জ্বালানি সংকটের জন্য বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে এতে সিলেটে এতে তেমন সুফল মিলেনি। বরং গত ২ মাসে সিলেটে বেড়েছে বিদ্যুতের ব্যবহার। সিলেটে আবাসিক খাতে পূর্বের তুলনায় বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেটের ৫টি ডিভিশনের কর্মকর্তা।
বিদ্যুৎ ব্যবহার সাশ্রয় করতে গত ১৯ জুলাই থেকে শিডিউল করে সারাদেশে লোডশেডিং কার্যক্রম শুরু করা হয়। পাশাপাশি দিনের আলোর ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন অফিস সময় এগিয়ে আনা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুইদিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এর সুফলও মিলেনি সিলেটে। কারণ সিলেটে বাসা বাড়িতে আগের চেয়ে অনেকগুণ বেশি বেড়ে গেছে বিদ্যুতের ব্যবহার।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও সিলেটে আবাসিক খাতে বেড়েছে বিদ্যুতের ব্যবহার। আইপিএস, রির্চাজেবল লাইট, ফ্যান ব্যবহারের কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়েছে বিদ্যুতের ব্যবহার। তাই সিলেটে সাশ্রয় নয়, অপচয় হচ্ছে বিদ্যুৎ। তবে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কল কারখানার কর্মঘণ্টা বদলানোর কারণে বাণিজ্যিক খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার কিছুটা কমেছে।
পাঁচ ডিভিশনে ভাগ করে সিলেট মহানগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিউবো। আম্বরখানা ও আশপাশের কয়েকটি এলাকা নিয়ে ডিভিশন-১, উপশহর ও আশপাশের কয়েকটি এলাকা নিয়ে ডিভিশন-২, দক্ষিণ সুরমা ও আশপাশের কয়েকটি এলাকা নিয়ে ডিভিশন-৩, কুমারগাঁও ও আশপাশের কয়েকটি এলাকা নিয়ে ডিভিশন-৪, বটেশ্বর ও আশপাশের কয়েকটি এলাকা নিয়ে ডিভিশন-৫।
বিউবো থেকে আবাসিক, শিল্প, বাণিজ্যিক, স্কুল-কলেজ ও মসজিদ-মন্দির, সড়কবাতি ও পানির পাম্প এই খাতগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। তবে এগুলো মধ্যে আবাসিক খাতেই গ্রাহক বেশি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গত তিন মাসের সরবরাহকৃত ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- ১ আম্বরখানায় জুন মাসে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ২৫ ইউনিট, জুলাই মাসে ২ কোটি ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ২৫৬ ইউনিট, আগস্ট মাসে ২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৭৭ ইউনিট খরচ হয়। বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- ২ উপশহরে জুন মাসে ১ কোটি ২৯ লাখ ৬ হাজার ১২৪ ইউনিট, জুলাই মাসে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৭৭ হাজার ১৩৫ ইউনিট, আগস্ট মাসে ১ কোটি ৭২ লাখ ১ হাজার ৫২৭ ইউনিট খরচ হয়। বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- ৩ দক্ষিণ সুরমায় জুন মাসে ৭১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৮৮ ইউনিট, জুলাই মাসে ৯৯ লাখ ১১ হাজার ১২৬ ইউনিট, আগস্ট মাসে ১ কোটি ১০ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৮ ইউনিট খরচ হয়। বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- ৪ কুমারগাঁওয়ে জুন মাসে ৮৫ লাখ ২১ হাজার ৪৫ ইউনিট, জুলাই মাসে ১ কোটি ১১ লাখ ২৫ হাজার ৪৫৮ ইউনিট, আগস্ট মাসে ১ কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩০ ইউনিট খরচ হয়। বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- ৫ বটেশ্বরে জুন মাসে ৬৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৫৮ ইউনিট, জুলাই মাসে ৭৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৫ ইউনিট, আগস্ট মাসে ৮৩ লাখ ৫১ হাজার ২৫৬ ইউনিট খরচ হয়।
এ ব্যাপারে বিউবো, সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই-আরেফিন বলেন, গত তিন মাস ধরে আবাসিক খাতে বিদ্যুতের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেছে। কারণ লোডশেডিং ঘোষণার পরই মানুষজন আইপিএস, চার্জিং ফ্যান, লাইট কিনতে দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এমন খবর পেয়েছি তখন দোকানগুলোতে আইপিএস, চার্জিং ফ্যানের স্টক শেষ হয়ে গেছে। তাই লোডশেডিংয়ের পরও আবাসিকে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষজনকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য বললেও তারা অপচয়ই বেশি করেছেন। কারণ আগে যার ঘরে আইপিএস বা চার্জার ফ্যান ছিল না তিনি সারাদিন বিদ্যুৎ খরচ করতেন না। কিন্তু এখন লোডশেডিংয়ের পর বিদ্যুৎ আসলেই সবাই আইপিএস, ফ্যান, লাইট সব চার্জে লাগিয়ে রাখেন। তাই বিদ্যুৎ বেশি খরচ হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিউবো ন্দভচতচভ প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, সিলেটে আবাসিকে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত আইপিএস, চার্জিং ফ্যান, লাইট এসব ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াতে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কলকারখানা, অফিস, শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের সময় বদলানোতে বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠানিক খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার কমেছে।
শেয়ার করুন