সিরিজ লোডশেডিংয়ে নাকাল সিলেট

সিলেট

বর্ষা মওসুমে সিরিজ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে সিলেট। ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিংয়ে নাকাল নগরবাসী। সহসা এই পরিস্থিতি থেকে উন্নতি মিলছেনা বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। হঠাৎ করে এক সাথে বিবিয়ানা ও আদানি’র বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুধু সিলেট নয়, পুরো দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে শুধু নগর নয়, পুরো সিলেট বিভাগজুড়ে চলছে সিরিজ লোডশেডিং। এমন অবস্থান কমপক্ষে ২ থেকে ৩ দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বিপিডিবি সিলেট কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার বিকেল থেকে সিলেটজুড়ে শুরু হয় লোডশেডিং। সন্ধ্যার পর থেকে বাড়তে থাকে লোডশেডিংয়ের মাত্র যা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। প্রথমে ২ ঘন্টা পর ১ ঘন্টা লোডশেডিং শুরু হয়। রাত ১০টার পর থেকে ১ ঘন্টা পরপর চলে লোডশেডিং। মধ্যরাত থেকে শুরু করে ভোররাতেও লোডশেডিং বিড়ম্বনা ভোগ করতে হয়েছে নগরবাসীকে। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে সিলেটের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

সোমবার সকাল থেকে ফের বাড়তে থাকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা। দিনের বেলায় প্রতি ১ ঘন্টা পর পর বিদ্যুৎ না থাকায় সীমাহিন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। অফিস আদালত, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পড়েন বিপাকে। দিনের বেলায় মাঝারি বৃষ্টি হওয়া কিছুটা রক্ষা হলেও দৈনন্দিন কাজ সারতে বিপাকে পড়তে হয়েছে জনসাধারণকে। বিশেষ করে বাসা-বাড়ী ও ফ্ল্যাটে থাকা বাসিন্দারা পড়েন পানি সমস্যায়। কারণ পানির ট্যাংকি লোড হওয়ার আগেই লোডশেডিং শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েন তারা। একই পরিস্থিতিতে সিসিকের পানি শাখা। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে চাহিদার ৪ ভাগের ১ ভাগ পানিও সরবরাহ করতে পারছেনা সিসিক।

জানা গেছে, নগর এলাকায় ১ ঘন্টা পর পর বিদ্যুৎ থাকলেও জেলা উপজেলা ও গ্রামীণ জনপদে বিদ্যুতের দেখা মিলছেনা বললেই চলে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) গ্রাহকরা দিন-রাতে মিলে অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ পেলেও পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকগণ সীমাহিন দুর্ভোগে পড়েছেন। দিনে রাতে গড়ে ৬-৮ ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের।
সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার গ্রামীণ জনপদে দিনে রাতে গড়ে ৬ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেক গ্রাহক। তারা জানান, জেলা শহরে গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও উপজেলা ও গ্রামীণ জনপদে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভয়াবহ। টানা লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদনে ধ্বস নেমেছে বলে অভিযোগ করেন অনেকে। সুনামগঞ্জের বিভিন্ন বাজার এলাকায় স্থাপিত রাইস মিলে টানা লোডশেডিংয়ের কারণে চাল উৎপাদন বন্ধ হতে চলেছে। মিলগুলো চাহিদার অর্ধেক চাল সরবরাহ করতে পারছেনা বলেও অভিযোগ মিল মালিকদের।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, হঠাৎ করে কারিগরি ত্রুটির কারণে বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়া ও জালানাী সঙ্কটের কারণে আদানি’র উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় দেশজুড়ে লোডশেডিং বেড়েছে। সিলেট বিভাগে চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বিবিয়ানার ত্রুটি সারতে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের ডাকা হয়েছে। এছাড়া আদানির উৎপাদন চালু করতে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে আরো ২/৩ দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল কাদির জানান, বিবিয়ান ও আদানি’র বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের কারণে সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও লোডশেডিং বেড়েছে। সিলেটে দিনের বেলায় চাহিদার ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি সরবরাহ করা হয়। তাই ৪৫ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে। সন্ধ্যায় সিলেট বিভাগে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ আসে ৩৩০ মেগাওয়াট। পরবর্তীতে বিশেষ অনুরোধে আরো ৫০ মেগাওয়াট বাড়ানো হয়। সবমিলিয়ে সন্ধ্যায় সিলেট বিভাগে ৩৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। সহসা বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতির তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে ২/৩ দিন পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়তে পারে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *