শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীকে শিক্ষকের হুমকি— ‘তোর গর্ভের সন্তান যেন প্রতিবন্ধী হয়’

জাতীয়

সাতক্ষীরার নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে  মামলা ও মারধরের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্কুলের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২২ সেপ্টেম্বর নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আটকে রেখে পেটানোর কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সহকারী শিক্ষক কবির হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত সোমবার ক্লাস শুরু হওয়ার পর শিক্ষক শাহিনা পারভীন, নাজমা সুলতানা কয়েকজন শিক্ষার্থীদের ডেকে অকথ্য ভাষায় শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ও বাহিরে গালিগালাজ করেন এবং হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান।

নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারিহা সুলতানা হাবিবা বলেন, ‘ক্লাসে মিষ্টি ম্যাডাম আমাকে দেখে বলছে আল্লাহর উপর থেকে তোর গজব পড়বে তুই আমাকে নিয়ে মিথ্যা কথা বললে কেন। বলেছিস কেন আমি তোকে মারছি। তখন আমি বললাম ম্যাডাম আপনি মেরেছেন বলেই তো আমি বলেছি।

তখন ম্যাডাম বলছে আমি তোর কোথায় মেরেছিলাম তখন আমি বললাম ম্যাডাম আপনি তো গন্ডগোলের দিন আমাদের মেরে ছিলেন। তখন বলছে যে ঐদিন আমি কি পড়েছিলাম বল। আমি বললাম কেন ম্যাডাম আপনি তো ঐদিন শাড়ি পরেই ছিলেন। তখন ম্যাডাম আমাকে বলল তুই তো একটা ঘরের মেয়ে, আর আমরা তো তোকে মারেনি তুই যখন মিথ্যা কথা বলছিস এই মার তোর শশুর বাড়ি গিয়ে খেতে হবে। তোর গর্বেও তো সন্তান হবে সে যেন প্রতিবন্ধী হয়। বলছে তোর বাপ তো ভ্যান চালায় আমি তো জানি তোর বাপের নামে ৫ লাখ টাকার মামলা দেবো।’

বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান ইভা বলেন, ‘আমি স্কুলে গিয়েছি আমি জানতামই না ম্যাডামরা আমাকে এভাবে বলবে। প্রথমে ক্লাসে যাওয়ার পরপরই তুহিন স্যার আমাকে জিজ্ঞাসা করছে তুমি কি এর ভেতরে ছিলে? আমি বললাম না স্যার আমি ছিলাম না। তখন তুহিন স্যার বলল তুমি তো এর মধ্যে ছিলে মিথ্যা কথা বললে কিন্তু পরে সমস্যা হতে পারে ঠিক তখনই ওই ক্লাসে আসেন মিষ্টি ম্যাম কবির স্যার ও নাজমা ম্যাডাম। মিষ্টি ম্যাডাম বলে, এই বেয়াদব মেয়ে আমার ক্লাসের কোন মেয়ে কি আন্দোলনের দিন নিচে নেমেছিল? তুই নেমেছিলে কেন বল বেয়াদব মেয়ে? তোর বাড়ি কোথায়? কাজী পাড়ায় না? সুলতানপুরের মেয়ে বলে শুধু তুই সত্য কথা বলিস আর সবাই মিথ্যা বলে তাই না? কাজী পাড়ায় বাড়ী বলে রাসেল স্যারের সাথে ফস্টি নস্টি করিস তাই না?’

ইশারাত জাহান বলেন, ‘আমাকে বাইরে নিয়ে যায় এবং বলে যে, আমি তোকে অভিশাপ দেব না। কিন্তু তোর গর্ভের সন্তান কালো হবে, খোঁড়া হবে, প্রতিবন্ধী হবে। তোর বাপ মরে গেছে না? মরে যেয়ে ভালো কাজ করেছে। আমরা মারিনি তার পরেও আমাদের নামে মিথ্যে অভিযোগ করেছিস না? এখন তোকে রাস্তাঘাটে যে জায়গায় ফাঁকা পাব সেইখানে সত্যি সত্যি সেই ভাবে মারব।’

নাজমা ম্যাডামের কাছে বিজ্ঞান খাতা দেখাতে চাইলে বলে যে, ‘তোর খাতা দেখব না, তোরা কি করে পরীক্ষায় পাশ করিস দেখে নেবো। ভালো পরীক্ষা দিলেও পাশ করাবো না।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবুল খায়ের বলেন, জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে স্কুল কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মঈনুল ইসলাম মঈন বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *