অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেট। দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ প্রকৃতি কন্যা সিলেটে প্রতি বছরই ঈদে ঢল নামে পর্যটকদের। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। শুধু সিলেট জেলা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পূণ্যভূমিতে আগমন ঘটে হাজারো ভ্রমণ পিপাসুর। দর্শনার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো। কিন্তু এ বছর সিলেটের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। গত ঈদ উল ফিতরে পর্যটকদের ঢল নামলেও ঈদ উল আজহায় পর্যটকদের পদচারণা ঘটেনি পর্যটন স্পটগুলোতে।
টানা দু-দফা বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট। মূলত বন্যার প্রভাবেই এমন পর্যটকশূন্যতা তার উপরে বইছে মৃদু তাপপ্রবাহ। তাই ঈদে দর্শনার্থীদের তেমন দেখা মেলেনি এসব স্থানসমূহে। এতে বড় ধাক্কা খেয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
বিগত দুই বছরের মহামারী করোনার ধাক্কার পর ঈদ উল ফিতরে পর্যটকদের আনাগোনায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যে আবারো হোঁচট খেয়েছেন তারা। প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
জানা গেছে, সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লালাখাল, মালিনীছড়া, লাক্কাতুড়া চা-বাগান, গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, পান্থুমাই, কানাইঘাটের লোভাছড়া পাথর কোয়ারী ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথরসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতি বছরই ঢল নামে পর্যটকদের। এবার বন্যার প্রভাবে সিলেটমুখী হননি পর্যটকরা। ঈদের দিন থেকে এসব দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকার কথা থাকলেও প্রায় পর্যটক শুন্য ছিল দর্শনীয় স্থান সমূহ। পর্যটকদের উপস্থিতি কম থাকায় ঈদের আমেজ দেখা যায়নি সিলেটে।
কথা হয় সাদা পাথর ঘুরতে আসা পর্যটক নাছিম আহমদের সাথে। তিনি বলেন, গত ঈদে এখানে বন্ধুদের সাথে এসেছিলাম তখন দর্শনার্থীদের পদচারণায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এবার পরিবারের লোকজন নিয়ে এসেছি কিন্তু একেবারেই ফাঁকা দেখা যাচ্ছে সাদা পাথর এলাকা।
গোয়াইনঘাটের স্থানীয় সংবাদকর্মী মিনহাজ মির্জা জানিয়েছেন, গোয়াইনঘাটে প্রতি বছরই বিভিন্ন সময় পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকতো। কিন্তু এ বছর বন্যার প্রভাবে তেমন পর্যটক নেই বলে তিনি জানান।
এদিকে শুধু সিলেট জেলা নয়, জেলার বাইরে সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান, শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি লেক), টাঙ্গুয়ার হাওর, হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা বাগান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল নয়ন ভিরাম চা বাগান, গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট, লেমন গার্টেন, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, রাবারবাগান, কমলগঞ্জের নয়নাভিরাম হামহ াম জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বড়লেখার মাধকুণ্ড জলপ্রপাতসহ প্রাকৃতিক অনেক সুন্দর জায়গা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। কিন্তু সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার প্রভাবে এসব দর্শনীয় স্থানসমূহেও একই চিত্র দেখা যায়। পর্যটক না থাকায় চিরচেনা রূপ দেখা যায়নি এসব দর্শনীয় স্থানে।
অপরদিকে পর্যটক না আসায় সিলেটের হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীদের মধ্যেও হতাশা কাজ করছে। এছাড়াও রেস্টুরেন্ট ও পরিবহন ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন শঙ্কার মধ্যে। গত ঈদ উল ফিতরের সময় দম ফেরানোর ফুসরত না থাকলেও এবার অলস সময় কাটছে সংশ্লিষ্টদের। সিলেট হোটেল মোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস অনার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সূত্রে সিলেটে প্রায় ৫ শতাধিক হোটেল মোটেল রয়েছে। প্রতিবছর পর্যটকদের আনঘোনায় পূর্ণ থাকলেও এবার ভিন্ন চিত্র। লোকসান গুণতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খেতে হবে বলে ধারণা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
শেয়ার করুন