সিলেটে কোরবানীর হাট : দাম বেশি, বিক্রি কম

সিলেট

স্টাফ রিপোর্টার : এবার কোরবানির পশুর মজুত গতবারের চেয়ে বেশি। তবে মজুত বেশি থাকলেও গত বছরের তুলনায় কোরবানির পশুর দাম বেড়েছে অন্তত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। এদিকে পশু বেচাকেনা শুরু হলেও হাটকেন্দ্রিক ব্যবসা পুরোপুরি জমেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শহরকেন্দ্রিক কোরবানির পশুর কেনাকাটা জমে ওঠে ঈদের ঠিক ২-১ দিন আগে।
এদিকে, উৎপাদন ও দ্বিগুণ পশু বাজারে থাকলেও দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। উৎপাদন খরচের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম হাঁকছেন বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, করোনা সংকটসহ নানা অজুহাতে গোখাদ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। খরচ হিসাবে পশুর যে দাম চাওয়া হচ্ছে, সেটা তেমন বেশি নয়।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় কোরবানিযোগ্য খুব ভালো ভালো পশু রয়েছে। তবে বড় গরু ও মহিষের চাহিদা অনেক কম। মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি। তাই দামও বেশি।সিলেটের সবচেয়ে বড় হাট কাজীর বাজার। ইতোমধ্যে ছোট-বড় নানা ধরনের গরুতে ভরে গেছে হাট। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাজারে এখনো ট্রাকভর্তি করে পশু আনা হচ্ছে। তবে বেচা-কেনা শুরু হয়নি তেমন। পশু এনে বাজারের সুবিধাজনক স্থানে রাখছেন বেপারীরা। ক্রেতা আসলেই দাম হাঁকাচ্ছেন তারা। যদিও বেশিরভাগ ক্রেতা বাজারে এসে দরদাম করে চলে যাচ্ছেন।

কাজিরবাজারে গিয়ে দেখা যায়, গত বছর ৭০-৮০ হাজার টাকায় যে গরু বিক্রি হয়েছে তা এবার লাখের বেশি দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। এতে ক্রেতাদের হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায়।ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে পুরো হাট ঘুরেও বেশি দামের কারণে গরু কিনতে পারেননি অনেকে। দাম শুনেই অনেকে ফিরে গেছেন। কয়েকটি গরু বিক্রি হলেও, তা বেশি দাম দিয়ে কিনেছেন কেউ কেউ। মধ্যবিত্তদের অনেকে বাজেট স্বল্পতার কারণে গরু কিনতে না পেরে ফিরে গেছেন।
গরু বিক্রি করতে আসা একজন জানান, তার ২৫টি গরু আছে। সবগুলোর ওজন ৫ মণের বেশি। এখন পর্যন্ত যে দাম চাইছেন, তা মাংসের বাজার অনুযায়ী চাচ্ছেন। তবে এও সত্য, গোখাদ্যের দাম বাড়ায় এবার পশুর দাম বেশি। কেউ লোকসান দিয়ে তো পশু বিক্রি করবে না।

গরু ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, হাটে যেসব গরু উঠেছে, তার বড় অংশই বাড়িতে পোষা। বাইরের গরু নেই। এ কারণে পশুর দাম বেশি।হাট পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অন্তত অর্ধশত গরু বিক্রি হয়েছে। ছাগল তেমন বিক্রি হয়নি। বিক্রেতারা দাম বেশি চাওয়ায় বিক্রি কম হচ্ছে। ক্রেতারা বাড়ি ফিরে গেছেন।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, পবিত্র ঈদুল আজহায় দেশে কোরবানির জন্য পশু চাহিদার চেয়ে বেশি আছে। পশুর চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। আর কোরবানির জন্য দেশে পশু আছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি; যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার বেশি। এই হিসাবে এবার চাহিদার চেয়ে ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি বেশি আছে।
এদিকে, সিলেট জেলার প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, সিলেট বিভাগে ২ লাখ ১২ হাজার ৯৯৯টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৬৫ হাজার ৮৯৬টি, মৌলভীবাজার জেলায় ৩৫ হাজার ২৮, হবিগঞ্জে ৫৪ হাজার ৭০৮ এবং সুনামগঞ্জে ৫৭ হাজার ৩৬৭ কোরবানি যোগ্য পশু রয়েছে।

সিলেট জেলায় ষাঁড় ২৮ হাজার ২৪৫টি, বলদ ১৩ হাজার, গাভী ৫ হাজার ৩৪১, মহিষ ৩ হাজার ১৪০টি, ছাগল ১১ হাজার ৭৯৮টি, ভেড়া ৪ হাজার ৩৫৬টি এবং অন্যান্য ৫৬টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। মৌলভীবাজারে ষাঁড় ১৭ হাজার ৪১৫টি, বলদ ৩ হাজার ৭২৯টি, গাভী ৩ হাজার ৩৪২টি, মহিষ ১ হাজার ২৮০টি, ছাগল ৭ হাজার ৭৫১টি এবং ১ হাজর ৪৮১টি ভেড়া মিলিয়ে ৩৫ হাজার ২৮টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। হবিগঞ্জ জেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ষাঁড় ২৮ হাজার ৯২৯টি, বলদ ৪ হাজার ৯৪১টি, গাভী ৭ হাজার ৬৪৯টি, মহিষ ৭২০টি, ছাগল ৮ হাজার ৯৭৪টি এবং ভেড়া ৩ হাজার ৪৮৯টি রয়েছে। আর সুনামগঞ্জে ষাঁড় ৩০ হাজার ৪৬৯টি, বলদ ৭ হাজার ৭১১টি, গাভী ৮ হাজার ১৫৬টি, মহিষ ১ হাজার ২৯৪টি, ছাগল ৫ হাজার ৩৩৬টি, ভেড়া ৪ হাজার ৩৩১টি মিলিয়ে ৫৭ হাজার ৩৬৭টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *