এমজেএইচ জামিল : আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে সিলেট বিভাগের খামারগুলোতে চলছে কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট করণের কাজ। খামারিরা জানিয়েছেন গো খাদ্যের ঊর্ধ্বগতিতে বেড়েছে ব্যয়। ফলে দাম বেড়েছে পশুর। পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে চোরাই গরু আসা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, সিলেটে এবার ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৪ কুরবানীর পশুর ঘাটতি রয়েছে।
অথচ গেল বছর ঈদুল আযহায় সিলেট বিভাগে কুরবানীযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার ৮০৩ টি। এবার পশু কমেছে প্রায় ৯ হাজার। এজন্য বিগত সময়ের ভয়াবহ বন্যা, নিত্যপণ্য ও পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের সংখ্যা কমে যাওয়াকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এই কারণে বিভাগজুড়ে কুরবানীযোগ্য পশুর সংখ্যা কমেছে বলে জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল আযহায় সিলেট বিভাগে কুরবানী যোগ্য পশুর চাহিদা ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৯৩ টি। এরমধ্যে সিলেট বিভাগে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত আছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮১৯টি পশু। বাকী ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৮টি পশুর ঘাটতি পূরণে অন্যান্য জেলা থেকে আমদানী করতে হবে।
বিভাগের ৪ জেলার বিভিন্ন খামারে কুরবানীর জন্য প্রস্তুত প্রায় আড়াই লাখ গবাদি পশু। এবারো স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশু দিয়ে চাহিদা মিটানো যাচ্ছেনা। বিভাগে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার ২১১ টি খামারে দিন রাত প্রাকৃতিক উপায়ে চলছে পশু হৃষ্টপুষ্ট করণ কাজ। প্রতিটি খামারে ছোট, মাঝারি ও বড় সবধরণের কোরবানির পশু রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট জেলার ৪ হাজার ১১১ টি, সুনামগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৫৫টি, মৌলভীবাজার জেলায় ১ হাজার ৬৭০টি ও হবিগঞ্জ জেলায় ৫ হাজার ৩৭৫টি খামার রয়েছে।
খামারিদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, গো খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে খামারের ব্যয়। ইতোমধ্যে গোখাদ্যের দাম বেড়েছে শতকরা ৩০-৪০ ভাগ। প্রতি কেজি ভুট্রার ভুষি আগে ২৬ টাকায় বিক্রি হলেও এখন দাম বেড়ে ৪০/৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সাইলেজ প্রতি কেজি ৭/৮ টাকা থেকে বেড়ে ১২/১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি গরু আগে ৭/৮ হাজার টাকায় লালন-পালন করা গেলেও এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে ১৪/১৫ হাজার টাকায়। বাড়তি খরচ বহন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে খামার মালিকরা। তবে এবার প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে অবৈধ পথে কুরবানীর পশু আসা রোধ করতে পারলে তারা ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১ বছরের ব্যবধানে সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৭৬০ জন খামারি কমেছে। গত বছর বিভাগে ১৪ হাজার ৯৭১টি খামারে কুরবানীযোগ্য পশু পালন করা হয়েছিলো। এবছর বিভাগে ১২ হাজার ২১১টি খামারে কুরবানীর পশু পালন করা হয়েছে। ফলে কমেছে পশুর সংখ্যা।
এদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খামারিকে গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্ট করণের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্টেরয়েডের ব্যবহার রোধে উপজেলা পর্যায়ে উঠান-বৈঠক করে খামারিকে হাতে কলমে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর সিলেট বিভাগে কুরবানী হবে প্রায় ৪ লাখ পশু। এরমধ্যে প্রস্তুত আছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮১৯ পশু। এরমধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৪টি ষাড়, ২৯ হাজার ৪৬১টি বলদ, ২৪ হাজার ৪৮৮টি গাভী, ৬ হাজার ৪৩৪টি মহিষ, ৩৩ হাজার ১০৪টি ছাগল, ১৩ হাজার ৬৫৭টি ভেড়া ও ২২ হাজার ৬২১টি অন্যান্য পশু রয়েছে। এদিকে ঘাটতি থাকা বাকী ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৪টি পশু ঘরোয়াভাবে গৃহপালিত এবং অন্যান্য জেলা থেকে আমদানী করে কুরবানী করা হবে।
এবছর সিলেট জেলায় কুরবানীর চাহিদা আছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৭টি পশুর। এরমধ্যে জেলায় প্রস্তুত আছে ৬৫ হাজার ৮৯৬টি পশু। তন্মধ্যে ২৮ হাজার ২৪৫টি ষাড়, ১৩ হাজার বলদ, ৫ হাজার ৩৪১টি গাভী, ৩ হাজার ১৪০টি মহিষ, ১১ হাজার ৭৫৮টি ছাগল, ৪ হাজার ৩৫৬টি ভেড়া ও অন্যান্য ৫৬টি পশু রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলায় এবার কুরবানী হবে ৫৪ হাজার ৩৬২টি পশু। এরমধ্যে প্রস্তুত আছে ৫৭ হাজার ৩৬৭টি পশু। তন্মধ্যে ৩০ হাজার ৪৫৯টি ষাড়, ৭ হাজার ৭৯১টি বলদ, ৮ হাজার ১৫৬টি গাভী, ১ হাজার ২৯৪টি মহিষ, ৫ হাজার ৩৩৬টি ছাগল, ৪ হাজার ৩৩১ টি ভেড়া রয়েছে। বিভাগের মধ্যে একমাত্র সুনামগঞ্জ জেলায় কুরবানী যোগ্য ৩ হাজার ৫টি অতিরিক্ত পশু রয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলায় এবছর কুরবানী হবে ৯৮ হাজার ৪০২টি পশু। এরমধ্যে জেলায় প্রস্তুত আছে ৫৬ হাজার ৮৪৮টি পশু। তন্মধ্যে ১৭ হাজার ৪১৫টি ষাড়, ৩ হাজার ৭২৯টি বলদ, ৩ হাজার ৩৪২টি গাভী, ১ হাজার ২৮০টি মহিষ, ৭ হাজার ৩৬টি ছাগল, ১ হাজার ৪৮১টি ভেড়া ও ২২ হাজার ৫৬৫টি অন্যান্য কুরবানী যোগ্য পশু রয়েছে। জেলাটিতে ৪১ হাজার ৫৫৪টি কুরবানী যোগ্য পশুর ঘাটতি রয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলায় এবার কুরবানী হবে ৯০ হাজার ৬৩২টি পশু। এরমধ্যে জেলায় প্রস্তুত আছে ৫৪ হাজার ৭০টি পশু। তন্মধ্যে ২৮ হাজার ৯৩৫টি ষাড়, ৪ হাজার ৯৪১টি বলদ, ৭ হাজার ৬৪৯টি গাভী, ৭২০টি মহিষ, ৮হাজার ৯৭৪টি ছাগল, ৩ হাজার ৪৮৯টি ভেড়া রয়েছে। জেলাটিতে কুরবানী যোগ্য ৩৫ হাজার ৯২৪টি পশুর ঘাটতি রয়েছে। যা অন্যান্য জেলা থেকে আমদানীর মাধ্যমে পূরণ করা হবে।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের পরিচালক ডা. মারুফ হাসান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, এবার সিলেটে কুরবানী যোগ্য পশুর ঘাটতি রয়েছে। তবে সেটা পাশর্^বর্তী কয়েকটি জেলা থেকে পশু আসলেই পূরণ করা সম্ভব। গোখাদ্য ও সব জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাওয়া অনেকে খামার ছেড়ে দিয়েছেন। এছাড়া আগে ঘরোয়াভাবে কুরবানীযোগ্য পশু পালন হতো। সেটাও এখন কমে গেছে। এরপরও যেসব খামারিরা টিকে আছেন তারা চাহিদামতো পশু যোগান দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। আর আমরাও খামারিদের টিকিয়ে রাখতে সবধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
শেয়ার করুন