শাইখ কামালুদ্দিন জাফরি ও কাবলাল জুম‌আ প্রসঙ্গে :মাওলানা আসলাম হোসাইন

মুক্তমত

 

কাবলাল জুম‌আ ব্যাপারে শাইখ কামালুদ্দিন জাফরি হুজুরের একটা বক্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠছে। যদিও বক্তব্যটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বেশ কিছু দিন আগের। কোনো এক কুচক্রী মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নতুন করে এটা মাঠে ছেড়েছে। সে সফল‌ও হয়েছে।

#এটা_সত্য_যে, কাবলাল জুম‌আ চার রাকাতের ব্যাপারে মারফু কোনো সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়নি। এইজন্য এটা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিনা তা নিয়ে পূর্ব থেকেই মতবিরোধ ছিল। (ফাতহুল বারী লিইবনে রজব, 8/333)।

সাহাবায়ে কেরামসহ অনেক সালাফ কাবলাল জুম‌আ চার রাকাত পড়তেন। হযরত ইবনে মাসুউদ (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে,
كَانَ يُصَلِّي قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا
“তিনি জুম‌আর পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত সুন্নত আদায় করতেন। ইমাম নববী ও ইবনে মোবারক এই মত গ্রহণ করেছেন। (সুনানে তিরমিযি, হা. 523)।

ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আবু ইউসুফ‌ও এই মতের পক্ষপাতি। তবে কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী তাঁর তাফসির গ্রন্থে সূরা জুমআর তাফসিরে বলেন,
لا دليل على أربع قبل الجمعة إلا عموم أنه كان صلى الله عليه وسلم يصلي إذا زالت الشمس أربعا.
“জুমার আগের চার রাকাত পড়ার কোনো দলিল নাই। দলিল কেবল এতটুকুই যে, রাসূল সাঃ সাধারণত সূর্য ডলার পরে (জোহরের ফরজের পূর্বে) চার রাকাত নামাজ পড়তেন।” ইমাম আবু হানিফা এখান থেকেই কাবলাল জুম‌আ চার রাকাত কিয়াস করেছেন।

ইব্রাহিম নাখাঈ তাঁর পূর্ববর্তি তাবিয়িদের কথা উল্লেখ করে বলেন,
كانوا يحبون أن يصلوا قبل الجمعة أربعا
“তারা জুমার পূর্বে চার রাকাত সুন্নত পড়াকে পছন্দ করতেন”।
(ফাতহুল বারী লিইবনে রজব, 8/329)

আবার ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মতে, কাবলাল জুম‌আর নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নেই। ইমাম মিম্বার আরোহন করা পূর্ব পর্যন্ত তার সামর্থ্য অনুযায়ী যত রাকাত সম্ভব পড়বে। একাধিক হাদিসে এটাই বলা হয়েছে। এই ব্যাপারে তিনি দীর্ঘ আলোচনা করে বলেন,
ولهذا كان جماهير الأئمة متفقين على أنه ليس قبل الجمعة سنة مؤقتة بوقت، مقدرة بعدد لأن ذلك إنما يثبت بقول النبي صلى الله عليه وسلم أو فعله، وهو لم يسن في ذلك شيئا لا بقوله ولا فعله. وهذا مذهب مالك ومذهب الشافعي وأكثر أصحابه وهو المشهور في مذهب أحمد.
“এইজন্য অধিকাংশ ইমাম একমত যে, জুম্মার পূর্বে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যক সুন্নাত নেই। কেননা এটা শুধু রাসুলুল্লাহ সা. এর কথা অথবা কাজ দ্বারাই প্রমাণিত হতে পারে। অথচ তিনি তাঁর কথা কিংবা কাজ দ্বারা এই ব্যাপারে কোনো সুন্নত সালাত চালু করেননি। আর এটি ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ ও তার অনেক সহচরের মাযহাব। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের মাযহাবেও এই মত‌ই প্রসিদ্ধ”
(মাজমুউল ফতোয়া, 24/189)

ইবনুল কাইয়ুম, সাইয়েদ সাবিক, সাইয়েদ সালিম, শাইখ বিন বায, শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ সহ একদল আলিম ইবনে তাইমিয়ার অনুরূপ মত প্রকাশ করেছেন।

#সারসংক্ষেপ: সাইয়েদ কামালুদ্দিন জাফরি মূলত জুমার পূর্বের সালাতকে অস্বীকার করেননি। তিনি কেবল ফিক্সড করে চার রাকাত পড়াকে অস্বীকার করেছেন। কেননা, রাসূল সাঃ তা পড়েননি, কোনো সাহাবীকে পড়তে বলেন‌ও নি। ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, “তখন এক আজান হতো এবং আজান শেষ হলেই রাসূল সাঃ খুতবা দেওয়া শুরু করতেন। তাহলে চার রাকাত পড়ার সময়‌ই বা কোথায়।”
(মাজমুউল ফতোয়া)

উপরোল্লেখিত আলোচনা থেকে আমরা এইভাবে উভয়পক্ষের মধ্যে সমন্বয় করতে পারি যে, নির্দিষ্ট চার রাকাতের কথা হাদিসে না থাকলেও সামর্থ্য অনুযায়ী জুম্মার পূর্বে সালাত পড়তে বলা হয়েছে। তাই কেউ চার রাকাত পড়লে এটা হাদিসের অনুকূলেই আমল হচ্ছে। তা ছাড়া উপরে দেখেছি সাহাবায়ে কেরাম সহ অনেক সালাফ কাবলাল জুম‌আ চার রাকাত পড়েছেন। অত‌এব, এটা মোটেই হাদিসের বরখেলাপ কিংবা বেদ‌আত নয়। আবার কেউ যদি জুমার পূর্বে নূন্যতম দুই রাকাত সুন্নত আদায় করে নেয়, তাহলে তার জন্য তা যথেষ্ট হবে। এর পক্ষে হাদিসের সুস্পষ্ট ভাষ্য রয়েছে।

তবে সমাজের সুপ্রতিষ্ঠিত একটা এবাদত, যা শরিয়ত সম্মত ও সালাফদের কাজ দ্বারা স্বীকৃত; এমন আমল কে অস্বীকার করে বিরোধিতা করা উচিত নয়। এতে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। ফিতনার দ্বার উন্মুক্ত হয়। সম্মানিত আলেমদের কাছ থেকে আমরা আরো সুচিন্তিত ও প্রজ্ঞাময় বক্তব্য আশা করি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *