শাবি ক্যাম্পাস ‘অরক্ষিত’!

সিলেট

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফের আলোচনায়। চলতি বছরের শুরুতে শিক্ষার্থী আন্দোলনের কারণে পুরো এক মাস অস্থিতিশীল ছিলো দেশের অন্যতম এ বিদ্যাপীঠ। সেই রেশ পুরোপুরি শেষ হতে না হতেই ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এক ছাত্র নিহতের ঘটনায় আবারও আলোচনায় শাবিপ্রবি।

গত সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে গাজী-কালুর টিলার পাশে (নিউজিল্যান্ড এলাকায়) ছুরিকাঘাত করা হয়  লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদকে (২২)। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বুলবুলের বাড়ি নরসিংদী সদরের নন্দীপাড়া গ্রামে। তিনি শাবির শাহপরাণ হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

ঘটনার সময় বুলবুল গাজী-কালুর টিলার পাশে শাবির বাংলা বিভাগের ছাত্রী মার্জিয়া ঊর্মির সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। এ অবস্থায় ছিনতাইকারীরা অ্যাটাক করে।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে একজন বুধবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে, বুলবুল খুনের পর শাবি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু গত সোমবার প্রকাশ্যে শিক্ষার্থী খুন হওয়া যাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন শিক্ষার্থীর।

শিক্ষার্থীদের অভিযােগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত সাতটি স্থান অরক্ষিত। গাজী-কালুর টিলাসহ কয়েকটি এলাকায় বহিরাগত মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে হাঁটাচলা করতেও
অনিরাপদবােধ করেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিলারগাঁও এলাকার পাঁচটি স্থানে সামীনাপ্রাচীরের নিচ দিয়ে কে বা করা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে রেখেছে। কাঁটাতারের বেড়াও কেটে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পেছনের টিলা ও কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশে কোনাে সীমানা প্রাচীর নেই। এসব স্থানে কোনাে নিরাপত্তাকর্মীও নেই। সহজেই এসব স্থান দিয়ে বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে নানা অপরামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারেন।

কয়েকটি স্থান ছাড়া সবখানেই সীমানা প্রাচীর আছে। তবে বহিরাগত ব্যক্তিরা প্রাচীর টপকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন। তারা ক্যাম্পাসে ঢুকে তুলনামূলক নির্জন স্থানে ওৎ পেতে থাকেন। একা কিংবা দুজন শিক্ষার্থী এসব এলাকায় গেলেই ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালানো হয়। অনেক সময় বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্জন জায়গায় বসে মাদক সেবনও করেন।

শাবি ক্যাম্পাস কিছুটা ‘অরক্ষিত’- এমন বক্তব্য পাওয়া গেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্যেও। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) খুনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ। এসময় উপস্থিত ছিলেন শাবি ভিসি ফরিদ উদ্দিন। তিনি এসময় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সীমানা প্রাচীর দিয়েছি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তের বহিরাগতরা এসে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালায়। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সীমান প্রাচীর আছে তা পুরো সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা।

তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু দুষ্কৃতকারী আছে- যারা বালির বস্তা দিয়ে দেয়ালরে উপর দিয়ে ভেতরে চলে আসে। এছাড়াও তারা মই লাগিয়ে রাখে এবং দেয়ালের নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ করে ঢুকে পড়ে। এভাবে ঢুকে দুষ্কৃতকারীরা আমাদের বনের গাছগুলো পুড়িয়ে ফেলেছে।  আমরা এখন পুরোটাই কাটাতারের বেড়া দিবো। আমরা চেষ্টা করছি বহিরাগতদের প্রবেশ পুরোপুরি প্রতিহত করার।

এদিকে, বুধবার (২৭ জুলাই) বেলা ১১টায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন- শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় আমরা পুরো ক্যাম্পাসে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছি এবং কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছি। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের যাতে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বন্যায় ক্যাম্পাস পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেকগুলো সিসি ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো মেরামত করার চেষ্টা করছি। আগে অনেক সমস্যা ছিলো- আমি আসার পর একটার পর একটা সমস্যা সমাধান করেছি। ক্যাম্পাসে আগে মাদকের ছড়াছড়ি ছিলো, র‍্যাগিং নামক বড় সমস্যা ছিল। সেটি এখন আর নেই। আমরাই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যবস্থা করেছি।

শাবিপ্রবি সিলেটে মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) জালালাবাদ থানার অন্তর্ভুক্ত। এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাে. নাজমুল হুদা খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে পুলিশ ঢুকতে পারে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় নিয়মিত টহল দেয় পুলিশ। বর্তমানে শাবির আশপাশের এলাকায় টহল আরও বাড়ানো হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *