সিলেটে ঘরে ঘরে ‘চোখ ওঠা’ রোগী

সিলেট

সিলেটে হঠাৎ করে ‘চোখ ওঠা’ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত দুই সপ্তাহ থেকে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সীরা। বিশেষ করে শিশুদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।

এতে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন।

তবে এ রোগে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সতর্ক না হলে এ রোগ থেকে কর্নিয়ার আলসার ও অন্ধত্বের মতো গুরুতর অবস্থাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘চোখ ওঠা’ রোগকে কনজাংকটিভা বা চোখের প্রদাহ বলা হয়।

সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ থেকে ‘চোখ ওঠা’ রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। প্রথম দিকে সংক্রমণের হার কম থাকলেও বর্তমানে ব্যাপক হারে বাড়ছে এ রোগীর সংখ্যা। সিলেট নগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসজনিত এ রোগটি। সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হচ্ছে শিশুরা। বাদ যাচ্ছেন না বৃদ্ধরাও। ‘চোখ ওঠার’ সঙ্গে জ্বর ও সর্দি কাশিতে ভুগছেন অনেকে। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন ‘চোখ ওঠা’ রোগীরা। তবে সংক্রমিতরা বেশিরভাগ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরও এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। ব্যাপক হারে ‘চোখ ওঠা’ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় সিলেটজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন অনেক অভিভাবক সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন।

সিলেট নগরীর তাতীপাড়া এলাকার বাসিন্দা সামিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে হালকা জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত হই। পরদিন থেকেই চোখ জ্বালা পোড়া শুরু হয়। তিনদিন পর আমার কমলেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে ‘চোখ ওঠা’ রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। একে একে সবাই আক্রান্ত হয়েছেন।’

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথমে স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে এ রোগটি দেখা দেয়। পরবর্তীতে বাড়ির প্রতিটি ঘরে বিভিন্ন বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হন। এখনও নতুন করে কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন। সবাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মুয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘ঘরের সবাই একের পর এক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ কেউ তিনদিনে ভালো হয়েছেন। তবে একই এলাকার অনেকে এক সপ্তাহেও ভালো হননি।

জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নন্দন কুসুম দাস বলেন, এটি একটি সিজনাল ও ভাইরাসজনিত রোগ। মৌসুম পরিবর্তনের সময় এ রোগে আক্রান্ত হন অনেকে। প্রতিবছর দু’বার এমনকি তিনবারও এ রোগের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। তবে এবার ব্যাপক হারে এ রোগে সংক্রমিত হচ্ছেন অনেকে। প্রতিদিনই আক্রান্তরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। মানুষের সচেতনতার অভাবে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি বলেন, যদিও চোখ-ওঠা রোগটি অত্যন্ত সংক্রামক। তবে কারও চোখের দিকে তাকালেই সংক্রমিত হয় না। যদি কোনো সংক্রমিত রোগী চোখ স্পর্শ করে এবং সেই হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধৌত না করেই যদি কোনো কিছুতে স্পর্শ করে, তবে ভাইরাস ওই বস্তুতে চলে যায়। এখন যদি অন্য কেউ ওই বস্তু স্পর্শ করে এবং হাত না ধুয়ে চোখ স্পর্শ করে, তাহলে তার চোখও সংক্রমিত হবে। অন্যথায় সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বললে বা একসঙ্গে কাজ করলে তার থেকে সংক্রমিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ডা. নন্দন কুসুম বলেন, কখনো কখনো চোখ-ওঠা রোগীদের সেকেন্ডারি ইনফেকশন থেকে রক্ষা করতে তাদের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপের প্রয়োজন হয়। তবে বেশিরভাগ রোগী বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে যায়। সাধারণত এটি ৫-১০ দিনের মধ্যে কমে যায়।

তিনি বলেন, এ রোগকে একেবারে হালকাভাবে নেয়া যাবে না। কখনো কখনো এটি চোখের কর্নিয়ায় ছড়ায়। এতে কর্নিয়ার আলসার এমনকি অন্ধত্বের দিকে চলে যেতে পারে। কর্নিয়ায় ‘ইনফেকশন’ হলে সুস্থ হতে দুই তিনমাস সময় লাগতে পারে।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, স্কুলগামী শিশুদের এ রোগ দেখা দিলে অভিভাবকদের উচিত তাকে স্কুলে না পাঠিয়ে বাসায় রাখা। আর এসএসসি পরীক্ষার্থী কেউ আক্রান্ত হলে সে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। কোনোভাবে যেন তার ব্যবহৃত কোনো খাতা-কলম অন্য পরীক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে না পারে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সচেতনতাও জরুরি।

জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম আব্দুল আহাদ বলেন, হাসপাতালে শতকরা ১৫ শতাংশ রোগী আসছেন চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়ে। আমরা তাদেরকে বহিঃবিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছি। প্রথম দিকে একটু কম হলেও বর্তমানে অনেক মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এ রোগে আক্রান্তরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন।

তিনি বলেন, এ রোগে আক্রান্তদের আমরা ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এটি সাধারণত ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ঘটে, যা অত্যন্ত সংক্রামক। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *