নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এই দেশে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আবার নদী আমাদের আতঙ্কিত করে, ভীত করে, যখন বন্যায় দেশের বিশেষ কিছু অঞ্চল তলিয়ে যায়।
প্রতি বছর দেশে বন্যা হয়। বিপর্যয় নেমে আসে সেইসব এলাকায়। তখন খাবার থেকে শুরু করে সবকিছুর সংকট দেখা দেয়। এই সংকট বা বিপর্যয় বা দুর্ভোগে ভোগা মানুষগুলোর পাশে কেউ দাঁড়ায়, কেউ এড়িয়ে যায়।
২০২২ সালে সিলেট বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। বানভাসী মানুষের পাশে অনেকে এগিয়ে না আসলেও আমি এসেছি। কারণ আমার সিলেট আমার জন্মস্থান। আমি মনে করি এইটা আমার দায়িত্ব। এইটা আসলে প্রশংসা পাওয়ার মতো এমন কোনো কাজ না।
যারা এগিয়ে আসে তারা আসলে কোনোকিছু না ভেবেই এগিয়ে আসে। তারা কখনো ভাবে না এই বিপদ বা বিপর্যয় বা দুর্ভোগ কীভাবে সামাল দেবে। তারা নিজের কথাও ভাবে না, ভাবে মানুষের কথা।
শুধু বন্যা না, ২০২০ সালে যখন করোনা মহামারির আঘাতে আমরা জর্জরিত ছিলাম, সেই সময়ও আমি বিভিন্নভাবে আমার সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আমি মনে করি, এইটা পুরোটা আসলে মনস্তাত্ত্বিক বিষয়।
লক্ষ্য করবেন, বিপদ দেখলে কিছু মানুষ এগিয়ে যায়। কিছু মানুষ পাশ কাটিয়ে চলে যায় আর কিছু মানুষ দূর থেকে তা উপভোগ করে, এগিয়ে আসে না।
যারা এগিয়ে আসে তারা আসলে কোনোকিছু না ভেবেই এগিয়ে আসে। তারা কখনো ভাবে না এই বিপদ বা বিপর্যয় বা দুর্ভোগ কীভাবে সামাল দেবে। তারা নিজের কথাও ভাবে না, ভাবে মানুষের কথা।
সিলেটের বন্যায় বানভাসী মানুষদের দেখে আমি কষ্ট পেয়েছি। আমি এগিয়ে আসাতে প্রায় তিন কোটি টাকা ম্যানেজ হয়েছে। এই টাকা কিন্তু আমার নিজের না। সবই জনগণের টাকা।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বিদেশ থেকেও অনেকে এগিয়ে এসেছেন, অর্থ সহযোগিতা করেছেন। তারা আমাকে বিশ্বাস করেছেন। আমার ওপর আস্থা রেখেছেন দেখেই এই টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
এই তিন কোটি টাকা দিয়ে আমি প্রায় ছয়শ বাড়ি বানানোর চিন্তা করছি। তার পাশাপাশি ত্রাণ দিয়েছি প্রায় দেড় কোটি টাকার উপরে। এই কাজ কিন্তু চলমান। আমি এখনো কাজ করে যাচ্ছি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, রাজনীতি বা সামাজিক কর্মকাণ্ড যাই বলেন না কেন, মানুষের দুঃসময়ে যদি তাদের পাশে থাকা না যায় তবে সব অবদান কিন্তু বৃথা।
লক্ষ্য করবেন, অনেকেই হয়তো জনগণের সেবা না করেই অনেক বড় নেতা হয়ে যেতে পারবেন, এমপি, মন্ত্রী হতে পারবেন। কিন্তু মনের দিক থেকে কখনো কি শান্তি পাওয়া যায়? যায় না। একধরনের অস্বস্তি কিন্তু কাজ করে।
প্রত্যেক ধর্মে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে। মানুষ যদি ধর্মও মানে তাহলেও দুঃসময়ে আক্রান্ত বা পীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে চা শ্রমিকদের আন্দোলন। কী পরিমাণ কষ্ট যে এই চা শ্রমিকেরা করেন তা অনেকেরই ছিল অজানা। কিন্তু আমরা ক্লান্তি ভর করলেই চা পান করি।
১৩ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সব চা-বাগানে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির মাধ্যমে ধর্মঘট করছেন শ্রমিকেরা। তাদের দাবি দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা। ২০ আগস্ট বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করে। সেই বৈঠকে চা-শ্রমিকদের নতুন মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
নতুন মজুরিতেও শ্রমিকেরা শান্ত হন না। তারা চান ৩০০ টাকা মজুরি। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে চা শ্রমিকেরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। আগের মজুরিতে কাজে যাওয়া সিদ্ধান্ত নেন। (ঢাকা পোস্ট, ২২ আগস্ট ২০২২)
প্রশ্ন হলো, এই যে ১৩ আগস্ট থেকে চা শ্রমিকেরা তাদের মজুরি আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে কেন এলাকার কোনো চেয়ারম্যান, এমপির দেখা পাওয়া যায়নি? তারা কি জনগণের প্রতিনিধি না?
তারা কি আমাদের ভোট পায় না? তাহলে কেন তাদের দেখা পাওয়া যায় না? এগুলো বঙ্গবন্ধুরা রাজনীতি না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি হচ্ছে, যে যে অবস্থানে থাকেন না কেন মানুষের কষ্টে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
সুস্থ ধারার রাজনীতি হলো, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর রাজনীতি। শুধু বন্যা না, যেকোনো বিপর্যয় বা সংকটে আমি মানুষের পাশে থাকতে চাই, পাশে দাঁড়াতে চাই। এইভাবে আমি মানুষের সেবা করতে চাই।
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ।। আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
শেয়ার করুন