সিলেটে অসামাজিকতার আস্তানায় পুরুষ নির্যাতন

সিলেট

কিনব্রিজ পেরিয়ে উত্তরপ্রান্তে এলেই উপযাচক হয়ে কেউ একজন আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে। তারপর ফিস ফিস করে জানতে চাইবে, লাগবে নাকি ভাই? ভালো…..ল আছে।

আপনি যতই অস্বীকার করেন, কোন লাভ নেই। গায়ে পড়েই আপনাকে লোভ দেখাবে সুন্দরী নারী সঙ্গের। এতে কেউ কেউ তাদের ফাঁদে পড়েন। দ্রুত তাদের সঙ্গে উঠে যান সুরমা মার্কেটের আবাসিক হোটেল নামক পতিতালয় মেঘনায়। একসময় এর নাম ছিল হোটেল বদরুল। যুগের পর যুগ প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় হোটেলটিতে চলছে নারী দেহের রমরমা বাণিজ্য।

আর যারা এসব দালালকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, অনেক সময় তাদের জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় হোটেল কক্ষে। তারপর চলে শারীরিক নির্যাতন। এখন হোটেলটি নিরিহ পুরুষদের জন্য টর্চার সেলে রূপান্তরিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই মার্কেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাধারণ ব্যবসায়ী।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তেমন এক ঘটনাই ঘটেছে এই হোটেল নামক এই পতিতালয়ে। নগরীর শামিমাবাদ মজুমদার পাড়ার আশেক মিয়ার ছেলে জাবেদ হোসেন রাজু ও গোলাপগঞ্জের বাঘা জালালনগরের হেলাল উদ্দিনের ছেলে আবু সুফিয়ান এদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন।

তখন হোটেলটির একজন দালাল তাদের কাছে জানতে চায় কিছু লাগবে কি না। তারা অস্বীকার করলে গায়ে পড়ে সুন্দর নারীর কথা উল্লেখ করলে সুফিয়ান ও রাজু দরকার নাই বলে এড়িয়ে যেতে চান। তখন দালালরা তাদের ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে তারাও দু’জন প্রতিবাদ করেন। এরপর মুহুর্তে তাদের ঘিরে ধরে দালালরা। জোর করে তাদের হোটেলে নিয়ে মারধোর করে ছেড়ে দেয় তারা। ছাড়া পেয়ে সুফিয়ান ও রাজু তাদের নিজেদের বন্ধু-বান্ধবদের খবর দিলে তারা সবাই একত্রি হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হোটেলটি ঘেরাও করে রাখেন।

খবর পেয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালী থানা পুলিশের একদল সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আশার আশ্বাস দিলে রাত পৌণে ৯টার দিকে যুবকরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

এ ব্যাপারে নির্যাতিত দুই যুবক কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সিলেট প্রতিদিনকে জানান।

এর কয়েক মাস আগে সিলেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাংবাদিককেও ধরে নিয়ে মারধর করতে উদ্যত হয়েছিল হোটেলটির দালালরা। পরে অন্য কয়েকজন সাংবাদিকের প্রতিবাদের মুখে হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছিল তারা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুরমা মার্কেটের অন্তত ১০ জন সাধারণ ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। তারা সবাই জানান, এটা এখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এই মার্কেটের ভেতরে বা বাইরে কোথাও মানসম্মান নিয়ে চলার উপায় নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে যারাই প্রতিবাদ করেন, দালালরা তাদের উপরই চড়াও হয়। ধরে নিয়ে নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়। তারা জানান, আগে এই হোটেলের নাম ছিল হোটেল বদরুল। বারবার পুলিশি অভিযানের মুখে কিছুদিন হোটেলটি বন্ধ রাখা হয়। এরপর নাম পাল্টে মেঘনা রাখা হয়।

জানা গেছে, হোটেল বদরুল পরিচালনার সাথে যে কুখ্যাত সুন্দর আলীর নাম জড়িত ছিল, বর্তমানেও সেই সুন্দর আলীই হোটেল মেঘনা পরিচালনা করছেন। তার পেছনে আরও প্রভাবশালী চক্র আছে বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা।

সুরমা মার্কেটে দীর্ঘদিন থেকে নিজের চেম্বার রয়েছে সিলেট জজকোর্টের নোটারি পাবলিক অ্যাডভোকেট মো. জুয়েল বলেন, পুলিশকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এই পতিতা ব্যবসা চলছে। হোটেল নিউ সুরমা ও মেঘনা হোটেলের কারণে মার্কেটে কোন সুস্থ পরিবেশ নেই। এদের কারণে আমার অফিসে নারী-পুরুষ কোন ক্লায়েন্ট আসতে পারেন না, ভয় পান। আমরা ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানাতে পারিনা। কারণ, এখানে যারা ক্রেস্ট সাইনবোর্ড ইত্যাদির ব্যবসা করেন, তারা সবাই বাইরের লোক। তাদের সবাইকে জিম্মি করে এই দালাল চক্রটি এমন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

অ্যাডভোকেট জুয়েল দ্রুত সুরমা মার্কেটের দুই পতিতালয় হোটেল মেঘনা ও হোটেল নিউ সুরমা স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান জানান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *