সিলেটের মামুন চৌধুরী: একাধিক পরিচয়ে বিভ্রান্তিকর এক চরিত্র, ছাত্রলীগের ক্যাডার থেকে এখন তিনি স্যার

সিলেট

মামুন আহমদ, যিনি “ছেছরা মামুন” নামেও পরিচিত, নিজেকে “স্যার” হিসেবে পরিচয় দেন। কিন্তু তার পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিল অপহরণকারী ও চাঁদাবাজ হিসেবে। নিজের কু-কর্মগুলো আড়াল করতে তিনি মা-মনি কিন্ডার গার্ডেনের শিক্ষক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং নামের পাশে “স্যার” উপাধি যুক্ত করেন। এরপর তিনি নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন এবং “মামুন চৌধুরী স্যার” নামে পরিচিত হন। তবে, তার এই “স্যার” উপাধির কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা বা ভিত্তি নেই।

তার জীবনযাত্রা ও কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে তিনি একজন চতুর ও অসৎ ব্যক্তি, যিনি নিজের ব্যক্তিগত লাভের জন্য সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ান। নানা ভূমিকায় নিজেকে উপস্থাপন করে, তিনি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করেছেন, কিন্তু তার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দালালি ও চাটুকারিতার মাধ্যমে তিনি নিজের অবস্থান তৈরি করেন। ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল খুলে সাংবাদিকতার নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতে শুরু করেন। তার অতীত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ইতিহাস বেশ ঘোলাটে। তিনি চাঁদাবাজি ও অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছেন।

জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মামুন চৌধুরী ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল “আধুনিক টিভি” চালু করেন এবং নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে নিজেকে সিলেট সিটি অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং সিলেট সিটিজেন জার্নালিজম ইউনিয়নের সেক্রেটারি হিসেবেও পরিচয় দেন।

এছাড়াও, তার নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

বিগত দিনে তার অপকর্ম দেশের কয়েকটি জাতীয় পত্রিকা ও স্থানীয় অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়, যা তার অপরাধী কর্মকাণ্ডের বহিঃপ্রকাশ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, মামুন চৌধুরী ও তার সহযোগীরা সাংবাদিকতার পরিচয়ে লুটপাট, ছিনতাই, চিনি চোরাচালান, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির মত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বর্তমানে তিনি কখনো জামায়াত আবার কখনো বিএনপির কর্মী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন। তার এই চতুরতা ও ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় দিয়ে তিনি সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলেছেন। তার উদ্দেশ্য ছিলো রাজনীতির মঞ্চে নিজের স্থান প্রতিষ্ঠা করা এবং সুবিধা লাভ করা, তবে তার প্রতারণা ও দুর্নীতির কারণে সাধারণ জনগণ এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে তার গ্রহণযোগ্যতা চরমভাবে কমে গেছে।

এছাড়া, তার একাধিক বিভ্রান্তিকর পরিচয়ের কারণে অনেকেই তাকে “ভেদভেদা টিভির সাংবাদিক” বলে ব্যঙ্গ করেন, যা তার একাধিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতি প্রতিক্রিয়া হিসেবেও গণ্য করা যায়। এটি তার রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অসততার প্রমাণ, যা সমাজে একধরনের হতাশা সৃষ্টি করে এবং জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক অসন্তোষ বৃদ্ধি করে।

এমন একজন ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে তার অপরাধী কর্মকাণ্ডের বিচার করা প্রয়োজন, যাতে সমাজে তার মতো অপরাধীরা অপকর্ম করতে না পারে এবং সাধারণ মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে। মামুন চৌধুরী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, এবং তাদের অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত, যাতে সমাজে আইনের শাসন বজায় থাকে এবং অপরাধী ব্যক্তিরা শিক্ষা পায়।

তারা যেহেতু রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেদের স্বার্থের জন্য অপরাধী ব্যক্তিদের আশ্রয় দিচ্ছে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে সুষ্ঠু আইনি পদক্ষেপের আওতায় এনে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সমাজের উন্নয়ন, জনগণের সেবা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, যা এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সম্ভব।

তার বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অভিযোগসমূহ:

1. অপহরণ ও চাঁদাবাজি
2. নারী নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইল
3. প্রবাসীর স্ত্রীর বাড়িতে চাঁদাবাজি
4. ভুয়া পরিচয়ে ধোঁকাবাজি
5. মিথ্যা অপপ্রচার ও হয়রানি
6. রাজনৈতিক সুবিধাবাদ

© সুরমার ডাক

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *