গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নে মোঘল স্থাপত্যের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ‘দেওয়ানের পুল’ ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। রাস্তা সংস্কার ও রোড বড় করার কথা বলে ঐতিহ্যের এই স্মারক পুলটি ভাঙ্গা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম জানান, বিগত কয়েক শতাব্দী থেকেগোলাপগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে ছিল এই দেওয়ানের পুল। উপজেলার বারকোট গ্রামের শেষ সীমানায় প্রায় দুইশত বৎসর পূর্বে পুলটি নির্মিত হয়েছিল।
পর্যটন উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা- সিলেট ট্যুরিস্ট গাইড গ্রুপ- এসটিজি এর পরিচালক সাংবাদিক আনোয়ার হোসাইন বলেন, গোলাপগঞ্জের “দেওয়ানের পুল” বিগত কমপক্ষে আড়াই শত বছরের ঐতিহ্যের একটি স্মারক। উন্নয়নের নামে এটি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে শুনে খুবই কষ্ট পেলাম। এটি কে সুরক্ষা বা সংরক্ষণ করা যেখানে দায়িত্ব, সেখানে ভাঙ্গা হবে কেন?
রেকড সুত্রে জানা যায়, মুঘল শাসনামলে সম্রাট মুহম্মদ শাহ এর রাজত্বকালে অল্পকালের জন্য সিলেটের দেওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা) নিযুক্ত হয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে সিলেট আসেন দেওয়ান গোলাব রাম (মতান্তরে গোলাব রায়)। এ সময় সিলেট অঞ্চলের ফৌজদার ছিলেন সমসের খান এবং সারা বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন সুজা উদ্দিন খান।
দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এই ধর্মপ্রাণ দেওয়ান গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণে বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমি সম্পর্কে অবগত হন। দেওয়ানের নির্দেশে তৎসময়ে সিলেট থেকে ঢাকাদক্ষিণ পর্যন্ত সড়ক ও সেতু নির্মিত হয়। এ সড়ক পথে ঢাকাদক্ষিণ এসে দেওয়ান শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমিতে এক মন্দির স্থাপন করেন, এর সামনে এক দীঘি খনন করান । হেতিমগঞ্জ থেকে ঢাকাদক্ষিণ গামী সড়কটি আজো দেওয়ানের সড়ক নামে পরিচিত। এ সড়কের উক্ত দেওয়ানের পুলটি গোলাপগঞ্জ বাসীর নিকট মোঘল স্থাপত্য রীতির একটি নিদর্শন হিসাবে বিবেচিত ছিল। প্রাচীন দলিল দস্তাবেজ ও রেকর্ডপত্রে তারই সাক্ষ্য বহন করছে।
কিন্তু, গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নে মোঘল স্থাপত্যের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এই ‘দেওয়ানের পুল’ ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। রাস্তা সংস্কার ও রোড বড় করার কথা বলে ঐতিহ্যের এই স্মারক পুলটি ভাঙ্গা হচ্ছে। এতে সর্ব মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। খবরঃ একে নিউজ
শেয়ার করুন