সরকারি কলেজের স্নাতকের (সম্মান) ছাত্র তানিমের জঙ্গি নাম ইসা

সিলেট

কথা রাখেননি সিলেট সরকারি কলেজের স্নাতকের (সম্মান) ছাত্র সেজাদুল ইসলাম সাহাব তানিম (২৩) ওরফে ইসা। জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গীরা তাঁকে চেনে ইসা নামে।

গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারের বৈরাগী বাজারে। এখন পরিবার থাকে শাহপরাণ থানার শিবগঞ্জ বাজারের ফরাদীপাড়ায়।

সম্প্রতি ঘরছাড়া একাধিক তরুণের ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে ইসার নামটিও সামনে আসে। এরপর অবাক হন গোয়েন্দারা। কারণ ২০২১ সালে জঙ্গিবাদে সংশ্নিষ্টতার ঘটনায় তাঁকে আটক করা হয়েছিল। এর পর ডি-র‌্যাডিক্যালাইজেশন কর্মসূচির আওতায় তাকে সুপথে ফেরানোর উদ্যোগ নেয় পুলিশ। যাওয়ার আগে ইসাও নিশ্চয়তা দেন- উগ্রবাদের পথে তিনি আর কখনও পা বাড়াবেন না। তবে সে প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি ইসা। উল্টো পুরোনো অন্ধকার গলিতে পা রেখে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতাকে হত্যার ছক কষেন।

ইসার বাবা শাহাব উদ্দিন এ বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় মারা গেছেন। এখনও তাঁর লাশ দেশে পৌঁছেনি। অন্যদিকে ইসার স্ত্রী নাদিয়া আক্তার মুন্নীর কোলজুড়ে এ বছরই এসেছে কন্যাসন্তান। তবে বাবার মৃত্যু ও সন্তানের মুখ- কোনো কিছুই স্পর্শ করেনি তাঁকে। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে তৃতীয়বারের মতো হিজরতের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়েছেন ইসা।

মে মাসে ঘর ছাড়ার পর প্রায় ৯০ দিন বেশ কয়েকটি জেলায় ঘুরে ঘুরে জঙ্গিদের গোপন আস্তানায় অবস্থান করছিলেন। সম্প্রতি ঘরছাড়া একাধিক তরুণের ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে ইসার নামটিও সামনে আসে। এরপর অবাক হন গোয়েন্দারা। কারণ ২০২১ সালে জঙ্গিবাদে সংশ্নিষ্টতার ঘটনায় তাঁকে আটক করা হয়েছিল। এর পর ডি-র‌্যাডিক্যালাইজেশন কর্মসূচির আওতায় তাকে সুপথে ফেরানোর উদ্যোগ নেয় পুলিশ। যাওয়ার আগে ইসাও নিশ্চয়তা দেন- উগ্রবাদের পথে তিনি আর কখনও পা মাড়াবেন না। তবে সে প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি ইসা। উল্টো পুরোনো অন্ধকার গলিতে পা রেখে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতাকে হত্যার ছক কষেন।

সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাতে তিনি ফিরে যান, দেওয়া হয় সেই সুযোগ। গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর বদলে পরিবারের জিম্মায় ইসাকে তুলে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি সুপথে থাকেননি। তৃতীয়বারের মতো হিজরত করতে ঘর ছেড়ে আবার গত বুধবার রাতে ধরা পড়লেন গোয়েন্দা জালে। এবার আর তাঁকে বাড়ি ফেরার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয় বৃহস্পতিবার, পরে তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, ইসার সঙ্গে মে মাসে একই দিন হিজরত করতে ঘর ছাড়েন রিয়াজ আহম্মেদ নামে আরেক ছাত্র। এর পর আরও কয়েকজন তরুণ নিয়ে তাঁরা সীমান্ত পথে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করেন। উগ্রপন্থি অন্য তরুণদের সঙ্গে গোপনে তাঁরা যোগাযোগ করেছিলেন। এসব তথ্য জানতে পেরে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার আগে ইসা, রিয়াজ ও জাহিদ নামে তিন তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইসা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে তাহিয়াত নামে সিলেটের আরেক তরুণের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাহিয়াতের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তাহিয়াতের সঙ্গে ঘর ছাড়েন তিনি। ঘর ছাড়ার আগে অনলাইনে আনসার আল ইসলামের ‘বড় ভাইদের’ একটি গ্রুপের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় ছিল। প্রথমে তাঁদের ছক ছিল রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে কিছু একটা করার। তবে বড় ভাইদের সহযোগিতা না পাওয়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

তদন্ত সংশ্নিষ্ট আরেক কর্মকর্তা জানান, দুই দফায় হিজরত করেও ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন ইসা। এক মাসের সন্তানকে বাসায় ফেলে তৃতীয়বারের মতো আবার তিনি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ঘর ছাড়বেন- এটা পরিবারের সদস্যদের কাছেও ছিল অচিন্তনীয়।

এ ছাড়া এই বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকায় মারা যান তাঁর বাবা শাহাব উদ্দিন। সেই লাশ এখনও দেশে পৌঁছেনি। ইসার ভাষ্য, এই দফায় বাড়ি ছাড়ার আগে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানদের নির্যাতনের ভিডিও দেখতেন। সন্তানের মুখ ও বাবার মৃত্যু কিছুই তাঁকে স্পর্শ করেনি। এ ছাড়া পড়াশোনার পাশাপাশি ২০১৯ সালের পর থেকে অনলাইনকেন্দ্রিক ব্যবসায় জড়ান।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২০ সালে সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ইসার ভাষ্য, ওই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। তার বিশ্বাস, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রঞ্জিত সরকারের কারণে অপরাধীরা পার পেয়েছেন।

তাই রঞ্জিতের ওপর হামলার ছক করেন তিনি। মিশন সফল করতে ছুরিও কিনে রাখেন। এ ব্যাপারে রঞ্জিত সরকার বলেন, হত্যার ছকের বিষয়ে আমাকে পুলিশের কেউ জানায়নি। এলাকায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আমাদের পুরোনো বিরোধ রয়েছে।

ইসা পুলিশকে আরও জানায়, এক সময় তাঁর ছবি আঁকাআঁকির খুব শখ ছিল। উগ্রবাদে জড়ানোর পর জানতে পারেন, ছবি আঁকা ‘হারাম’। তাই আঁকাআঁকি ছেড়ে দেন। এ বছর ঘর ছাড়ার পর সংগঠনের বড় ভাইরা তাঁর চোখ বেঁধে মোটরসাইকেলে বিভিন্ন আস্তানায় নিয়ে যান। বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলাসহ আরও কয়েকটি জেলায় জঙ্গি আস্তানায় তাঁকে রাখা হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *