটি না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে তৎপর যুক্তরাজ্যের প্রশাসন। শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। তাদের মধ্যে আছেন দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রপ্রধান-সহ ৫০০ বিশেষ অতিথি।

এই বিশাল আয়োজন সামাল দেওয়ার জন্য চার হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। সঙ্গে থাকবেন রাজপরিবারের নিজস্ব কর্মীরাও। রানির শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান সরাসরি টেলিভিশনেও সম্প্রচার করা হবে।

শেষকৃত্যে অংশ নিচ্ছেন যেসব বিশ্বনেতা
সারা বিশ্বের প্রায় ৫০০ রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিদেশি নেতা আজ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে যোগ দেবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রোববার লন্ডনে পৌঁছেছেন এবং সেখানে তিনি একটি আনুষ্ঠানিক শোক বইতে স্বাক্ষর করেছেন।

এছাড়া ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ছাড়াও জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমায়ার, ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও ম্যাটারেলান্ড এবং আইরিশ তাওইসাচ মাইকেল মার্টিন রানির শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকবেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নসহ কমনওয়েলথ দেশগুলোর কিছু নেতা লন্ডনে পৌঁছেছেন আগেই। শেষকৃত্যে প্রত্যাশিত অন্যান্য কমনওয়েলথ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।

ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু। চীন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং কিশানকে রানির শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে।

এদিকে যুক্তরাজ্যে সোমবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শেষকৃত্যে বিশ্ব নেতাদের আগমন ঘিরে স্মরণকালের সবচেয়ে কঠোর নিরাপত্তার আয়োজন করেছে লন্ডন পুলিশ।

ব্রিটেনের রাজসিংহাসনে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে আসীন থাকা রানি এলিজাবেথ তার নিজ দেশের পাশপাশি বিশ্ব ইতাহাসেরও একজন সাক্ষী। রানির জীবদ্দশাতেই তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র, টিভি ও ওয়েব সিরিজ।
ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে যতসংখ্যক মানুষ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে এই শেষকৃত্য দেখবে তা ১৯৯৭ সালে প্রয়াত রাজবধূ ডায়ানার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, ২০১২ সালে লন্ডনের অলিম্পিক এবং রাজপরিবারের সদস্যদের বিয়েসহ সাম্প্রতিক সময়ের সব অনুষ্ঠানকে ছাড়িয়ে যাবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *