সিলেটের সেই রাজ্জাক আফগানিস্তানে নয়, পার্বত্য এলাকায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণে!

সিলেট

বন্ধুর বাসায় যাওয়ার কথা বলে ‘হিজরতের’ নামে সিলেট থেকে  ঘর ছাড়া আরেক তরুণের সন্ধান পাওয়া গেছে দুর্গম পাহাড়ে। তাঁর নাম আবদুর রাজ্জাক খান । নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারক্বীয়া (যার বাংলা অর্থ পূর্ববর্তী হিন্দের সাহায্যকারী দল) যোগ দিয়ে ওই তরুণ পার্বত্য এলাকার দুর্গম অঞ্চলে পাহাড়ি বিচ্ছিন্ন সংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

তবে রাজ্জাক নিখোঁজের পর জঙ্গি দমনে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র কয়েকটি গণমাধ্যমকে বলেছিল, তালেবানের হয়ে যুদ্ধ করতে আফগানিস্তানে গেছেন তিনি।

সিলেট নগরের লামাবাজার এলাকায় ভাইয়ের বাসায় থাকতেন ২০ বছর বয়সী আবদুর রাজ্জাক। তিনি ওই এলাকারই মদন মোহন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। ‘বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছি, দুদিন পর ফিরে আসব’—বড় ভাই সালমান খানকে এ কথা বলে রাজ্জাক হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যান গত ২৫ মার্চ। গত ১ এপ্রিল সিলেটের কোতোয়ালি থানায় নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন রাজ্জাকের বড় ভাই।

রাজ্জাকদের আদি বাড়ি কুমিল্লার দক্ষিণ থানায়। তবে ছোটবেলা থেকেই সিলেটে ভাইয়ের বাসায় থেকে পড়ালেখা করতেন তিনি। ভাই নিখোঁজ প্রসঙ্গে সালমান খান বলেন, ‘নিখোঁজের পর একবার কথা হয়েছিল। বন্ধুদের সঙ্গে আফগানিস্তানে গেছে বলে আমাকে বলেছিল। পরে প্রশাসনের মাধ্যমে জেনেছিলাম আফগানিস্তানে চলে গেছে।’

নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা থেকে আট কলেজছাত্র নিখোঁজ হন। কিছুদিন পরর তাঁদের একজন ফিরে এলে এই তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ‘হিজরতের’ নামে ঘর ছাড়ার বিষয়টি জানাজানি হয়। এর কদিন পর কুমিল্লা শহরের কুবা মসজিদের ইমাম শাহ মো. হাবিবুল্লাহ আত্মগোপনে চলে যান। এরপর ৫ অক্টোবর সাতজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাঁদের মধ্যে কুমিল্লার দুজনসহ নিখোঁজ চার তরুণ ছিলেন। বাকি তিনজন জঙ্গি সংগঠক ও আশ্রয়দাতা।

র‍্যাবের জঙ্গিবিরোধী ধারাবাহিক অভিযানে ৯ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া তরুণদের মধ্যে আরও তিনজনকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের রাকিব হাসনাত ওরফে সুমন (২৮), পটুয়াখালীর কুয়াকাটার মো. হোসাইন (২২) ও নোয়াখালীর মো. সাইফুল ইসলাম। একই সঙ্গে তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণে যুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন শাহ মো. হাবিবুল্লাহ হাবিব (৩২) ও নেয়ামত উল্লাহ (৪৩)।

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া দুর্গম পাহাড়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ক্যাম্পে প্রশিক্ষণশিবির স্থাপন করেছে বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১০ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে কথিত হিজরতের নামে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া ৩৮ জনের তালিকা দেয়। এরপর পাহাড়ে অভিযান চালানোর কথা জানায় র‌্যাব।

জঙ্গিদের খোঁজে পাহাড়ে ‘সমন্বিত’ অভিযানে ‘বেশ অগ্রগতি’ হয়েছে বলে গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, হিজরতের নামে যাঁরা বাসা থেকে বের হয়েছেন, তাঁদের যাঁরা উদ্বুদ্ধ করেছেন, যাঁরা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা জানতে পেরেছি, নিরুদ্দেশ ৫৫ জঙ্গি পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ও অবস্থান করছে। তাদের ৩৮ জনের একটি তালিকা ইতিমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। এরপরই পার্বত্য এলাকায় আমরা অভিযান শুরু করেছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *