ছুটির অনুমোদন ছাড়াই স্কুলে অনুপস্থিত থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৩৪ জন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর (শোকজ) চিঠি দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
রোববার মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন উইংয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। শোকজের চিঠিতে সই করেছেন মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম জিয়াউল হক হেনরী।
এতে বলা হয়, জুন মাসে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমের আওতায় মাধ্যমিকের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ৩৪ জন শিক্ষককে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে উপস্থিত না থাকার সুস্পষ্ট কারণ মাউশিতে পাঠাতে হবে।
শোকজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে আছে রংপুর। এ অঞ্চলের ১০ জন শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। এরপর রাজশাহীর সাতজন, খুলনা অঞ্চলের পাঁচজন, ঢাকা অঞ্চলের চারজন, ময়মনসিংহ অঞ্চলের তিনজন, কুমিল্লা অঞ্চলের দুইজন; চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট অঞ্চলের একজন করে রয়েছেন।
মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে গত ১১ জুলাই থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। এ আন্দোলন চলার মধ্যেই রোববার এই শোকজ দেওয়া হলো।
রাজধানীতে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালনকারী শিক্ষকদের বিষয়ে অনেকটা হঠাৎ করেই হার্ড লাইনে গেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রোববার স্কুল খুললেও ক্লাসে ফিরে যাবেন না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান।
এই শিক্ষক আন্দোলনের বিষয়ে কিছু উল্লেখ না করেই গত ১৬ জুলাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাসরুমে অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা করার জন্য স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিল মাউশি। মাউশির আওতাধীন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে সকল শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে আসছেন না তাদের তালিকা করার ওই নির্দেশনা দেওয়া হয় ওইদিন। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি এবং স্থানীয় প্রশাসনকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মাউশির (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়।
মাউশির ওই চিঠিতে বলা হয়, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২৩ সাল থেকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন টিচিং-লার্নিং অ্যাপ্রোচে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন নির্ভর করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের (যেমন- প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটি/গভর্নিং বডি, শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তা) কার্যকর ও দায়িত্বশীল ভূমিকার ওপর। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটি/গভর্নিং বডি।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দৈনন্দিন শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতে শিক্ষকের এবং তা পর্যবেক্ষণে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের নিয়মিত উপস্থিতি অপরিহার্য। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কোনো কোনো শিক্ষক নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত না থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করছেন। পাশাপাশি এ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডিরও কোনোরূপ নজরদারি না থাকায় নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়া এর আগে কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়নি। ফলে এখন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাসসহ গভীর নজর দেওয়া হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের নিম্নরূপ নির্দেশনা প্রতিপালনে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো-
১. প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি সক্রিয় তদারকি করবে।
২. শিক্ষকদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান কার্যকর ভূমিকা নেবেন।
৩. কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে গৃহীত বিশেষ ব্যবস্থা কার্যকর রাখা।
৪. সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে মিথ্যা ও উসকানিমূলক প্রচারণায় অংশগ্রহণ না করা।
৫. শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
এসব নির্দেশনা পালনে কোনোরূপ ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি, প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিধি-মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সেদিন জানানো হয়েছিল।
শেয়ার করুন