সিলেটের লোডশেডিং ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রণ!

সিলেট

স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটজুড়ে বইছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় গরমে অতিষ্ট জনজীবন। সোমবার দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয় সিলেটে। এরমাঝে ক্রমশ: অবনতির দিকে যাচ্ছে সিলেটের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি। প্রতিদিনই বাড়ছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ ‘এই আসে এই যায়’। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেটের মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের কিছুই করার নেই। ক’দিন ধরে রাজধানী ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে সিলেটের লোডশেডিং!

ঢাকা থেকে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) হতে সিলেটের জাতীয় গ্রিড লাইনের সাবস্টেশনের সুইচ অফ করে দেয়ার কারণে সিলেটে একদিকে বাড়ছে লোডশেডিং, অপরদিকে হচ্ছেনা সমন্বয়। ফলে একই এলাকা যেমন বার বার লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছে অপরদিকে কিছু এলাকায় কমছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা। অতীতে এভাবে ঢাকা থেকে সিলেটে লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ হয়নি। এবার নতুন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের কর্মকর্তারা। সিলেটকে না জানিয়ে ঢাকা থেকে সিলেটের সাবস্টশেনগুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ এভাবে হুটহাট বন্ধ না করার জন্য সিলেটের বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে এনএলডিসিকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

সিলেটে দিন দিন লোডশেডিং বাড়ার কারণে জনমনে রীতিমত ক্ষোভ বিরাজ করছে। ব্যবসা বাণিজ্যে ধ্বস নেমেছে। খোদ নগরীতে টানা ২ থেকে ৩ ঘন্টাও থাকছেনা বিদ্যুৎ। এলাকা ভেদে দিনে রাতে গড়ে ১১ থেকে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ নামমাত্র একটা শিডিউল প্রকাশ করলেও লোডশেডিংয়ে ক্ষেত্রে এর কিছুই মানা হচ্ছেনা। নগরীতে গড়ে ১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকলেও শহরতলী এবং সিলেটের বিভিন্ন জেলা উপজেলার বিদ্যুতের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেসব এলাকায় বিদ্যুৎ এই আসে এই যায়।

এদিকে টানা কয়েকদিনের তাপপ্রবাহের কারণে তীব্র গরম আর ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংয়ের ফলে বাড়ছে অসুস্থতা। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন অসুস্থ, বয়স্ক এবং শিশুরা। বিদ্যুৎ চলে গেলে বাসা বাড়ীতে ঘরে থাকতে পারছেনা কেউ। লোডশেডিংয়ের সময় অনেক পরিবারের সদস্যদেরকে বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে বাসার বাইরে অবস্থান করতে দেখা গেছে। ঘরে ঘরে চলছে হাতপাখা। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের ভেলকীবাজিতে সীমাহিন দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেটের লাখো বিদ্যুৎ গ্রাহক।

রোববার সিলেট নগরী সহ বিভাগের প্রায় সকল জেলায় তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করে। এরমধ্যে রোববার দিন থেকেই শুরু হয়ে বিরতিহীন লোডশেডিং। রোববার দিনের পর রাতেও শুরু হয় ভয়ঙ্কর লোডশেডিং। সন্ধ্যার পর থেকে কখনো ১ ঘন্টা কখনো ৩০ মিনিট পরপর লোডশেডিং করা হয়। রাত ১২টার দিকে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত শুরু হলে টানা কয়েকঘন্টা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে নগরীর বিশাল এলাকা। এছাড়া মধ্যরাতের পরও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করা হয়েছে। অনেক এলাকায় সকাল অবধি বিদ্যুৎ ছিলনা। এতে অসুস্থ, বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। অনেকেই নির্ঘুম রাত জেগে তাদের হাতপাখার বাতাস করে নিজেদেরকে গরম দূর করার চেষ্টা করেছেন। রোববার রাত ১২ টা থেকে সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না প্রায় পুরো সিলেটে। এরপর বিদ্যুৎ আসলেও সেই ‘সুখ’ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দুই ঘণ্টা পর আবার শুরু হয় লোডশেডিং। দিনের বেলাতেও কিছুক্ষণ পরপর ছিল যাওয়া আসা করছে। সব মিলিয়ে রোববার ১২/১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল সিলেট।

সিলেটে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের আশঙ্কাজনক তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়। সিলেটের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রোববারের লোডশেডিং সিলেটের বিতরণ কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার- এনএলডিসি থেকেই সিলেটের জাতীয় গ্রিড লাইনের সাবস্টেশনের সুইচ অফ করে দেয়া হয়। ফলে এই গ্রিড সাব স্টেশনের আওতাধীন সিলেট ও সুনামগঞ্জের গ্রাহকরা দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন ছিলেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুতের গ্রিডকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করে থাকে এনএলডিসি। দেশের সব বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিতরণ ও গ্রিড উপকেন্দ্র এবং ট্রান্সফরমারের নিয়ন্ত্রণ থাকে এই সংস্থার কাছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সিলেট বিভাগীয় অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মো. জারজিসুর রহমান রনি দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে সমন্বয়হীনতা দেখা দিলে এবং ফ্রিকোয়েন্সি কমে গেলে এনএলডিসি অনেক সাব স্টেশনের সুইচ অফ করে দেয়া হয়। তা না হলে পুরো দেশই ব্ল্যাক আউটে চলে যাবে। রোববার সারাদিনে এনএলডিসি থেকে ৭/৮ বার সিলেটের গ্রিড লাইন উপকেন্দ্রের সুইচ বন্ধ করে দিয়েছে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্তও সুইচ বন্ধ ছিল। ফলে পুরো সিলেটই বিদ্যুৎহীন ছিল।
তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১০০ মেগাওয়াট। চাহিদার অর্ধেক থেকে কিছু বেশী সরবরাহ হলে লোডশেডিং কমানোর কোন সুযোগ নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোববার সিলেটে উৎপাদন ও সরবরাহে কোন সমন্বয় ছিলনা। রোববার ঢাকায় লোড বেশি টানায় সিলেটে লোডশেডিং বেশী হয়েছে। ঢাকায় লোড বেশি টানার কারণে সিলেটের গ্রিড লাইনের সুইচ অফ করে দেয়া হয়। ফলে বিপাকে পড়তে হয় সিলেটের বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের। এমন সমস্যা দেখা দিলে সাধারণ গ্রাম এলাকার সাব স্টেশনের সুইচ অফ করে দেয়া হয়। কিন্তু সচরাচর শহরেরটা করা হয় না। কারণ, শহরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকে। এগুলোতে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকলে সমস্যা। সিলেটের সাবস্টশেনগুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ এভাবে হুটহাট বন্ধ না করার জন্য সিলেটের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এনএলডিসিকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিম বলেন, যখনই ন্যাশনাল গ্রিডে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় তখনই এনএলডিসি থেকে নগরীর শেখঘাট, উপশহর ও বরইকান্দি সাব স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে লোডশেডিং ছাড়া সিলেট নগরী বিদ্যুৎহীন হয়ে পরে। তখন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *