ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। বিষয়টি দৈনিক মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা। এর আগে ২রা অক্টোবর সাকিব ও তার স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছিল। পুঁজিবাজারে কারসাজি ও আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে এই ক্রিকেটার ও তার স্ত্রীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। জানা গেছে এরপর তদন্ত শেষে সম্প্রতি সরকারের নির্দেশে তার সকল ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। এমনটা হওয়ার কারণে সাকিব আর বাংলাদেশের হয়ে আর খেলবেন না বলেই জানা গেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, সাকিব আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ ছাড়াও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলবেন না। এরই মধ্যে সাকিব টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা করেছেন। যে কারণে তার শুধু ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলার কথা। কিন্তু এখন জানা গেছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হওয়ার কারণে তিনি অভিমানে খেলবেন না সেখানেও। যদিও এটি নিয়ে সাকিব প্রকাশ্যে কোনো কিছু জানাননি। তবে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো এমনটাই দাবি করেছে। শুধু তাই নয়, এতদিন নিরাপত্তার কারণে তার দেশে ফেরা ছিল অনিশ্চিত এবার এই ঘটনায় ষ্পষ্ট হলো তার ফিরে আসার পথ প্রায় বন্ধই হয়ে গেলো। তিনি চট্টগ্রাম কিংসের হয়ে খেলতে পারবেন না বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগেও (বিপিএল)। খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার শঙ্কা, সাকিববিরোধীদের দ্বারা নিরাপত্তা ঝুঁকি ও সবশেষ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ হওয়ার কারণে তার বাংলাদেশে ফেরাটাই হয়ে গেছে অনিশ্চিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘এটি নিশ্চিত যে সাকিব আল হাসানের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে।’ তবে সিদ্ধান্তটি কবে এসেছে তা তিনি জানাতে রাজি হননি।
সাকিব আল হাসান ছিলেন ছাত্র আন্দোলনের মুখে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সংসদ সদস্য। দলটির হয়ে তিনি ছিলেন রাজনীতিতে সক্রিয়। যখন ছাত্র আন্দোলনে নিহতের ঘটনা বাড়ছিল তখন তিনি ছিলেন দেশের বাইরে। এমনকি এই ঘটনাতে তিনি ছাত্রদের পক্ষে কোনো মন্তব্যও করেননি। উল্টো পরিবার নিয়ে আনন্দ ভ্রমণের ছবি পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তার আন্দোলন চলাকালে তার নীরবতাকে পতিত সরকারের
প্রতি তার সমর্থনই মনে করেছেন দেশের জনগন। ধারণা করা হচ্ছিল তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার পাঁচ আগষ্টের পরই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ক্রিকেটার সাকিবের প্রতি সম্মান দেখায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দেশের বাইরে থেকেই তাকে জাতীয় দলে খেলতে সুযোগ দেয়া হয়। তিনি পাকিস্তান ও ভারতে টেস্ট সিরিজ খেলেন দলের হয়ে। সবশেষ ভারতের কানপুরে তিনি ঘোষণা দেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসরের। তবে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলতে চান ঢাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। শুরুতে তার দেশে আসার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত ছিল। তবে সিরিজের আগে ১৬ অক্টোবর লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে দুবাই এসেও দেশের বিমান ধরতে পারেননি। তাকে সরকারের উপর মহল থেকে দেশে না ফিরতে নির্দেশ দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, তার দেশে আসা ঠেকাতে সাকিব বিরোধীরা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সামনে শুরু করে সামাবেশ। অন্যদিকে ম্যাচের আগের দিন সাকিবের ভক্তরা অবস্থান নেয় স্টেডিয়ামের সামনে। এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে সংঘর্ষে মিরপুর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সাকিবভক্তদের ওপর কে বা কারা হামলাও চালায়। পরে পুলিশ ও সেনা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
অন্যদিকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সাকিবকে দলে রাখেনি বিসিবি। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছিলেন এই সিরিজে না খেললেও তার খেলার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। তবে পরিস্থিতি বলছে ভিন্ন কথা। বেশ কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে সাকিবকে জাতীয় দলে রাখা হলেই তাকে দেশে ফেরানোর জন্য তার ভক্তরা দাবি তুলবে। সেটি হলে ফের দেশে তৈরি হবে অশান্তি। শুধু তাই নয়, বিপিএলে তাকে খেলার সুযোগ করে দিলেও তার নিরপত্তা দেয়া হবে বিসিবি’র অন্যতম মাধা ব্যথার কারণ। তখন ৭ দলের দেশি বিদেশি ক্রিকেটারদের নিরাত্তার মাঝে একা সাকিবকে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টিও কঠিন হয়ে পড়বে। যে কারণে তার দেশে এসে কিংবা দেশের হয়ে খেলা হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। আর জানা গেছে ব্যাংক হিসাব জব্দ হওয়াতে এত সব জটিলতা নিয়ে তিনি নিজেও আর দেশে হয়ে খেলতে চান না!