লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত সিলেট

সিলেট

ডেস্ক রিপোর্ট : ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেটের মানুষ এবার লোডশেডিংয়ের যাতাকলে পড়েছেন। শহর থেকে গ্রাম, সবখানে ভয়াবহ লোডশেডিং। তবে বেশি ভোগান্তিতে গ্রামীণ জনপদের মানুষ। গ্রামে রাতদিন সমানতালে চলে লোডশেডিং। নগরীর বিভিন্ন এলাকাগুলো পিডিবি’র অধীনে থাকায় অনেকটা রুটিন করে লোডশেডিং করা হয়। তবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনে থাকা গ্রামীণ জনপদের মানুষকে কঠিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

গ্রামে ২৪ ঘণ্টার বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎহীন থাকে, এমন অভিযোগ বাসিন্দাদের। রোববার থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে বলেও জানিয়েছেন গ্রামীণ জনপদের লোকজন।

সূত্র মতে, গ্রামীণ জনপদে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সবখানে লাইন টেনে দিয়েছে। কিন্তু গ্রাহকের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ দিতে পারছে না। এ কারণে লোডশেডিং লেগেই থাকে গ্রামাঞ্চলে। বন্যায় বিপর্যস্ত জনপদে মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ লোডশেডিং।

এমনিতে বন্যার কারণে পক্ষকাল সিলেটের অধিকাংশ গ্রামই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল। শুধু বিদ্যুৎ নয় সিলেটের আকাশে সূর্যের দেখাও মিলেনি ২০ দিন। বৃষ্টি কমলে গত ২ জুলাই থেকে প্রখর রোদে পুড়েছে প্রকৃতি, তাপমাত্রাও বেড়েছে। ভ্যাপসা গরমে দুর্বিষহ জনজীবন। এরমধ্যে এসএসসি পরিক্ষারও প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ অবস্থায় মানুষকে বিপাকে ফেলেছে লোডশেডিং।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়া ইউনিয়নের গ্রাহক আব্দুস সালাম, সাজুল ইসলামের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, বিদ্যুতের সীমাহীন দুর্ভোগের কবলে রয়েছেন তারা। দিনে রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়। অভিযোগ দিলে যেনো আগুনে ঘি ঢালা হয়, এদিন আর বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত থাকেন পুরো এলাকার মানুষ।

এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা। এ অঞ্চলে বাতাস দিলেই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে পুরো অঞ্চল। কোনো এলাকায় ৫/৭ দিনও অন্ধকারে থাকতে হয়। বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের মর্জির ওপর চলে সরবরাহ, এমন অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। কেবল বন ও পরিবেশ মন্ত্রী এলাকায় অবস্থান করলে সরবরাহ ঠিক থাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার) থেকে চাহিদার তুলনায় গ্রীড কন্ট্রোল রুম থেকে সরবরাহ কম দেওয়া লোড শেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। আর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও শিল্প কারখানাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রেখে গ্রাহক পর্যায়ে সঞ্চলন কেন্দ্রগুলোতে কম সরবরাহ দেওয়াতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

এ বিষয় সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর পরিচালক আব্দুল আহাদ বলেন, গত ২/৩ দিন থেকে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তবে খুব শিগগিরই গ্রাহক পর্যায়ে এই সমস্যা হবে আশাবাদি তিনি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিতরণ বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদের বলেন, এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। তাই ঘাটতি থাকার কারণে ৩৩ হাজার কেভি লাইনও বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জে ৫ লাখ গ্রাহকের চাহিদা পিক আওয়ারে ৪৫০ এবং অফপিক আওয়ারে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সে তুলনায় সরবরাহ কম রয়েছে।

তিনি বলেন, লোডশেডিংয়ের এ সমস্যা কেবল সিলেটে নয়, দেশের সবখানে। জ্বালানি সংকটের কারণে তেলের যে পাওয়ার স্টেশনগেুলো পুরোপুরি বন্ধ। সিলেটের কুমারগাও এইচ.এফ ফুয়েলে চলা ৫০ মেগাওয়াট আগে থেকে বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে সিলেটে প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রিডে যায়। সেখান থেকে চাহিদার বিপরীতে বণ্টন করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট গ্যাস ভিত্তিক। আর ২০ হাজার মেগাওয়াট হলেও জেনারেশনে থাকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্র ৪৮ মেঘাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সোমবার ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে জাতীয় গ্রিড নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এদিন সকালে সরবরাহ ছিল ১৫ মেঘাওয়াট।

সঞ্চালন কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা জানান, চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ সরবরাহ কম থাকলেও আনব্যালেন্সড হয়ে পড়ে। তখন বিদ্যুৎ আপ-ডাউন করে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে সরবরাহ ঠিক রাখতে গিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে লোডশেডিং করতে হয়।

জানা গেছে, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ৯০ মেগাওয়াটের দু’টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। এর একটি উৎপাদনে আছে। অন্যটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া কুশিয়ারা ম্যাক্স পাওয়ার প্লান্ট ১৭০ মেগাওয়াট, বারাকাতউল্লাহ ডায়নামিক পাওয়ার প্লান্ট ৫১ মেগাওয়াট, হোসাফ এনাটিক প্রিমা ২০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করে।

এর বাইরে সিলেটের কুমারগাও পিডিবি’র ১৫০ ও ৫০ এবং হোসাফের ৫০ মেঘাওয়াট এবং শাহজিবাজারে ৪০০ মেগাওয়াট, বিবিয়ানায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রিডে যায়। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধিকাংশ গ্যাস ও এফ ফুয়েল ভিত্তিক। এই জ্বালানী বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আর এখাতে সংকট দেখা দেওয়ায় জাতীয়ভাবে লোড শেডিংয়ের মাত্রা বাড়ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *