শতাব্দির ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ছাতকের নাথপাড়া গ্রামের মানুষ রয়েছে সুবিধা বঞ্চিত

সুনামগঞ্জ

সেলিম মাহবুব, ছাতকঃ

হিন্দু অধ্যুষিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম কপলা নাথপাড়া। গ্রামের প্রায় সবাই নাথ সম্প্রদায়ের মানুষ। অবহেলিত এ গ্রামে নাথ সম্প্রদায়ের প্রায় ১২০টি পরিবারের বসবাস। সিংহভাগ মানুষ কৃষি কাজের সাথে জড়িত থাকলেও অবসরে বাঁশ-বেত দিয়ে নানান আকর্ষনীয় দ্রব্য তৈরী ও বাজারজাত করে থাকে তারা। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে সরকারী-বেসরকারী অনেক সুযোগ-সুবিধাই এ গ্রামের মানুষের ভাগ্যে ঝুটে না। শ্রম-ঘামে জীবনগাঁথা নাথপাড়া গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলো বংশ পরম্পরায় সুখে-দুঃখে এ গ্রামেই বসবাস করে আসছে যুগ-যুগ ধরে। হিন্দু অধ্যুষিত এ গ্রামটি ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া শতাব্দির ভয়াবহ বন্যায় তছনছ করে দিয়েছে তাদের সাজানো-ঘুছানো সংসার। যদিও উপজেলার কোন গ্রামই বন্যার ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পায়নি, তবুও নাথপড়ার মানুষের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান অন্যরকম। গ্রামের অধিকাংশ ঘরবাড়ি কাঁচা হওয়ায় বন্যার পানি সরে যাওয়ার পরেও এ গ্রামের মানুষের দুর্দশা বহন করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের ছাতকের বড়কাপন পয়েন্ট থেকে ডানের রাস্তা ধরে প্রায় দু’কিলোমিটার এগুলেই কপলা গ্রাম। গ্রামের পাকা রাস্তা থেকে ডান দিকের কাঁচা রাস্তায় অনেকটা ভিতরে নাথপাড়া গ্রাম। গ্রামের ঘর-বাড়ি গুলো দেখলেই বুঝা যায় এখানের শতকরা ৭০ভাগ মানুষের বসবাস দরিদ্র সীমার নীচে। গ্রামের বেশীর ভাগই টিন সেডের কাঁচা ঘর। এ গ্রামের মানুষের সাথে আলাপচারিতায় ফুটে উঠে তাদের সুখ-দুখে জীবনগাঁথা কাহিনী। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া শতাব্দির ভয়াবহ বন্যায় গোটা গ্রামের মানুষই ছিল পানিবন্দি। সহায়-সম্বল যাই ছিল সবই বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। বন্যার সময় কোন আশ্রয় কেন্দ্রে না গিয়ে নাথপাড়া গ্রামের সকলেই অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে নিজ ঘরেই অনাহারে-অর্ধাহারে কাটিয়েছে আপদকালীন বেশ কয়েকদিন। আবার কেউ-কেউ নিজ ঘর থাকা বিপদজনক মনে করে আশ্রয় নিয়েছেন গ্রামের অন্যের ঘরে। এদিকে সুনামগঞ্জ জেলাসহ সিলেট অঞ্চলের ভয়াবহ বন্যার খবরে সরকারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সহায়তাকারী সংস্থা ত্রান নিয়ে বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিতরণের খবর তারা শুনেছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়-শত-শত ত্রান সহায়তাকারী সংস্থা বিভিন্ন ধরনের ত্রান কার্যক্রম চালালেও নাথপাড়ার পানিবন্দি মানুষ থেকে যায় চোখের আড়ালে। তারা বঞ্চিত হয় সব ধরনের সরকারী-বেসরকারী সাহায্য-সহায়তা থেকে। প্রায় ৩ সপ্তাহ পর পানিবন্দি থেকে মুক্ত হলেও পরবর্তি দিনগুলো এক দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যদিয়ে পার করতে হয়েছে নাথপাড়ার মানুষের। ভিটে-মাটি কর্দমাক্ত ও বানের স্রোতে ভেঙ্গে যাওয়া জরাজীর্ণ ঘরে মানবেতর জীবনযাত্রা শুরু করে নাথপাড়ার অধিকাংশ পরিবার। এ অবস্থা থেকে এখনো পরিত্রান পায়নি তারা। তবে তাদের হারনামানা জীবনযুদ্ধ থেমে থাকেনি ক্ষনিকের জন্যও। ছুটন নাথ, নিকু নাথ, ব্রজেন্দ্র নাথ সহ গ্রামের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নাথপাড়া গ্রামের মানুষ সব সময়ই সুবিধা বঞ্চিত থাকে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ গবীব কিন্তু পরিশ্রমি। সরকারী-বেসরকারী সাহায্য পাওয়া অধিকারও তাদের আছে। তারা সরকার ও সরকার সংশ্লিষ্ট সকলের কৃপাদৃষ্টি কামনা করেন। গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য গনেশ নাথ জানান, শুনেছি বন্যার্থদের মাঝে বিভিন্ন সংস্থা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে। কিন্তু নাথপাড়ার কোন পরিবারই ত্রাণের দেখা পায়নি। গ্রাম পুলিশ দিপালী নাথ জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্যের দেয়া সরকারী চাল ছাড়া নাথপাড়া মানুষের ভাগ্যে আর কিছু ঝুটেনি। তবে সহায়তা না পেলেও বন্যার সময় গ্রামে একে-অন্যের সাহায্য নিয়ে আপদকালীন সময় পার করেছে নাথপাড়ার মানুষ। ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল জানান, বন্যার পানি উঠেনি এমন কোন গ্রাম তার ওয়ার্ডে নেই। ওয়ার্ডের ধনি-গরীব সকলেই বন্যায় কম-বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বন্যার সময় অধিকাংশ সরকারী-বেসরকারী ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম ছিল আশ্রয় কেন্দ্রমূখী। ত্রাণ পরিবহনের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। আর নৌকার ব্যবস্থা হলেও এর ভাড়া ছিল অস্বাভাবিক। নাথপাড়া গ্রামটি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় ত্রাণ সহায়তাকারী অনেক সংস্থাই গ্রাম বিমূখ হয়েছে। তিনি দু’ দফায় ১০কেজি ও ৫কেজি করে সরকারী চাল নাথপাড়া গ্রামের অন্তত ৩০টি পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছেন। এসব চাল তিনি নিজে বহন করে বাড়ি-বাড়ি পৌছে দিয়েছেন। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী বন্যায় ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ নাথপাড়া সহ তার ওয়ার্ডের ৮০ জনের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছেন তিনি। সরজমিন তালিকা প্রস্তুতের সময় সরকারের পক্ষে একজন ট্যাগ অফিসারও সাথে ছিলেন। কিন্তু যাচাই-বাচাই করে এ ওয়ার্ডে ১০ হাজার টাকার তালিকায় মাত্র ৪জন এবং ৫ হাজার টাকার তালিকায় মাত্র ২ জনকে রাখা হয়েছে। এখানে স্থানীয় মেম্বারের করার কিছুই ছিলো না। এ বিষয়টিকে পুঁজি করে স্থানীয় একটি কু-চক্রি মহল নাথপাড়ার মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় তার ইউনিয়নের মানুষ অফুরন্ত ক্ষতির শিকার হয়েছে। বন্যার সময় বেসরকারীভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে যার-যার মতে। সরকারীভাবে পরিষদের কাছে যেসব সহায়তা এসেছে ক্ষতিগ্রস্থের ভিত্তিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে মেম্বারদের মাধ্যমে সমবন্টন করা হয়েছে। নিন্দুকদের সমালোচনা তার পরিষদকে কলংকিত করতে পারবে না। ##

শেয়ার করুন

2 thoughts on “শতাব্দির ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ছাতকের নাথপাড়া গ্রামের মানুষ রয়েছে সুবিধা বঞ্চিত

  1. Elevate Learning Adventures with The Story Shack!

    A library of 200+ high-quality books tailored to the school curriculum.
    StoryShack’s Build a Book bundle features word searches, quizzes, creative coloring pages, high-quality images, and top SEO keywords.
    StoryShack’s StoryCraft Pro bundle includes the “Melody Minds Library” with 350+ music tracks and “AnimateMasters Pro,” offering 30+ categories of animations.
    And as if that’s not enough, here are the MEGA BONUSES:

    ✔ 100+ Mega Mazes Pack
    ✔ 100+ Sudoku Elements Pack
    ✔ 100+ Comic Book Template Pack
    ✔ 100+ Handwriting Practice Template Pack
    ✔ 100+ Kids Story Book Templates
    ✔ Canva Book Templates
    ✔ Additional beautiful content like journal prompts
    ✔ INCLUDED: The Ultimate Workbook

    Click https://ext-opp.com/StoryShack to explore The Story Shack e-Learning Collection and seize the opportunity for multiplied income!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *