লাল রঙে সেজেছে সুনামগঞ্জের ‘শিমুল বাগান’

সুনামগঞ্জ
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রিয়জনকে নিয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্তের প্রথম দিন কাটাতে পারেন সুনামগঞ্জের শিমুল বাগানে। বসন্ত আসার আগেই ফাগুনের ‘আগুন লেগেছে’ সেখানে। প্রকৃতি আর কল্পনার অপরূপ মেলবন্ধন বলা যায়।
বিশাল শিমুল বাগানের একপ্রান্তে দাঁড়ালে অন্যপ্রান্ত দেখা যায় না। বাগানের ভেতর যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শিমুল গাছের সারি। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এত বিশাল শিমুল বাগান দেশের আর কোথাও নেই। গাছের নিচে মাটিতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ফুল। গাছ থেকে ফুল মাটিতে পড়ছে, থপ করে শব্দ হচ্ছে। ধুলোমাখা মাটি যেন ফুলে ফুলে সাজানো লালগালিচা! রূপকথার কোনো রাজ্য মনে হতে পারে একঝটকায়। বসন্ত আসার আগেই অজস্র ফুটন্ত শিমুল ফুল যেন বলে দিচ্ছে, বসন্ত সন্নিকটে!
শত বিঘার বেশি জায়গাজুড়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে জাদুকাটা নদীর তীরে এ শিমুল ফুলের বাগান। পাশাপাশি আছে লেবু গাছ। বসন্তের দুপুরে পাপড়ি মেলে থাকা শিমুলের রক্তিম আভা মন রাঙায় তো বটেই, ঘুম ভাঙায় সৌখিন হৃদয়ের। এ যেন কল্পনার রঙে সাজানো এক শিমুলের প্রান্তর। ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদুকাটা নদী আর এপাড়ে শিমুল বন। সব মিলেমিশে গড়ে তুলেছে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাউয়ের গড়। পনেরো বছর আগে ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে শুধুই সৌখিনতার বসে এই শিমুল বাগান গড়ে তোলেন, জয়নাল আবেদীন নামে স্থানীয় এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। বসন্ত এলে যখন একসাঙ্গে দু’হাজার গাছে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে তখন পর্যটকদের নজর না কেড়ে উপায় কি !
সুনামগঞ্জের বাদাঘাটে অবস্থিত এ শিমুল বাগানে পদদুলি রাখলাম বসন্ত আসার আগেই। গিয়ে মনে হলো, এই বুঝি কেউ লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে! শিমুল বাগানে ফুল আসার সময়ে পাশেই বহমান যাদু কাটা নদীতে পানির পরিমান সামান্য থাকে! তখন মরুভূমি সাদৃশ্য যাদুকাটা নদীর পাশে অবস্থিত রঙিন ক্যানভাসে প্রস্ফুটিত শিমুল বাগানটিকে মনে হয় এক চিলতে রক্তিম স্বপ্নভূমি! বাগানে আসার পর আপনি পৃথিবীর শত কাঠিন্যের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে শিমুল ফুলের মোহনীয় স্নিগ্ধতায় আপ্লুত হবেন!
৩০ একরেরও বেশি আয়তনের বাগানটির বৈশিষ্ট্য হলো- এটি যেমন বর্গাকার তেমনি গাছগুলোকেও লাগানো হয়েছে বর্গাকার ভাবে। এ স্কয়ার আকৃতির বাগানটির বিশেষত্ব হলো আপনি ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পেছনে এমন কি কোনাকোনি, যেভাবেই তাকাবেন সমান্তরাল গাছের সারি দেখতে পাবেন। বাগানে শিমুল গাছের মাঝে ঝোঁপ আকৃতির লেবুর গাছ ও রয়েছে! বাগানটি থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমানের তুলা পাওয়া যায়
কেবল শিমুল বাগানই না, তাহিরপুর উপজেলাতেই অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর, আর শিমুল বাগানের অনেকটা কাছেই শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রী লেক)। মাঝখানে পানি আর উভয় পাশের উঁচু-নিচু ছোট ছোট টিলাগুলো পর্যটকদের মাঝে অন্যরকম ভালো লাগা তৈরি করে। ফেরার পথে চাইলে বারেক টিলার চূড়ায় দাঁড়িয়ে খুব কাছে থেকে দেখা যায় ভারতের মেঘালয় অংশ। সব মিলে একের ভেতরই যেন সব। তবে শিমুল বাগানের লাল ফুলের দৃশ্য দেখার জন্য সময় বেছে নিতে হবে কেবল বসন্তের প্রথম সপ্তাহ।
যেভাবে যাবেন : সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে নতুন ব্রিজ হয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কারেন্টের বাজার গিয়ে তাহিরপুর উপজেলায় প্রবেশ করলে বাদাঘাট বাজার হয়েই যেতে হয় শিমুল বাগান। বাদাঘাট বাজার থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা যাদুকাটা নদীর পাড়ে অবস্থিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ শিমুল বাগানে গিয়ে দেখা যাবে অদ্ভুত এক দৃশ্য। এ ক্ষেত্রে বাহন হিসেবে মোটরসাইকেলই সবচেয়ে সুবিধার। কিন্তু মাইক্রোবাস নিয়ে যেতে চাইলে কারেন্টের বাজার গিয়ে ডানে প্রবেশ না করে সোজা চলে যেতে হবে তাহিরপুর উপজেলা সদরে। সেখান থেকেই ভাঙাচুরা সড়কে আসতে হবে বাদাঘাট বাজার। তবে রাত্রি যাপনে ভালো মানের কোনো আবাসিক হোটেল না থাকলেও বাদাঘাট বাজারে থাকার মত একটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। আছে কোনোরকম কয়েকটি খাবার রেস্টুরেন্ট। কিন্তু পথে যেহেতু কোনো পথনির্দেশক নেই সে ক্ষেত্রে মোড়ে মোড়ে প্রবেশের আগে পথচারীদের পরামর্শ নিয়েই চলা উচিত।
শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *