সাঈদীকে নিয়ে স্ট্যাটাস: শাস্তির ঝুঁকিতে সিলেটের দুই প্রভাষক

জাতীয়

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাওলানা দেলাওয়ার সোহাইসন সাঈদীর মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের এম সাইফুর রহমান ডিগ্রি কলেজের দুই প্রভাষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। তারা এর জবাবও দিয়েছেন। তবে এ দুই প্রভাষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, তা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কলেজটির পরিচালনা পরিষদের আগামী সভায় তাদের দেয়া জবাব পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। 

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, একজন প্রভাষকের জবাব মোটামুটি সন্তোষজনক হওয়ায় তিনি পার পেয়ে যেতে পারেন। আর অপরজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী।

সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর নেতা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাঈন সাঈদীর মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার এম সাইফুর রহমান ডিগ্রি কলেজের দুই প্রভাষক। তারা হলেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের উজ্জ্বল চৌধুরী ও অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র  প্রভাষক আব্দুর রশীদ।

উজ্জ্বল চৌধুরী তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, জালিমের জুলুমের শিকার হয়ে একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেমে দ্বীন, মহান আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সারাজীবন যিনি দেশে-বিদেশে ছুটে বেরিয়েছেন, সেই একজন মহান দাঈকে এইভাবে জেলে বন্দী করে বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে শহীদ করা হলো।

উপসংহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, হে রাজাধিরাজ মহান আল্লাহ! জালিমেরা যেনো প্রতিটা মুহুর্তে এই হাসিমাখা মুখ দেখে আঁতকে উঠে।

এরপরই হেষট্যাগ দিয়ে ইংরেজীতে লেখা রয়েছে ‘উই আর আল্লামা সাঈদী’। সবশেষে সাঈদীর হাসিমাখা মুখের একটা ছবি যাতে দেখা যাচ্ছে লোকজন তাকে ঘিরে ধরেছেন।

উজ্জ্বল চৌধুরী আবার সাঈদীর গায়েবানা জানাজার যৌক্তিকতা নিয়ে আশরাফ উদ্দিন সাদেক নামক এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর স্ট্যাটাস শেয়ারও দিয়েছেন।

আর অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আব্দুর রশীদ তার দেয়া স্ট্যাটাসে সাঈদীর মৃত্যুর সাথে ভূমিকম্পের যুগসূত্র খুঁজেছেন। লিখেছেন, গতকাল যিনি হাসলেন, হেসে হেসে সালাম বিনিময় করলেন, আল্লাহু আকবার, আজ যখন আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদি তার মাওলার ডাকে সাড়া দিয়ে অনন্ত অসীম পরকালের জীবনে চলে গেলেন, ঠিক তখনই অর্ধ পৃথিবী (বাংলাদেশ, ভারত, চীন, মায়ানমার, শ্রীলংকা, পাকিস্তান) ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে। আল্লাহপাকই ভালো জানেন এই দুইয়ের মধ্যে কি সম্পর্ক রয়েছে। তবে আল্লাহ পাকের এই প্রিয়পাত্রের চির বিদায় মুহুর্তে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহের কোটি কোটি ভক্ত অনুরক্ত আজ দুকরে দুকরে কাঁদছে।

সবশেষে সাঈদীর মৃত্যুর সংবাদের সঙ্গে দুটি ছবি। একটি জীবীত অবস্থার, অন্যটি লাশের।

তাদের এমন স্ট্যাটাস দেখে বা পড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে গোটা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাজুড়ে। এমনকি সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে সিলেট মহানগরী পর্যন্ত। একটা এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাও আবার মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির মৃত্যুতে এমন স্ট্যাটাস পড়ে তাদের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সহকর্মী, অভিভাবক, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, কলেজ গভর্নিং বডির সদস্যবৃন্দসহ সমাজের সব পর্যায়েই চলে কঠোর সমালোচনা। এমনকি বিষয়টি নিয়ে কোম্পানীগঞ্জের হোটেল রেঁস্তোরাগুলোর চা’র কাপে রীতিমতো ঝড় ওঠে।

এ অবস্থায় গত ২১ আগস্ট কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এম সাইফুর রহমান ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্য মো. আপ্তাব আলী কালা মিয়া এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গভর্নিং বডির সভাপতি ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে গভর্নিংবডির গত ২৩ আগস্টের সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা কেন নেয়া হবেনা- এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে তিনদিনের সময় দিয়ে শো’কজ করার।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কলেজের অধ্যক্ষ মো. নজরুল  ইসলাম তাদেরকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন গত ২৭ আগস্ট। তারাও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাবও দিয়েছেন।

কলেজটির সাথে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, দু’জনই ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তবে একজনের জবাব মোটামুটি সন্তোষজনক। তিনি পার পেয়েও যেতে পারেন। অন্যজনের জবাবে সন্তোষের কিছু নেই । তবে সূত্রটি তার নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এম সাইফুর রহমান কলেজের গভর্নিংবডির চেয়ারম্যান ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং সিরেট প্রতিদিনিকে বলেন, তারা শো’কজের জবাব দিয়েছেন। তবে এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবেনা বা সিদ্ধান্তও নেয়া যাচ্ছেনা। সেজন্য গভর্নিং বডির পরবর্তী সভা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সভায় তাদের জবাব বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা সময়মতো  সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলামও একই জবাব দিয়েছেন। জানিয়েছেন, তারা শো’কজের জবাব পেয়েছেন। বাকীটা গভর্নিংবডির পরবর্তী সভায় আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে|

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *