শাবান থেকে যেভাবে রমজানের প্রস্তুতি

ইসলাম ও জীবন

শাবান ও রমজান উভয়টিই গুরুত্ববহ ও ফজিলতপূর্ণ মাস। রমজানের গুরুত্ব তো প্রায় সবাই বোঝেন। কিন্তু শাবান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা উদাসীন। অথচ রমজানপূর্ব মাস হিসেবে এটি রমজানের চূড়ান্ত প্রস্তুতির শেষ মাস। তাই শাবান মাসকেও নবীজি (সা.) গুরুত্ব দিতেন। গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতেন এবং অন্যান্য আমল করতেন।

১. রমজান লাভের জন্য দোয়া করা

সাহাবায়ে কেরাম দুই মাস আগে থেকে এবং পুণ্যবান পূর্বসূরিদের অনেকে ছয় মাস আগে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন যেন আল্লাহ তাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছান। আমরা দোয়া করতে পারি : আল্লাহুম্মা বাল্লিগনা রামাদান। ‘হে আল্লাহ, আমাদের রমজানে পৌঁছে দিন।’

একজন মুসলিম তার রবের কাছে বিনয়াবনতভাবে দোয়া করবে যেন আল্লাহ তাআলা তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রেখে, উত্তম দীনদারির সঙ্গে রমজান পর্যন্ত হায়াত দেন। সে আরো দোয়া করবে আল্লাহ যেন তাকে নেক আমলের ক্ষেত্রে সাহায্য করেন। আরো দোয়া করবে আল্লাহ যেন তার আমলগুলো কবুল করে নেন।

২. কোনো ওয়াজিব রোজা কাজা থাকলে আদায় করা

রমজান প্রবেশের আগে এটিই বছরের শেষ মাস যাতে রমজানের ফরজ রোজা বা কোনো ওয়াজিব রোজা কাজা থাকলে আদায় করে নেওয়া। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার উপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকলে শাবান মাসে ছাড়া আমি তা আদায় করতে পারতাম না।’ [বুখারি : ১৮৪৯; মুসলিম : ১১৪৬] হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, ‘আয়েশা (রা.) এর শাবান মাসে কাজা রোজা আদায় পালনে সচেষ্ট হওয়া থেকে বিধান গ্রহণ করা যায় যে, রমজানের কাজা রোজা পরবর্তী রমজান আসার আগেই আদায় করে নিতে হবে।’ [ফাতহুল বারি :৪/১৯১]

৩. রমজানের প্রস্তুতিস্বরূপ বেশি বেশি রোজা রাখা

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এমনভাবে সিয়াম পালন করতেন যে, আমরা বলতাম– তিনি আর সিয়াম ভঙ্গ করবেন না এবং এমনভাবে সিয়াম ভঙ্গ করতেন যে আমরা বলতাম– তিনি আর সিয়াম পালন করবেন না। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসের গোটা অংশ রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান ছাড়া অন্য কোনো মাসে অধিক সিয়াম পালন করতে দেখিনি।’ [বুখারি : ১৮৬৮; মুসলিম : ১১৫৬]

উসামাহ ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম- ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) আমি আপনাকে শাবান মাসের মতো অন্য কোনো মাসে এত রোজা পালন করতে দেখিনি। তখন তিনি বললেন, ‘এটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস। এ মাসের ব্যাপারে মানুষ গাফেল। অথচ এ মাসে বান্দাদের আমল রাব্বুল আলামিনের কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার আমল উত্তোলন করা হোক।’ [নাসাই : ২৩৫৭]

এ হাদিসে শাবান মাসে রোজা পালনের তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে। তা হলো- এ মাসে বান্দার আমলগুলো উত্তোলন করা হয়। জনৈক আলেম আরো একটি হেকমত উল্লেখ করেছেন সেটা হচ্ছে- শাবান মাসের রোজা যেন ফরজ নামাজের আগে সুন্নত নামাজের তুল্য। এই সুন্নতের মাধ্যমে ফরজ পালনের জন্য আত্মাকে প্রস্তুত করা হয় এবং ফরজ পালনের জন্য প্রেরণা তৈরি করা হয়। একই হেকমত রমজানের পূর্বে শাবানের রোজার ক্ষেত্রেও বলা যেতে পারে।

৪. বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা

সালামাহ ইবনে কুহাইল বলেছেন, ‘শাবান মাসকে তেলাওয়াতকারীদের মাস বলা হতো।’ শাবান মাস শুরু হলে আমর ইবনে কায়েস তার দোকান বন্ধ রাখতেন এবং কোরআন তিলাওয়াতের জন্য অবসর নিতেন। আবু বকর আল-বালখি (রহ.) বলতেন, ‘রজব মাস হলো বীজ বপনের মাস। শাবান মাস হলো ক্ষেতে সেচ দেওয়ার মাস এবং রমজান মাস হলো ফসল তোলার মাস।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘রজব মাসের উদাহরণ হলো বাতাসের মতো, শাবান মাসের উদাহরণ হলো মেঘের মতো, রমজান মাসের উদাহরণ হলো বৃষ্টির মতো। তাই যে ব্যক্তি রজব মাসে বীজ বপন করল না, শাবান মাসে সেচ দিল না, সে কীভাবে রমজান মাসে ফসল তুলতে চাইতে পারে?’

৫. রোজার মাসয়ালা-মাসায়েল জেনে নেওয়া এবং রমজানের ফজিলত সম্পর্কে অবগত হওয়া।

৬. যে কাজগুলো রমজান মাসে একজন মুসলমানের ইবাদত-বন্দেগিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে সেগুলো দ্রুত সমাপ্ত করার চেষ্টা করা।

৭. স্ত্রী-পুত্রসহ পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে বসে রমজানের মাসয়ালা-মাসায়েল আলোচনা করা এবং ছোটদেরও রোজা পালনে উদ্বুদ্ধ করা।

৮. যে বইগুলো ঘরে পড়া যায় এমন কিছু বই সংগ্রহ করা অথবা মসজিদের ইমামকে হাদিয়া দেওয়া যেন তিনি মানুষকে পড়ে শোনাতে পারেন।

রজব তো চলে গেল। আমরা তো একে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। রমজানের আগে সবশেষ শাবান মাসটিকে আসুন আমরা কাজে লাগাই। নবীজির অনুকরণে এ মাসে অধিক পরিমাণে রোজা ও তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত হই মাহে রমজানের জন্য। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *