সিলেটে এখনো অন্তহীন অপেক্ষা

সিলেট

সিলেটে নিখোঁজ এম. ইলিয়াস আলীকে নিয়ে আশা ছাড়ছে না পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিল করা হচ্ছে। দোয়া চাওয়া হচ্ছে দেশবাসীর কাছেও। ফলে ক্ষীণ হলেও আশাবাদী সিলেট বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। তবে; ইলিয়াসপত্নী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা রটে যাওয়া খবরে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ২০১২ সালের ১৭ই এপ্রিল ঢাকার বনানীতে নিখোঁজ হন বিএনপি’র তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলী। সঙ্গে ছিলেন গাড়িচালক আনসার আলী। সাদা  পোশাকধারীরা জোরপূর্বক নিজের গাড়ি থেকে এম. ইলিয়াস আলীকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সেই থেকে নিখোঁজ তিনি। তখন সিলেট জুড়ে ক্ষোভের ঝড়।

ইলিয়াসকে ফিরে পেতে আন্দোলন দানা বাঁধে সিলেটে। এই আন্দোলনে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও তখনকার ছাত্রলীগ কর্মীদের ছোড়া গুলিতে মারা যান কয়েকজন। বিশ্বনাথজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। ইলিয়াসের সন্ধান পেতে সন্তানদের নিয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ছুটে গিয়েছিলেন লুনা। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ইলিয়াস ফিরলেন না। ৫ই আগস্টের পট পরিবর্তনের পর ইলিয়াস আলীকে নিয়ে আশাবাদী পরিবার। আয়না ঘরের দিকে চোখ ছিল সবার। ইলিয়াস ফিরবেন; এমন আশায় বুক বেঁধেছিলেন সবাই। কিন্তু এখনো আসেনি কোনো সুখবর। ইলিয়াস আলীর জমানায় সিলেট বিএনপি ছিল সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। তার ডাকে টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী আন্দোলন সিলেটে দুর্বার হয়েছিল। স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়েছে সিলেটে। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশও হয়েছিল। ক’দিন আগে সিলেটের গহরপুর মাদ্রাসায় ইলিয়াস আলীর জন্য দোয়া- মাহফিল হয়েছে। এর আয়োজক ছিলেন তার ভাই আসকির আলী। এই দোয়া-মাহফিলে এম. ইলিয়াস আলীর জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন আসকির আলী। কিন্তু হাসিনা সরকারের পতনের ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ইলিয়াস কিংবা আনসার আলীর খবর মিলেনি। পরিবারের দাবি; এখনো তারা এম. ইলিয়াস আলী ও ড্রাইভার আনসার আলীকে খুঁজে ফিরছেন। সবার কাছে দোয়া চাচ্ছেন। সিলেট বিএনপি’র নেতারা বলছেন; এটি স্পষ্ট গুম নামক আয়নাঘরে ইলিয়াস আলী নেই। যদি থাকতেন তাহলে এতদিনে বেরিয়ে যেতেন। তবে কী দেশের বাইরে কোথাও আছেন ইলিয়াস আলী- সে প্রশ্নেরও উত্তর মিলছে না। এদিকে- ২০১২ সালের ৩রা এপ্রিল ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনার ও তার বন্ধু ছাত্রদল নেতা জুনেদ আহমদ। একটি মামলার আসামি হয়েছে এপ্রিলের প্রথম দিকে অন্তরালে চলে যান তিনি। সিলেট ছেড়ে পালিয়ে যান ঢাকায়। এ অবস্থায় ঢাকার উত্তরা থেকে বন্ধু জুনেদসহ নিখোঁজ হন দিনার। দিনারের বোনের স্বামী সিলেট জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শামীম আহমদ জানিয়েছেন- দিনারের অপেক্ষায় এখনো তারা রয়েছেন। পট পরিবর্তনের পর থেকে তারা দিনার ও জুনেদকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না তাদের। এ কারণে সিলেটের চার নেতা গুমের ঘটনায় তারা আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন। গুম পরিবার সিলেট-এর উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। এ কর্মসূচি থেকে তারা নিখোঁজ নেতাদের সন্ধান দাবি করবেন। এতে বিএনপি পরিবারের সবাই উপস্থিত থাকবেন বলে জানান তিনি। সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- তাদের দাবি প্রেক্ষিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের উদ্যোগে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন গুম হওয়া নেতাদের ব্যাপারে তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে। তিনি বলেন- আমরা বিশ্বাস করি বিগত সরকারের বিভিন্ন আয়নাঘরে তাদের বন্দি থাকা নেতারা ফিরবেন। এ বিশ্বাস নিয়ে এখনো আমরা জোরালো দাবি জানাচ্ছি। গুম হওয়া পরিবারের পাশে অতীতের ন্যায় এখনো সিলেট বিএনপি’র পরিবার সোচ্চার রয়েছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *