মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের মালিকানাধীন শিপইয়ার্ড থেকে টি. টেকনাফ নামের একটি জাহাজ (একটি পুরাতন ওয়েল ট্যাংকার) উধাও হয়ে গেছে। এই ঘটনায় জাহাজটির মালিকপক্ষ বেঙ্গল ইলেকট্রিক লিমিটেড ও শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ পরস্পরকে দায়ী করে থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে। তবে অভিযোগের ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও জাহাজটির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, গত প্রায় এক বছর আগে টি.টেকনাফ নামের পুরনো একটি অয়েল ট্যাংকার মেরামতের জন্য মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার নয়ানগর এলাকার থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের শিপইয়ার্ডে আনা হয়। সম্প্রতি জাহাজটি সেখান থেকে উধাও হয়ে গেছে।
থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের পক্ষ থেকে গত ২৯ মে গজারিয়া থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, জাহাজটি প্রায় এক বছর ধরে থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের শিপইয়ার্ড এলাকায় থাকায় বার্থিং খরচ বাবদ মোট ৩০ লাখ টাকা বিল আসে। পাওনা টাকা দিতে বারবার তাগাদা দিলেও জাহাজটির মালিকপক্ষ তা পরিশোধ করতে টালবাহানা শুরু করে। এর মধ্যে গত ১৮ মে রাতের কোনো এক সময় মালিকপক্ষ সবার অগোচরে জাহাজটি নিয়ে যায়।
অন্যদিকে ৩০ মে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে জাহাজটির মালিকপক্ষ বেঙ্গল ইলেকট্রিক লিমিটেড। সেখানে বলা হয়েছে, মেরামতের জন্য জাহাজটি থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের শিপইয়ার্ডে নেওয়া হয় গত বছর। মেরামতের পর বিল পরিশোধ করে জাহাজ আনতে গেলে জাহাজটি শিপইয়ার্ডে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মালিকপক্ষের দাবি, ১২৬ ফুট দৈর্ঘ্য, ৩২ ফুট প্রস্থ ও ১০ ফুট গভীরতার জাহাজটির মূল্য ৭ কোটি টাকা।
এ বিষয় সম্পর্কে থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তারা (জাহাজ কর্তৃপক্ষ) আমাদের কোম্পানির দুর্নাম করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এটা করেছে। আমাদের কোম্পানির ব্যবসা প্রায় ৪০০ কোটি টাকার। ক্রয় করা প্রায় ১১০ একর জমির ওপর শিপইয়ার্ডটি স্থাপিত। আমরা কেন তাদের দেড় কোটি টাকার জাহাজ সরিয়ে নেব? এ জন্য ওদের বিরুদ্ধে আমরা ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছি। আদালত মামলা গ্রহণ করেছেন। এসব ব্যাপারে সাংবাদিকদের আমরা পরে বিস্তারিত জানাব।’
এ নিয়ে বেঙ্গল ইলেকট্রিক লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোত্তাকিম সালাম বলেন, ‘আমি জাহাজটির মালিক। শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ দুইবার আমাদের কাছে বিল পাঠায়। তারা মেরামত বিল করেছিল ১১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। আমরা বিল পেয়ে জাহাজটি আনতে গেলে দেখি শিপইয়ার্ডে জাহাজটি নেই। নানা জায়গায় খোঁজখবর করে পুলিশে অভিযোগ করি। এরই মধ্যে আমাদের কাছে তথ্য আসে যে শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ জাহাজটি ভেঙে সবকিছু দেশের নানা প্রান্তে বিক্রি করে দিয়েছে। সেসবের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি আমাদের কাছে আছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আমরা সেগুলো এখন কাউকে দিচ্ছি না।’
মোত্তাকিম সালাম অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘মে মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু করে ১৮ তারিখের মধ্যে তারা জাহাজটি ভেঙে সরিয়ে ফেলে।’
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাজিব খান ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে বলেন, ‘উভয় পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে দুই পক্ষই আমাদের কাছে কোনো তথ্য গোপন করেছে। আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। জাহাজটি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। জাহাজটি ভেঙে ফেলা হয়েছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
শেয়ার করুন