সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টার অভিযোগ আসামের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে

জাতীয়

ধর্ম ও জাতির ভিত্তিতে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বৈরিতা তৈরি করার চেষ্টার অভিযোগে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে কংগ্রেসসহ ১৮টি বিরোধী দল। তিনি দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছেন বলেও বিরোধীরা অভিযোগ করছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের গভর্নরের কাছে গিয়ে মি. বিশ্বশর্মাকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছে তারা।

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ছাড়াও তার সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আসামের নগাঁও জেলার ধিং এলাকায় এক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীর গণধর্ষণের ঘটনার পরে আসামের ভূমিপুত্রদের কয়েকটি সংগঠন ‘বাংলাদেশী’দের সাতদিনের মধ্যে উজানি অসম ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। ওই গণধর্ষণে অভিযুক্তরা বাংলাভাষী মুসলমান।

আসামের বাংলাভাষী মুসলমানদের অনেক সময়েই ‘বাংলাদেশী’ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
আবার এদের অনেকে নিজেদের ‘মিঞা’-ও বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী?

নগাঁও জেলার ওই গণধর্ষণ ও তার প্রতিবাদ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আসাম বিধানসভায় এক বিতর্ক চলছিল মঙ্গলবার।

বিরোধী দলের বিধায়করা সেখানে বলেন যে ২২শে অগাস্ট ১৪ বছরের ওই কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার রাজ্যের অনেক এলাকাতেই উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে তারা উল্লেখ করেন শিবসাগর জেলার কথা।

বিরোধীদের তোলা প্রসঙ্গগুলির জবাব দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন যে তিনি মিঞা মুসলমানদের পুরো আসাম দখল করে নিতে দেবেন না। তার যে ভাষ্য স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে উদ্ধৃত হয়েছে, তা অনেকটা এরকম: “কেন মিঞা মুসলমানরা নামনি আসাম থেকে উজানি আসামে যাবে? যাতে মিঞা মুসলমানরা আসাম দখল করে নিতে পারে? আমরা তা হতে দেব না।”

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলি বিধানসভার বিতর্কের বিস্তারিত জানিয়ে লিখেছে যে বিতর্কের মধ্যেই সভা মুলতুবি হয়ে যায়। পরে অধিবেশন আবার শুরু হলে মি. বিশ্বশর্মা তার আগের কথার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, “এটা একটা সংবেদনশীল সময়। আসামের মানুষ যেখানে চাইছেন না, সেখানে জোর করে যাবেন না। উজানি আসামের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি সেদিকে যান, তাহলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যাবে না।”

আসামের পশ্চিম অঞ্চলের জেলাগুলিকে নামনি আসাম বলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে বরপেটা, ধুবরি, দক্ষিণ শালমারা, মানকাছার ইত্যাদি জেলা। এই অঞ্চলে বাংলাভাষী মুসলমানরা জনসংখ্যার একটা বড় অংশ। আর উজানি আসাম বলা হয়ে রাজ্যের পূর্বদিকের জেলাগুলিকে। চরাইদেও, ঢেমাজি, ডিব্রুগড়, গোলাঘাট, লখিমপুর, শিবসাগর, তিনসুকিয়ার মতো আরও বেশ কয়েকটি জেলা নিয়ে উজানি আসাম। এই অঞ্চলে অসমীয়া ভূমিপুত্ররাই সংখ্যায় বেশি।

বিরোধীদের পুলিশে অভিযোগ

হিমন্ত বিশ্বশর্মার এই মন্তব্যগুলিকে ঘিরেই বিরোধী দলগুলি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছে বুধবার।

বিজেপি বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অংশীদার আসামের ১৮টি দল নিয়ে ‘ইউনাইটেড অপোজিশন ফোরাম আসাম’ নামে যে যৌথ মঞ্চটি রয়েছে, তাদের তরফেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

মঞ্চের তরফে লুরিনজ্যোতি দিসপুর থানায় ওই অভিযোগ দায়ের করেছেন।

থানায় যে নেতারা অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন আসাম থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভার সদস্য অজিত ভুইঞাও।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “নগাঁওয়ের গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ইতোমধ্যেই আসামের পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে আছে। এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন কথা, মন্তব্য বা বিধানসভার বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছে যে তিনি একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছেন। একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি এইসব অসাংবিধানিক কথা বলতে পারেন না। বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছেন। পুলিশের কাছে অভিযোগে এগুলোই জানিয়েছি আমরা। একই সঙ্গে সেখানে আমি নিজে বলেছি যে তাকে গ্রেফতার করা উচিত।”

নতুন প্রচলিত ভারতীয় ন্যায় সংহিতার তিনটি ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

বিরোধী দলগুলি বৃহস্পতিবার রাজ্যের রাজ্যপালের কাছে একটা দাবি-সনদ পেশ করে বলেছেন যে মুখ্যমন্ত্রীকে অতি দ্রুত বরখাস্ত করা উচিত। এরপরে তারা রাষ্ট্রপতির কাছেও দেখা করতে যাবেন এই ইস্যুতে।

বিরোধীদের দায়ের করা অভিযোগ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা গুয়াহাটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন যে প্রাক্তন রাজ্যপাল এসকে সিনহা যা বলেছিলেন, তিনি শুধু সেটারই পুনরাবৃত্তি করেছেন।

তার কথায়, “আসামের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈয়ের বিধানসভায় দেওয়া ভাষণের একটি অংশই আমি পুনরাবৃত্তি করেছি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুরাম মেধিও এই কথাগুলিই বলেছিলেন। আমি সেই কথাগুলির সঙ্গে বাড়তি কিছু যোগও করিনি , বদলও করিনি। তারা যদি থেকে এফআইআর দায়ের করতে চান, তাহলে সবার বিরুদ্ধেই এফআইআর করা উচিত। তাদের (বিরোধীদের) প্রতি আমরা করুণা হয়।”

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *