শাবিতে ভর্তি ফি এক লাফে দ্বিগুণ!

সিলেট

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরের ব্যবধানে স্নাতক প্রথম সেমিস্টারে ভর্তি ফি পনেরো হাজার করা হয়েছে। গত বছর এই ফি ছিল ৮ হাজার ১০০ টাকা। এর ফলে ২০২১-২২ সেশনে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তি ফি ৫ হাজার এবং চূড়ান্ত ভর্তির সময় ৫ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ভর্তি ফি ১০ হাজার ছিল। বাড়তি ফি’য়ের কারণে আর্থিক সংকটে চূড়ান্ত ভর্তিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানান ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। 

এদিকে শাবিতে গুচ্ছের অষ্টম ধাপের ভর্তি কার্যক্রম শেষে আরও ১০৮ আসন খাালি রয়েছে। কিন্তু এর আগেই চূড়ান্ত ভর্তির তারিখ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

শাবি ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার সিলেটভিউ-কেজানান, গুচ্ছের ২০২১-২২ সেশনে ¯œাতকে প্রথম সেমিস্টারে প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তিতে ৫হাজার এবং চূড়ান্ত ভর্তিতে ১০ হাজারসহ সর্বমোট ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২০২০-২১ সেশনে শাবিতে ভর্তি ফি ছিল ৮০৬০ টাকা। কিন্তু এ বছরের তা প্রায় দ্বিগুনের কাছে হয়েছে। এছাড়া ২০১৯-২০ সেশনে ভর্তি ফি ছিল ৮ হাজার টাকা; ২০১৮-১৯ সেশনে ছিল  ৭ হজার ৫০০ টাকা এবং ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীদের ফি ছিল ৬ হাজার ৮৫০ টাকা ।

এদিকে, গুচ্ছের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে আসন খালি রেখেই চূড়ান্ত ভর্তির তারিখ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শনিবার দুপুরে শাবির ভর্তি কমিটির টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মো. মাসুম বলেন, ‘শাবিতে মোট আসন রয়েছে ১ হাজার ৫৬৬ টি। অষ্টম ধাপে ভর্তি  কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ১০২টি, ‘বি’ ইউনিটে ২টি ও দসি’ ইউনিটে ৪টি আসন সহ মোট ১০৮টি আসন খালি রয়েছে।’’

২০২০-২১ সেশনে শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে হঠাৎ করে এক লাফে প্রায় দ্বিগুন করায় হতাশায় এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভর্তিচ্ছুরা।

‘আমাদের প্রতি জুলুম করা হচ্ছে’ :
২০২১-২২ সেশনে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী অলক সূত্রধর বলেন, গুচ্ছ কমিটি আগে প্রাথমিক ভর্তির সময় ৫ হাজার টাকা নিয়েছে এই বলে যে, এই টাকা চূড়ান্ত ভর্তির সময় সমন্বয় করা হবে। কিন্তু এখন শাবিতে ভর্তি ফি ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। আগেরবার ছিলো আট হাজার একশ টাকা, এখন এক লাফে দ্বিগুণ। আমরা বেশিরভাগই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই কম খরচে ভালো মানের  পড়াশোনা করার জন্যে।যাতে আমাদের ফ্যামিলিতে প্রেশার কম পরে। এখন এইরকমভাবে যদি আমাদের উপর জুলুম করা হয় তাহলে আমরা মধ্যবিত্তরা কি পড়াশোনাই ছেড়ে দিবো । এই বিষয়ে শাবিপ্রবির প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

‘প্রাথমিক পর্যায়ে ফি বাড়ানোর কথা কর্তৃপক্ষ জানায়নি’ :
অদিতি বড়ুয়া মিম নামের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদেরকে এত মাস ঘরে বসায় রাখছে। তারপর হঠাৎ ২ দিনে ১৫ হাজার করা হয়েছে। আমরা রীতিমত অবাক হয়েছি। এটা কি কখনো শিক্ষার্থী বান্ধব হতে পারে? কখনোই হতে পারে না। আর এত টাকা যখন নিবে, তাহলে আগে থেকে কর্তৃপক্ষের বলা উচিত ছিল।’

‘আর্থিকভাবে আমরা টানাপোড়নে’ :
ভর্তিচ্ছু হুমায়রা ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এইরকমভাবে যদি আমাদের উপর জুলুম করা হয় তাহলে আমরা মধ্যবিত্তরা কি পড়াশোনাই ছেড়ে দিবো? এছাড়া প্রত্যেকটি পরিবারই আর্থিকভাবে টানাপোড়নে থাকে। হঠাৎ করে এরকম ফি আমাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নকে ব্যহত করবে। কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি বিবেচনা করা।’

‘ভর্তির ফি বাড়ানোর খাতগুলো নিয়ে ধোঁয়াশা’ : 
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের এক সদস্য বলেন, ভর্তি ফি বাড়ানোর অন্যতম কারণ হচ্ছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা করা। ভর্তি ফি’তে বাড়তি যোগ করা হয়েছে কম্পিউটার ফি, বিভাগের উন্নয়ন ফি ও আরও কয়েকটি নতুন কারণ রয়েছে।

তবে কী কী খাত দেখিয়ে ভর্তির ফি এত বাড়ানো হয়েছে সেই তালিকা ভর্তি কমিটির একাধিক সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে চাইলেও এ প্রতিবেদককে তারা দিতে পারেননি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *