ফারুক আহমদ
স্টাফ রিপোর্টার
সম্প্রতি সিলেটের বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট, দর্পণ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক রহমত আলী এবং জাতীয় দৈনিক মানবজমিনের প্রাক্তন মফস্বল সম্পাদক ও দৈনিক শুভ প্রতিদিনের প্রধান বার্তা সম্পাদক সালমান ফরিদ’সহ সাংবাদিকদের নিয়ে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের কটুক্তিমূলক মন্তব্য, ফেসবুক পেইজে ও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার (২ মে) বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের পক্ষে ক্লাবের সভাপতি তজম্মুল আলী রাজু ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদুর রহমান মিলাদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ‘মেয়র’র মত একটি জনপপ্রতিনিধিত্বমূলক ও স্পর্শকাতর-দায়িত্বশীল চেয়ারে বসে সাংবাদিক সমাজের প্রতি পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের অব্যাহত বিষোদগার, বিভিন্ন অশালীন আচরণ ও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্যে বিষ্ময় প্রকাশ করেন। তারা এটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য ও বালখিল্য আচরণ’ বলে মন্তব্য করেন।
প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ বলেন, একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এ ধরনের শালীনতাবিবর্জিত বক্তব্য সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিত ও অগ্রহণযোগ্য। মেয়র মুহিবুর রহমানের এমন অশালীন বক্তব্য দেশে-বিদেশে সাংবাদিক সমাজকে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান জাতীয় পর্যায়ে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালকারী সাংবাদিক ছাড়াও বিশ্বনাথের স্থানীয় সাংবাদিকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যে বক্তব্য রেখেছেন বা রাখছেন, তা চরম অশালীন ও অশোভনীয়। তিনি মাঠ পর্যায়ের সংবাদকর্মীদের ‘সাংবাদিক’ না বলে ‘সংবাদ সংগ্রাহক’ বলে হেয় প্রতিপন্ন করেন, যা দেশ-বিদেশের সাংবাদিক সমাজকে ব্যথিত করেছে।
সম্প্রতি একটি অনুমোদনহীন ও নামসর্বস্ব অনলাইন টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান বলেছেন, স্থানীয় সাংবাদিকরা যেসব দৈনিক পত্রিকায় কাজ করেন সেসব পত্রিকার সম্পাদকদের সাথে কথা বলে তাদেরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বলবেন। যদি তাদেরকে সরিয়ে দেয়া না হয়, তাহলে তিনি বিশ্বনাথে ওইসব সংবাদপত্র পুড়িয়ে ফেলবেন। তাছাড়া স্থানীয় সংবাদকর্মীদের তিনি ঢালাওভাবে অপসাংবাদিক, টাউট-বাটপার বলেও মন্তব্য করেন।
বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক দুবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের মন্তব্য স্বাধীন সাংবাদিকতা পেশা ও মুক্ত গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বড় ধরনের হুমকির সামিল। মিডিয়া ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তার এমন উস্কানি ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনও। কোন সাংবাদিককে নিয়ে তার কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করে তিনি সাংবাদিক সমাজকে শুধু হেয় প্রতিপন্নই করেননি; পেশাগতভাবেও হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন। আর গোটা সাংবাদিক সমাজকে করেছেন অপমান। এ ধরণের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ একজন জনপ্রতিনিধির কার্যকলাপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। এটি এক ধরণের উগ্রতা, যা গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি প্রকাশ্য হুমকির শামিল।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১১ এপ্রিল বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান মেয়রের চেয়ারে বসে একটি ফেসবুক পেইজে লাইভ বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে সাংবাদিক রহমত আলীকে ‘তথাকথিত’ এবং ‘নামধারী’ সাংবাদিক উল্লেখ করে বলেন, ‘ওই রহমত আলী একটি ম্যাগাজিনে লিখে বসলো যে, বিশ্বনাথে প্রবাসীদের উদ্যোগে একটা কলেজ স্থাপিত হয়েছে, আমার নামটাও সেখানে দিল না। আমি যে এত কষ্ট করে কলেজটি করলাম অন্তত আমার নামটা সেখানে থাকা উচিত ছিল।’
এ প্রসঙ্গে বলা আবশ্যক, বহু বছর আগের একটি প্রকাশনাকে কেন্দ্র করে এখন পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার এমন বিষোদগার বোধগম্য নয়। এছাড়াও একটি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সিলেটের সুনামখ্যাত ও পরিচ্ছন্ন সিনিয়র সাংবাদিক সালমান ফরিদ এবং তার পরিবারকে নিয়েও সম্প্রতি একাধিক সভায়, ফেসবুকে লাইভে অশালীন মন্তব্য ও আক্রমণাত্মক ভাষা প্রয়োগ করেন। এমনকি পৌরসভার দুজন কাউন্সিলারের উপস্থিতিতে মেয়রের সমর্থকরা সালমান ফরিদের বিরুদ্ধে সমাবেশ করে তাকে বিশ্বনাথে আসতে না দেয়া ও তার বাড়িতে ‘হামলা’ করারও প্রকাশ্য হুমকি দেন।
বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের এসব অশালীন আচরণ এবং অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশের আহবান জানান বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ। ভবিষ্যতে এধরণের আক্রমনাত্মক কথাবার্তা পরিহার না করলে অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি প্রদান করবেন বলে জানান প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ।