সিলেটের জেলা প্রশাসককে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ

সিলেট

সিলেটের জেলা প্রশাসককে তার কার্যালয়ের সামনে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেছেন সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে। এরপর জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান নিজ কার্যালয় ছেড়ে চলে যান।

রোববার বেলা ২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী সিরাজ মিয়া এক ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। সেলিনা বেগম নামের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদের আরেক প্রার্থীও পরাজিত হন। ফলাফল ঘোষণার পর এই দুজন নির্বাচনে অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ আনেন।

রোববার দুপুরে তাদের দুজনের পক্ষে এলাকার শতাধিক বাসিন্দা নির্বাচনের ফলাফলে প্রতারণার অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিতে তার কার্যালয়ে আসেন। এসময় জেলা প্রশাসক প্রথমে স্মারকলিপি গ্রহণ করতে চান নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা জেলা প্রশাসেকর কার্যালেয়র সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় জেলা প্রশাসক গাড়িতে চড়ে কার্যালয়ের বাইরে যেতে চাইলে তার গাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে জেলা প্রশাসককে মুক্ত করেন।

পরে এই দুই পরাজিত প্রার্থীকে নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে আজবাহার আলী শেখ ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এসময় পরাজিত প্রার্থীদের স্মারকলিপি গ্রহণ করে বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তারা।

জেলা প্রশাসক প্রথমে স্মারকলিপি গ্রহণ করতে চাননি অভিযোগ করে সিরাজ মিয়া বলেন, ভোটে আমাদের পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছে। এই অভিযোগ দিতে এলাকার ভোটাররা এখানে এসেছিলো। কিন্তু জেলা প্রশাসক স্মারকলিপি নিতে না চাওয়ায় তারা কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।

এ ব্যাপারে এসএমপি’র উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন- জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে কিছু লোক হট্টগোল করছে শুনে আমরা এখানে আসি। পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে শান্ত করে। এরপর জেলা প্রশাসকের গাড়ি স্থান ত্যাগ করে।

তিনি বলেন, এরপর ওই দুই প্রার্থীকে নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক হয়। আমরা তাদের স্মারকলিপিটি গ্রহণ করে অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছি।

জেলা প্রশাসক বরাবারে দেয়া স্মারকলিপিতে মেম্বার প্রার্থী সিরাজ মিয়া ও সেলিনা বেগমের সমর্থকরা উল্লেখ করেন- টুকেরবাজার ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসায় শুরু থেকেই অনিয়ম দেখা যায়। ভোটগ্রহণ সকাল ৮টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সকাল ৯টায় শুরু করা হয়। প্রিজাইডিং অফিসার আম্বরখানা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক মো. রেজাউর রহমান যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু করতে দেরি করেন। এটি ষড়যন্ত্রের অংশ।

স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই প্রিজাইডিং অফিসার ফলাফল শিটে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য পোলিং এজেন্টদের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। এজেন্টরা এভাবে স্বাক্ষর দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এছাড়া প্রিজাইডিং অফিসার ফুটবল মার্কার সকল পোলিং এজেন্টকে জোরপূর্বক ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ১ ঘন্টা আগেই বের করে দেন।

নানা অনিয়মের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শেষে প্রিজাইডিং অফিসার মৌখিকভাবে প্রথমে ফুটবল মার্কার প্রার্থীকে ৭ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষণা দিলেও তার স্বাক্ষরিত ফলাফল শিটে দেখা যায়- টিউওবয়েল মার্কার প্রার্থী ১ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এটি প্রতারণার মাধ্যমে করা হয়েছে। প্রতারণামূলক এই ফলাফল শিটে অনেক প্রার্থীর এজেন্টরা স্বাক্ষর করেননি। এ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার সম্পূর্ণ পক্ষপাতমূলকভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ফলাফল ঘোষণা করেছেন।

স্মারকলিপিতে সেই ফলাফল বাতিল করে টুকেরবাজার ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *