শাবি ছাত্র বুলবুল হত্যায় সন্দেহে ‘প্রেমিকা’

সিলেট

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তার সহপাঠীরা বলছেন, প্রেমের সম্পর্কের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে।

বুলবুলকে সোমবার সন্ধ্যায় যখন ছুরিকাঘাত করা হয়, তখন তার সঙ্গে ছিলেন তার কথিত প্রেমিকা। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নগরের আখালিয়া এলাকার মাউন্ড এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে কাউকে কিছু না জানিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতাল থেকে চলে গেছেন তিনি।

মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, ‘অসুস্থ ছাত্রীর সঙ্গে তার একাধিক সহপাঠী ছিলেন। তার নজরদারিতে হাসপাতালে ছিল পুলিশও। তবে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিকেল চারটার দিকে তিনি আমাদের কিছু না বলে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।’

যাওয়ার আগে তিনি হাসপাতালে থাকা সহপাঠীদের কিছু বলেছেন কি না এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সহপাঠীদের ওই ছাত্রী বলেছেন, তিনি একটু আলাদা হয়ে মোবাইলে জরুরি কথা বলবেন। আর ওই সময়ে নজরদারিতে থাকা পুলিশ সদস্য খেতে গিয়েছিলেন।’

বাংলা বিভাগের ওই ছাত্রীকে মঙ্গলবার সকালেই হাসপাতালে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান বলেন, ‘কালকের ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ওই ছাত্রী। সকালে আমরা তাকে হাসপাতালে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তার কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, তিনি কিছু লুকোচ্ছেন। তবে অসুস্থ থাকায় তাকে বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি।’

ওসি বলেন, ‘এখন শুনেছি তিনি হাসপাতাল থেকে চলে গেছেন। আমরা তাকে খোঁজার চেষ্টা করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয় ফটক থেকে সোমবার বুলবুলকে হাসপাতালে নিয়ে যান সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্র আবদুল্লাহ আল রোমান। তিনি বুলবুলের ঘনিষ্ঠ বড় ভাই হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। সেই সুবাদে তার সঙ্গে ওই মেয়েটির কথাবার্তা হতো।

রোমান বলেন, ‘ওই মেয়ে আর বুলবুলের সম্পর্ক ছিল। কাল বিকেলে তারা ক্যাম্পাসের গাজিকালুর টিলায় যায়। সেখানে সাতটা ৩০ মিনিটের দিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। এরপর ৭টা ৩৮ এ ওই মেয়ে আমাকে ম্যাসেঞ্জারে নক দেয়। আমি তাতে রেসপন্স না করায় ৭টা ৫১ সে আমার মোবাইলে কল দিয়ে জানায়, বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।’

রোমান বলেন, ‘আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে ছিলাম। বুলবুলকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আমি হাসপাতালে নিয়ে যাই। এ সময় ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে যেতে বললে সে রাজি হয়নি।

‘এ সময় আমি ওই মেয়েকে কিছু প্রশ্ন করি। তখন তার কথা আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। ওই মেয়ে বলে- এক মিনিটে বুলবুলকে কয়েকজন খুন করে চলে গেছে। খুনিরা ছিতাইকারী।’

পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলে এক মিনিটে কাউকে কীভাবে খুন করা সম্ভব সেই প্রশ্ন তুলে নোমান বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ পরান হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে আগে থাকতাম। রাজনীতি করি তাই এখনও মাঝেমাঝে এসে এখানে থাকি। এই কক্ষেই বলবুল থাকে। সেই সুবাদে তার সঙ্গে সখ্য। পরিকল্পিতভাবেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

গাজীকালুর টিলা থেকে বুলবুলকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের দলে ছিলেন ইশফাকুর রহমান ফাহিম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি তখন ওই টিলায় উঠছিলাম। এ সময় এক মেয়ের চিৎকার শুনতে পাই। এরপর আমিসহ আরও কয়েকজন এগিয়ে গিয়ে বুলবুলকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে আসি।’

উদ্ধারকারী আরেক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘উদ্ধারের সময় বুলবুল প্রায় অজ্ঞান ছিল। তার হাত, পা ও উরুতে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। অথচ ওই তরুণী ছিলেন পুরো অক্ষত ও সুস্থ। পরে শুনি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’

মেয়েটির খোঁজ পাওয়া গেছে কি না এই প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘সে এখন ক্যাম্পাসে আছে। প্রক্টরদের কক্ষে তাদের জিম্মায় রয়েছে। ভয়ে সে হাসপাতাল থেকে চলে এসেছে বলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে।’

বুলবুলকে হত্যায় ছিনতাইকারীদের সম্পৃক্ততার কথা আসছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘বিষয়টি এখনও পরিষ্কার হয়নি। তবে আমরা নিহত শিক্ষার্থীর মোবাইলটি খুঁজছি।’

শাবি ছাত্র হত্যায় সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালে তাদের আটক করা হয় জানিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, ‘আটকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকার বাসিন্দা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। আমরা ভিন্ন ভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত কাজ চালাচ্ছি।’

এই হত্যার ঘটনায় সোমবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হক জালালাবাদ থানায় মামলা করেন।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান বলেন, মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

বুলবুল হত্যার প্রতিবাদে সোম ও মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার মধ্যরাতে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

রাত সাড়ে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে প্রায় আধাঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে তা প্রত্যাহার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ভেতরে এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও তাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাই।’

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ক্যাম্পাসের ভেতরে গাজীকালুর টিলায় বুলবুল আহমেদের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে অন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে খবর দেন।

পরে গুরুতর অবস্থায় বুলবুলকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বুলবুলের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ৩য় বর্ষে পড়তেন-নিউজ বাংলা

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *