সিন্ডিকেটের কব্জায় কাউন্টারের টিকিট ,বাড়তি টাকা গুনছেন দর্শকরা

সিলেট

দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট। চায়ের বাগান ও উঁচু-নিচু টিলার মধ্যখানে রয়েছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বছরে এই স্টেডিয়াম খুব একটা খেলা পায়না। তাই তো খেলার কোনো বড় আসর ঘিরে থাকে সিলেটবাসীর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। দেশের অন্য স্টেডিয়ামগুলোর সৌন্দর্য ও গ্যালারি ফাঁকা চিত্র থাকলেও এখানে পুরোটা ভিন্ন।

বলা যায় সিলেটে যেকোনো ম্যাচ হেমিলনের বাঁশির সুরের মতো জনস্রোত তৈরি করে। জনস্রোতের এই সুযোগকে পুঁজি করছে টিকিট কালোবাজারিরা। যেখানে বিসিবির স্টাফরাও কার্ড ঝুলিয়ে পেছন থেকে নিয়ে যাচ্ছেন টিকিট। বিক্রি করছেন কালোবাজারিদের কাছে। সেখানে লাইনে দাঁড়ানো দর্শকদের হতাশা ছাড়া কিছুই থাকছে না। এমন সব দৃশ্য নিজ চোখে না দেখলে হয়তো কেউ বিশ্বাস করতে পারবেন না।

শনিবার ঘড়ির কাঁটায় তখন বাজে সকাল ১০টা। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে কাউন্টারে চলছিল বিপিএল সিলেট পর্বের দ্বিতীয় দিনের এবং ৩১ জানুয়ারির টিকিট বিক্রি। তিনটি বুথে দীর্ঘলাইন। অথচ জায়গা বদল হয়ে ঘুরে ফিরে মানুষ একই। চিন্তায় পড়ে যেতে পারেন সেটা কিভাবে। তা বলছি, তবে এর আগে জেনে নিতে হবে কেন এতো দীর্ঘলাইন। টিকিট নেই, টিকিট নেই কেন শুনতে হয়।বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসরে মোট তিনটি আলাদা ভেন্যুতে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এরমধ্যে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম পর্বে ইতোমধ্যে বিপিএলের খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন চলছে সিলেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সিলেট পর্বে যেমন দর্শকের উপস্থিত লক্ষণীয়। তেমনি বিপিএলকে ঘিরে টিকিট নিয়ে রমরমা ব্যবসা করছে কালোবাজারি।

দর্শকদের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাচ্ছেন না তারা। অথচ প্রকাশ্যেই চড়ামূল্যে টিকিট বিক্রি করছেন কিছু অসাধু নারী-পুরুষ। সেগুলো দেখছেন বিসিবির কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।

দর্শকদের কালোবাজারির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেল কিছুক্ষণ পরই। স্টেডিয়ামে প্রবেশ পথের পাশেই বিভিন্ন দলের পতাকা নিয়ে বসা ভ্রাম্যমান হকারদের পাশেই। যখন মানুষের লাইন দীর্ঘ তখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় টিকিট। পুলিশের সামনে অনেকে ডেকে ডেকে বিক্রি করছেন টিকিট। বুথে একটির বেশি টিকিট দেয়া হয়না অথচ ওদের কাছে পাওয়া যায় ইচ্ছেমতো টিকেট। শুধু গুণতে হবে চড়া মূল্য।

পরিচয় গোপন করে এক কালোবাজারির সাথে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তখন নামপ্রকাশ না করা শর্তে ওই কালোবাজারি জানালেন, একেকজনের কাছে টিকিট থাকে ৫০ থেকে ১০০টি। বৃদ্ধ মহিলাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করে কালোবাজারিরা। ঢাকা থেকে টিকিট বিক্রি করতে সিলেটে আসে বেশ কয়েকজন।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্টেডিয়ামের তিনটি বুথেরে সামনে মানুষের দীর্ঘলাইন। তবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিতে পারছেন না। এক পা এগিয়ে গেলে তিন পা পিছে যেতে হচ্ছে মহিলাদের। কারণ বৃদ্ধ মহিলারা কিছু সময় পরপর সামনে গিয়ে কাউন্টারের হাত পেতে থাকেন টাকা দিয়ে। আর পুরুষের লাইনে জটলা তো লেগেই আছে। তবে সিন্ডিকেট সদস্যই বেশি। সাধারণ যে দর্শক রয়েছেন তারা লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে বাধ্য হয়ে কালোবাজিরদের কাছ থেকে ক্রয় করছেন টিকিট।

টিকেট কিনতে আসা সাধারণ দর্শকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখক মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধকে দেখা গেছে যারা খেলার কিছুই বুঝেন না, কিংবা জানেন না এখানে কিসের খেলা! তাদের প্রশ্ন করা হলে কেউ জানান আর্জেন্টিনার খেলা আবার কেউ বলেন বাংলাদেশের। আসল কথা তো তারা টিকেট কালোবাজারি। তাদের টাকা দিয়ে এখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে টিকেট কিনে পরে তা বেশি দামে বিক্রি করার জন্য।

গোয়ালাবাজার থেকে টিকিট কিনতে আসেন আকবর আলী। তিনি বলেন, কাউন্টারে বলা হচ্ছে আজকের কোনো টিকিট নেই। অথচ কাউন্টার থেকে যখন বের হলাম, বাইরে পাওয়া যাচ্ছে টিকিট। ৩০০ টাকার টিকেট বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ টাকায়।

গোলাপগঞ্জ থেকে ছানি নামে আরেকজন জানান, ‘দুইশ টাকার টিকেট এক হাজার, বারশো টাকা চাচ্ছে। পুলিশের সামনে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ কিছুই বলছে না। শুধু আকবর আলী ও ছানির এমন অভিযোগ নয়, তা প্রায় সকলেরই।

এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দাস বলেন, আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি আমি দেখতেছি। আর টিকিটের বিষয়টি বিসিবি দেখভাল করে।

এদিকে টিকিট ইস্যু নিয়ে শুক্রবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালকও নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেছেন, টিকিট বাড়তি দামে বিক্রির কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছেন।’

তবে অভিযোগ ও ক্রীড়াপ্রেমীদের টিকিট নিয়ে হতাশার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সব রকমের আপ্যায়ন, সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে কাজ করি। তবে টিকিটের ব্যাপারটি নিয়ে আমাকে দু’হাত তুলে (আত্মসমর্পন) দিতে হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *