সিলেটে নানা অনিয়মে জর্জরিত পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়

সিলেট

সিলেটে পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটিতে দীর্ঘদিন ধরে নেই উপাচার্য (ভিসি)। উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) নেই পাঁচটিতেই। এ ছাড়া দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার পদ শূন্য। একটি বিশ্ববিদ্যালয় তো এখনো নিজস্ব ক্যাম্পাসেই যেতে পারেনি। শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে ভাড়া ভবনে। শুধু তা-ই নয়, নিয়ম করে প্রতিবছর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করার পর সমাবর্তন ছাড়া তোলা যায় না মূল সনদ। এসব নানা অনিয়ম চলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেটের নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়টি (এনইইউবি) এখনো একটি সমাবর্তনও আয়োজন করেনি। দীর্ঘদিন ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার। যেতে পারেনি নিজস্ব ক্যাম্পাসেও। নগরের তেলিহাওর এলাকায় ভাড়া ভবনে চলছে একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শাহজাদা আল মেহেদী সাদিক বলেন, ‘প্রো-ভিসির প্যানেল তালিকা পাঠানোর পর বাতিল হলে আর পাঠানো হয়নি। সমাবর্তনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছি। উনি এখনো অনুমতি দেননি।’

দীর্ঘদিন ধরে ভিসি, প্রো-ভিসি ছাড়াই চলছে সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৫ বছরে কোনো সমাবর্তনের আয়োজন করেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মিহির কান্তি চৌধুরী বলেন, ‘ভিসি, প্রো-ভিসি নিয়োগের জন্য প্যানেল তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে নিয়োগ হয়ে যাবে। নিয়োগের পরপরই আরেকটি সমাবর্তন আয়োজন করব।’

তিন বছরের বেশি সময় ধরে প্রো-ভিসি, ট্রেজারার ছাড়াই চলছে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়।  ১২ বছরে কোনো সমাবর্তনের আয়োজন করেনি তারা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে দীর্ঘদিন কোণঠাসা এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দিন ধরেই প্রো-ভিসি নেই। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০১৯ সালে তৃতীয় সমাবর্তন করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘প্রো-ভিসি নিয়োগের জন্য আমরা প্যানেল তালিকা অনেক আগেই পাঠিয়েছি।’

আরটিএম-আল কবির টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। প্রো-ভিসি শুরু থেকেই নেই। প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ এবং বাধ্যতামূলক এই পদগুলো ফাঁকা রেখে কীভাবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে, এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। ভিসি, প্রো-ভিসি কিংবা ট্রেজারারের বাইরেও শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন পদ ফাঁকা রয়েছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শিক্ষা বিশ্লেষকেরা বলছেন, অভিভাবকহীন থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানে যেমন একাডেমিক কার্যক্রম দিন দিন ভেঙে পড়ছে, তেমনই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার মান ও স্বচ্ছতার অভাব দেখা দিচ্ছে। চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পরও অনেকেই মূল সনদ হাতে না পাওয়ায় কর্মক্ষেত্র ও বিদেশে উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রে নানা বাধার মুখোমুখি হচ্ছেন।

খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, অনিয়ম করতেই ইচ্ছা করে এসব বিশ্ববিদ্যালয় পদগুলো শূন্য রেখেছে। কেউ কেউ অযোগ্য লোকদের দিয়ে প্যানেল তালিকা পাঠিয়ে দায়সারার চেষ্টাও করেন। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড এবং মালিকেরা তাঁদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়।

ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, নিয়মানুযায়ী প্রতি বছর সমাবর্তন করার কথা। প্রতি বছর না হলেও অন্তত দুই-তিন বছরের মধ্যে সমাবর্তন অবশ্যই করতে হবে। তা না হলে মূল সনদ পেতে বিপাকে পড়বেন শিক্ষার্থীরা। এগুলো তো আসলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। দীর্ঘদিন ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার থাকবে না, এটা কোনো নিয়মের মধ্যেই পড়ে না। শিগগিরই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *