সিলেটে টানা বৃষ্টি, বাড়ছে নদ-নদীর পানি

সিলেট

এখন শ্রাবণ মেঘের দিন। ঋতুর হিসাবে বর্ষাকাল। এ সময়টা মোটামুটি বৃষ্টি বন্যা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের। তবে আবহমান বাংলার এই প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র আজ-কাল আর তার ধারবাহিকতা বজায় রাখছেনা। এই কয়েকদিন আগের খরতাপের কথাতো নিশ্চয় মনে আছে সিলেটবাসীর। প্রকৃতির অমন রুদ্ররূপ বা কঠোরতা থেকে মুক্তির জন্য সবাই বড় বেশী বৃষ্টি চেয়েছিলেন।

সেই বৃষ্টি এসেছে। শ্রাবনের শেষের দিকে এসে প্রমাণ মিলছে, বাংলায় এখন বর্ষার শেষ সময়টা চলছে। গত ২/৩ দিন ধরে টানা বর্ষণ হলেও মুষলধারে বৃষ্টি বলতে যা বুঝায়, তা অবশ্য নয়।

বৃষ্টি হচ্ছে উজানেও। মানে সিলেটের উজানে ভারতের আসাম মেঘালয় মনিপুর ইত্যাদি রাজ্যে বৃষ্টি ঝরছে।  আর তার প্রভাবও পড়ছে সিলেটের নদ-নদীগুলোতে। পানি বাড়ছে অনেকটা হু-হু করে। তবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট অফিস অবশ্য আশ্বস্ত করেছে, ভয়ের কিছু নেই। এ পর্যায়ে যে বৃষ্টি বাংলাদেশ বা ভারতে ঝরছে তাতে অন্তত সিলেট অঞ্চলে বন্যার তেমন কোন আশঙ্কা নেই।

রোববার (৬ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে সোমবার (৭ আগস্ট) সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সিলেট অঞ্চলে মোট ৮৫ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে রেকর্ড করেছে সিলেট আবহাওয়া অফিস।

আর সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি ঝরেছে ২৯ দশমিক ৩ মিলিমিটার।

আবার গত ৫ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে ৬ আগস্ট সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে ৬২ মিলিমিটার।

সিলেটের নদ-নদী, বিশেষ করে সুরমা কুশিয়ারায় বৃষ্টির প্রভাবে পানি বাড়ছে দ্রুত।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা কানাইঘাট পয়েন্টে রোববার ছিল বিপৎসীমার ৪ দশমিক ৪২ মিটার নিচ দিয়ে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ব্যবধান কমেছে ২ দশমিক ১৭ মিটার। এ পয়েন্টে সারাদিন পানি বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আগের দিন পানি ছিল ৮ দশমিক ৬৩ মিটার। সোমবার সকাল ৬টায় ছিল ১০ দশমিক ১৫,  সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ২৫, দুপুর ১২টায় ১০ দশমিক ৩৬, বিকেল ৩টায় ১০ দশমিক ৪৪ ও সন্ধ্যা ৬টায় পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫০ মিটার।

সিলেট পয়েন্টে আগের দিন পানি বইছিল বিপৎসীমার ৩ দশমিক ৪১ মিটার নিচ দিয়ে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ব্যবধান কমেছে প্রায় ১ মিটার। আগের দিন সুরমার এ পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয়েছিল ৭ দশমিক ৩৯ মিটার। সোমাবার সকাল ৬টায় পানি ছিল ৭ দশকি ৯৭, সকাল ৯টায় ৮ দশমিক ০৪, দুপুর ১২টায় ৮ দশমিক ২১, বিকেল ৩টায় ৮ দশমিক ২৭ ও সন্ধ্যা ৬টায় পানি ছিল ৮ দশমিক ৪১ মিটার।

একইভাবে পানি বাড়ছে সিলেটের অপর নদী কুশিযারায়। রোববার এ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫ দশমিক ৬৯ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সোমবার বিকেল ৩টায় ব্যবধান কমেছে ২ দশমিক ৪৫ মিটার। সকাল ৬টায় এ পয়েন্টে পানি ছিল ১০ দশমিক ৪৬, সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৭১, দুপুর ১২টায় ১০ দশমিক ৮৬ ও বিকেল ৩টায় ১০ দশমিক ১৬ মিটার পানি রেকর্ড করা হয়েছিল।

কুশিয়ারা শেওলা পয়েন্টে আগের দিন পানি বইছিল বিপৎসীমার ৫ দশমিক ০১ মিটার নিচ দিয়ে। ২৪ ঘন্টায় ব্যবধান কমেছে দশমিক ৮২ মিটার। রোববার এ পয়েন্টে পানি ছিল ৮ দশমিক ০৪ মিটার। সোমাবার সকাল ৬টায় এ পয়েন্টে পানি ছিল ৮ দশমিক ৩৯, সকাল ৯টায় ৮ দশমিক ৪২, দুপুর ১২টায় ৮ দশমিক ৫৬, বিকেল ৩টায় ৮ দশমিক ৭২ ও সন্ধ্যা ৬টায় পানি ছিল ৮ দশমিক ৮৬ মিটার।

কুশিয়ারার অপর দুই পয়েন্ট ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টেও পানি বাড়ছে। তবে তা কিছুটা ধীরে। আর সিলেটের অপর দুই নদী লোভা এবং সারির পানিও বাড়ছে।

তবে পানি বাড়তে থাকলেও আপাতত সিলেট অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট অফিসের প্রধান প্রকৌশলী আসিফ আহমদ। তিনি বলেন, পানি বাড়লেও বন্যার তেমন কোন আশঙ্কা নেই।

আর আগামী অন্তত ৪/৫ দিন সিলেট অঞ্চল এমন বৃষ্টিময় থাকবে বলে জানিয়েছেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ সজিব আহমদ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *