সিরিজ বোমা হামলাকারী থেকে টেলিভিশনের ভিডিও এডিটর

জাতীয়

দীর্ঘ ১৮ বছরের পলাতক জীবন শেষে অবশেষে ধরা পড়লেন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি তুহিন রেজা। পলাতক জীবনের এই পর্যায়ে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ভিডিও এডিটিংসহ সফটওয়্যারভিত্তিক বিভিন্ন কাজ করতেন।

শুক্রবার (২৩ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) রাতে রাজধানীর তেজগাঁও রেলগেইট এলাকা থেকে জঙ্গি তুহিনকে গ্রেপ্তার করার পর শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানায় রাব।

তুহিন রেজা ২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলা মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশের মতই ঝিনাইদহ জেলার ডিসি অফিস, জজ কোর্ট ও পায়রা বন্দরসহ কয়েকটি স্থানে একযোগে বোমা হামলা হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্যরা এক যোগে এই হামলা করে। তুহিন রেজা জেএমবি সদস্য। সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত তুহিন রেজাকে যাবজ্জীবন সাজা দেন আদালত।

এ র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, ২০০৫ সালে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ঝিনাইদহ সদর থানায় অজ্ঞাতনামা জড়িতদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটির তদন্তে হামলার সঙ্গে জেএমবির সদস্যরা জড়িত প্রমাণিত হয়। ঝিনাইদহে হামলার সঙ্গে মোট ২১ জন জড়িত উল্লেখ করে ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

তিনি আরও জানান, মামলাটির বিচার শেষে অভিযুক্ত ২১ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয় আদালতে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত অভিযুক্ত ২১ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। কিন্তু আসামিরা মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। পরে ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উচ্চ আদালত ২১ জনের মধ্যে ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেন। এছাড়া বাক ৭ জনকে খালাস দেন উচ্চ আদালত।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আদালতের রায়ের পর সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা চালানো শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে সাজাপ্রাপ্ত ১৪ জন আসামির মধ্যে ১২ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি পলাতক দুই আসামির মধ্যে জঙ্গি তুহিন একজন। দীর্ঘ গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে জঙ্গি তুহিনকে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) তেজগাঁও রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার জঙ্গি তুহিনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, ২০০৪ সালে জেএমবি’র ঝিনাইদহ সদর শাখায় সদস্য হিসেবে যোগদান করে তুহিন। যোগদানের পর থেকে সে এই শাখার লিফলেট তৈরি, লিখিত প্রচার-প্রচারণার সম্পাদনা, গোপন ও নাশকতামূলক খবর আদান-প্রদান করতেন। এছাড়া বিভিন্ন ভিডিও এডিটিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা বিভ্রান্তিমূলক প্রামাণ্যচিত্র দিয়ে তরুণদের পথভ্রষ্ট করতেন।

তিনি বলেন, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের হামলাকে কেন্দ্র করে পূর্ববর্তী দীর্ঘ সময় ধরে তারা হামলার নীলনকশা সাজায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭ আগস্ট ভোর থেকে অন্যান্য হামলাকারীদের সঙ্গে তুহিন আদালত চত্বরের আশেপাশে অবস্থান নেয় এবং হামলার সময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এলোপাতাড়ি বোমা হামলার পর তারা বিভিন্ন দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তুহিন বোমা হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে এসে ঝিনাইদহ সদরে জঙ্গি ক্যাম্পে কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকেন। এরপর এ ঘটনায় মামলা হলে এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে জঙ্গি তুহিন ঝিনাইদহ থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। তিনি প্রথমে যাত্রাবাড়ী পরবর্তীতে খিলগাঁও, উত্তরা, মহাখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থান পরিবর্তন করে বসবাস করেন। গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন সময় বাসা পরিবর্তন করে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকতেন তিনি। ২০২১ সাল থেকে তেজগাঁও এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন তুহিন এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পলাতক অবস্থায় তুহিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভিডিও এডিটিংসহ বিভিন্ন সফটওয়্যারভিত্তিক কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন তুহিন।

আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এ র‌্যাব কর্মকর্তা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *