সাদাপাথর কেলেঙ্কারি যেন থামছেই না। শুরু থেকেই লুটপাটের এ ঘটনায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। সাদাপাথরকাণ্ডে বিদায় নিতে হয়েছে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহারকে।
প্রশাসনের পর এবার সাদাপাথরের উত্তাপ লেগেছে সিলেটের রাজনীতিতে। পাথর লুটের সাথে জড়িত ৪২ রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে দুদকের তালিকায় এমন গুঞ্জন চলছে সিলেটে। এরকম একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঘুরপাক খাচ্ছে। এই তালিকা নিয়ে সিলেটের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে অস্থিরতা। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ প্রত্যাখান করেছে। পাথর লুটকান্ডে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও ফেসবুকে সাদাপাথর লুটের সাথে যেসব রাজনৈতিক নেতাদের নাম জড়িয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক রুবেল আহমদ বাহার, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাকিন আহমদ ফরহাদ, মহানগর জামায়াতের আমীর ফখরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন এবং এনসিপির জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন সাহান, মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, আওয়ামীলীগ কর্মী বিলাল মিয়া, সাহাব উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন। এ ঘটনার পর প্রথমেই প্রতিবাদমুখর হয় মহানগর বিএনপি। সংবাদ সম্মেলন করে পাথর লুটের সাথে নিজেদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। তাদের দাবি, দুদকের বরাত দিয়ে যেসব সংবাদ প্রকাশ হয়েছে তা ভিত্তিহীন।
দুই নেতা অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের যোগসাজশ ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে লুটপাট চলছে, যা এখনো চলমান। প্রকৃত লুটপাটকারীদের আড়াল করতেই স্বচ্ছ ইমেজের রাজনীতিকদের কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও ইমদাদ হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার কর্মসূচি ও ধানের শীষের পক্ষে জনসমর্থন বাড়ছে। এই গণজোয়ার ঠেকাতেই বিএনপিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। এর অংশ হিসেবে তাদের নামে কলঙ্ক মাখানোর চেষ্টা করছে মহলবিশেষ।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে মহানগর জামায়াতের পক্ষ থেকে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের নেতাদের নির্দোষ দাবি করা হয়েছে। দুদক কার্যালয়ে এমন কোন তালিকা নেই বলেও দাবি করেছেন দলটির নেতারা।
মহানগর জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম বলেছেন, সবধরনের লুটপাটের বিরুদ্ধে জামায়াত বরাবরই সোচ্চার। সাদাপাথর লুটের সাথে উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে তাকে ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীনের নাম জড়ানো হয়েছে। সাদাপাথর লুটের সাথে যারা প্রকৃতপক্ষে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জেলা ও মহানগর শাখা। সাদাপাথর কাণ্ডে নাম আসা জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দীন সাহান ও মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সাদাপাথর লুটের মুল অপরাধীদের আড়াল করতে আমাদের নাম যুক্ত করা হয়েছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ।’
তারা শুধু সাদাপাথর নয়, সিলেটের সকল পর্যটনকেন্দ্রের পরিবেশ বিনষ্টকারী ও লুটপাটের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
প্রধান সম্পাদকঃ সারওয়ার খান
সম্পাদকঃ জাকের খান (রুবেল)
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫