রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এডিসি শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার সিলেট থেকে পালিয়ে গেছেন। কাউকে না জানিয়েই গত ১৬ দিন ধরে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বিষয়টি এরই মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। তার অনুপস্থিতির বিষয়টি পুলিশ বিভাগে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান সিলেটের ডাককে এডিশনাল এসপি আখতার কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, এডিশনাল এসপি আখতার ছুটিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ছুটি কাটিয়ে তিনি আর কর্মস্থলে ফিরে আসেননি।
ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার সিলেট’র পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসানও এডিশনাল এসপি আখতারের কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আখতারুল ইসলাম গত ২৬ জানুয়ারি কর্মস্থলে ছিলেন। এর পরের দিন থেকেই তিনি আর কর্মস্থলে আসেননি। কাউকে না জানিয়ে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বিষয়টি ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরে জানানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পালিয়েছেন এডিশনাল এসপি আখতার :
সূত্র জানায়, এডিশনাল এসপি শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম সর্বশেষ গত ২৬ জানুয়ারি রোববার পর্যন্ত তার কর্মস্থল ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার সিলেটে কর্মরত ছিলেন। এর পরদিন ২৭ জানুয়ারি সোমবার তিনি আর কর্মস্থলে যাননি। সেই থেকে গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার পর্যন্ত টানা ১৫ দিন ধরে কর্মস্থলে তিনি অনুপস্থিত রয়েছেন। নগরীর রিকাবীবাজারের সিলেট জেলা পুলিশ লাইন্সের অভ্যন্তরে ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার সিলেট’র কার্যালয়।
পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থল থেকে চলে যান তিনি। সিলেটে তিনি যতদিন কর্মরত ছিলেন; ততদিন তাকে টেনশনে থাকতে দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে এভাবে কাউকে না বলে চলে যাওয়া পুলিশ প্রবিধান অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মূলত চানখারপুল গণহত্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করতেই তিনি কর্মস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। পালিয়ে যাওয়া আখতার বর্তমানে সিলেট, ঢাকা, না নিজ বিভাগ রংপুরে রয়েছেন তার কোনো তথ্য পুলিশের কাছে নেই। তার ব্যক্তিগত সেলফোনে গতকাল এ প্রতিবেদক একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
ডিএমপি থেকে সিলেটে বদলি :
রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় গণহত্যার নেতৃত্ব দেয়া এই এডিশনাল এসপি আখতার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)-এর রমনা জোনের এডিসির দায়িত্বে ছিলেন। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশ থেকে ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার সিলেটে বদলি করে পুলিশ সদর দপ্তর। এরপর অনেকটা চুপিসারে তিনি সিলেটে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন। সিলেটে প্রায় ৫ মাস কোনোমতে অতিবাহিত করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যান।
কে সেই পুলিশ কর্মকর্তা আখতার :
শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম মূলত দেশব্যাপী আলোচিত ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে। ডিবির মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) পদে কর্মরত ছিলেন। ডিবিতে কর্মরত অবস্থায় ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তাকে রমনা জোনের এডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়। তিনি জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রংপুর সিটি কর্পোরেশনের একাধিকবারের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফিজের মেয়ের জামাই।
চানখারপুলের সেই বর্বর গণহত্যা :
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যখন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান তখনও এডিশনাল এসপি আখতারের নেতৃত্বে চলে বর্বর গণহত্যা। চানখারপুল এলাকায় ৫ আগস্ট দুপুর ১১ টার দিকে একে একে ৭ জনকে হত্যা করে পুলিশ। ওই গণহত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে পুলিশ কনস্টেবল সুজন হোসেনকে গ্রেফতার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করা হয়েছে। গত রোববার ট্রাইব্যুনাল তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। চানখারপুল গণহত্যার বিচার কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে।
শেয়ার করুন