করোনা মহামারী ও তৃতীয় দফায় বন্যার পর অনেকটা স্থবিরতা কাজ করছে সিলেটজুড়ে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ নানা স্থবিরতা নিয়ে চলছে সাধারণ মানুষ। দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খাওয়া মানুষের জীবন সংগ্রামে দুর্ভোগ ও ভোগান্তির নাম হিসেবে যুক্ত হয়েছে পরিবহণ সেক্টর। ধর্মঘটের নামে রীতিমত নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলছে নানা অরাজকতা।
সাধারণ মানুষসহ পরিবহণ শ্রমিকদের জীবন সংগ্রামে এখন বড় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে এই পরিবহণ সেক্টর। কথায় কথায় পরিবহণ ধর্মঘট নামের নৈরাজ্যে ভোগান্তি সৃষ্টি হয় সিলেটজুড়ে। এবার সেই ভোগান্তির সাথে যুক্ত হয়েছে পরিবহণ সেক্টরের নাটকীয়তা। সোমবার নাটকীয় ও কৌশলী ধর্মঘটের ডাক দেয় তারা।
জানা যায়, সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন ও সিলেট জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজনের মুক্তির দাবিতে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহণ ধর্মঘট ডাক দেয় সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন। সে অনুসারেই সোমবার সকালে শুরু হয় পরিবহণ ধর্মঘট। কিন্তু মাত্র দু-এক ঘন্টা স্থায়ী হয় এ ধর্মঘটের নামে ভোগান্তি। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রশাসনের আশ্বাসে এবং কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতাদের নির্দেশনার কথা জানিয়ে পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত করে সংগঠনটি। এতেই তাদের ধর্মঘটকে নাটকীয়তাই বলে ধরে নিচ্ছেন সচেতন মহল। তাদের দাবি, ধর্মঘটের নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে নিজেদের অসৎ স্বার্থসিদ্ধি আদায় করছেন শ্রমিক নেতারা। আর এতে সাধারণ শ্রমিকদের পুঁজি হিসেবে ধরে তাদের ‘ব্রেইন ওয়াশ’ করে চলছে নৈরাজ্য।
তাদের হাতে নাটাই রেখে ইচ্ছেমত শ্রমিকদের ঘুড়ি হিসেবে ব্যবহার করছে শ্রমিকনেতারা। এমন অভিযোগ শ্রমিকদের মুখে মুখে। তবে তারা এবিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসের ড্রাইভার বলেন, সংগঠনের সিদ্ধান্ত আমাদের মেনে চলতে হয় তাই মুখ বুঝে সয়ে রয়েছি। তবে আমাদেরও পরিবার রয়েছে, ধর্মঘটের নামে বন্ধ রয় গাড়ির চাকা, কিন্তু পেটের চাকা তো বন্ধ থাকেনা!
এদিকে সমাজের সচেতন নাগরিকবৃন্দ মনে করছেন, দলীয় মামলায় গ্রেফতার ব্যক্তির মুক্তির দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে সাধারণ মানুষদের দুর্ভোগে ফেলে নৈরাজ্য সৃষ্টি ও স্বার্থসিদ্ধিই তাদের মূল উদ্দ্যেশ্যে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের জ্বালাও-পোড়াওয়ের একটি মামলায় আলী আকবর রাজনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল। এই মামলায় তাকে গত ৭ ডিসেম্বর সিলেট নগরীর সুরমা মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
শ্রমিনেতারা জানান, গ্রেফতারের প্রায় দেড় মাস পর পর্যন্ত বারবার জামিন চাওয়া হলেও তাকে জামিন দিচ্ছে না আদালত।
এবিষয়ে গত ১১ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়ে জামিন প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। গত রোববার (২২ জানুয়ারি) জামিন আবেদন করেন তারা। এদিনও জামিন না দেয়া ও সেই মামলাসহ আরও কয়েকটি মামলা থেকে মুুক্তির দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয় তারা।
সোমবার সকাল থেকে ধর্মঘট শুরু হলেও ক্ষনস্থায়ী এ ধর্মঘটে তেমন প্রভাব পড়েনি জনজীবনে। সকালের দিকে কিছুটা ভোগান্তি পোহালেও তা ছিল সংকীর্ণ সময়জুড়ে।
অনুসন্ধানে জানা যায়,ধর্মঘটের নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রশাসনের কাছ থেকে বাড়তি ফায়দা নিতে নাটকীয় ও কৌশলী ধর্মঘটের ডাক দেয় তারা। যাতে করে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে কিছুটা হলেও ভাবে!
এদিকে এ তথ্যেও সাথে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মঈনুল ইসলামের বক্তব্যেও মিল পাওয়া যায়।
সিলেট লাইনের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এভাবে হলে একটার পর একটা মামলায় জড়ানো হবে এবং আটকানো হবে এতে আমার সংগঠনের পদ শূন্য হবে। ফলে ইউনিয়নের কার্যক্রম চালাতে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। মামলা যতটাই হোক কোনো সমস্যা নেই। জামিন হোক, হাজিরা দেউক, আইন মানি-আদালত মানি। কিন্তু সাত-আটটা হাজিরা দেয়ার পরও তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। একটু লাড়া দিলাম, চিনি ছাড়া লাড়া দিলাম। কারণ অন্য মামলায় আর যাতে তাকে আর জড়ানো না হয়।’
শেয়ার করুন