সিলেটে অপরাধে জড়াচ্ছে ভাসমান-ভবঘুরে মানুষ

জাতীয় সিলেট

সিলেটে ভাসমান ও ভবঘুরে মানুষ অতিমাত্রায় অপরাধে জড়াচ্ছে, যা ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে এসেছে। ফুটপাত, ফ্লাইওভার, বাস টার্মিনাল কিংবা রেলস্টেশন ও মাজারে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমূল বা ভাসমান মানুষরা রাত বাড়লে ভয়ংকর হয়ে উঠছে। এদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। মাদক কেনার জন্য যেকোনো অপরাধ সংঘটিত করতে দ্বিধা করে না তারা। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ছে এসব অপরাধী চক্র। অনেকে আবার খুন পর্যন্ত করছে। ফলে ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে রাতের নগরী।

সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে। একটি হত্যাকাণ্ড ঘটলেই নড়েচড়ে বসছে সংস্থাগুলো। গত জুলাই মাসের ২৫ তারিখ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। বুলবুলের কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করতেই ছুরি মারে যুবকরা। তাদের দুই জনের বয়স ১৯ বছর এবং একজনের বয়স ২৯ বছর। এছাড়া প্রতিদিন নগরের বন্দরবাজার এলাকায় ভাসমান কিশোরদের হাতে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন নারীসহ পথচারীরা। ভিড়ের মধ্যে পথচারীদের হাতে থাকা ব্যাগ লুট করে ছিনতাইকারীরা। ভুক্তভোগীরা খুব কম সময়ই এসব ছিনতাইকারী শনাক্ত করতে পারেন। এতে প্রায় নির্বিঘ্নে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ হাতেনাতে ধরা পড়লেও তাদেরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ না করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে এসব ভাসমান অপরাধী চক্রের সদস্যরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

নগরের বিভিন্ন সড়কের ফুটপাতে দেখা গেছে ছিন্নমূল বা ভাসমান মানুষের অবস্থান। এদের অনেকেই দিনের বেলা মরার মতো পড়ে ঘুমায়। গতকালও বন্দরবাজার, তালতলা, সার্কিট হাউজ, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, শাহজালালের মাজারসহ বিভিন্ন সড়কে এদের দেখা গেছে। মূলত সন্ধ্যা নামার পর এদের উপস্থিতি বাড়ে। ফুটপাতে কাপড় বিছিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয় এরা। ভাসমান মানুষ বসবাস করা এলাকায় সবধরনের অপরাধ বেশি ঘটছে। তারা শারীরিক হেনস্তা, ছিনতাইসহ নানা কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন। এদিকে ভাসমান এসব মানুষের কোন স্থানীয় ঠিকানা না থাকায় তদন্তে বেগ পেতে হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে।

পুলিশের ভাষ্য, ছিন্নমূল মানুষের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। কিছুদিন আগে ফুটপাতসহ বিভিন্ন স্থাপনার খোলা জায়গায় রাত যাপন করা মাদকাসক্তদের উচ্ছেদ করা হয়েছিলো। এরা ফের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে কেউ অপরাধ করলে তাৎক্ষণিক ছুঁঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, সমাজে যতো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তার মূল কারণ মাদকাসক্তি। ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যা, কিশোর গ্যাং. ইভটিজিং, চুরি, ছিনতাই এ সবকিছুর পেছনে মাদকাসক্তরাই থাকে। একজন মাদকাসক্ত তার নেশার জন্য হিংস্র্র হয়ে উঠে। তখন সে এমন কোন কাজ নাই, যা সে করে না। এভাবেই একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে বড় সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে।

এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ভাসমান মানুষের দ্বারা অপরাধের ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি নগরের ভাসমান ও ভবঘুরে মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিটা অপরাধের পেছনে একটা এড্রেস থাকে। কিন্তু ভাসমান মানুষের দ্বারা সংঘটিত কোনো অপরাধের (এড্রেস) ঠিকানা থাকছে না। তারা বিশেষ করে অপরাধ শেষ করেই ওই এলাকা এড়িয়ে চলে অন্য এলাকায় চলে যায়। আবার কয়েকদিন পর পূর্বের জায়গায় ফিরে আসে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ  বলেন, মাদক সেবন যারা করে তারা অনেক ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। মাদকাসক্তের স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি থাকে না। মাদকের প্রতি সে নির্ভরশীল হয় এবং মাদকই তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন তার মাদকের প্রয়োজন পড়ে, তখন সে টাকার জন্য চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে সবকিছু করতে পারে। এর জন্য শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করলেই হবে না। গোটা সমাজকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *