সিলেট নগরের অভিজাত পাড়া হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা ইমরান আহমদ। পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় বাজার তিনি করেন। তবে সম্প্রতি জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাজারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। কেমন পরিমাণ কমিয়েছেন জানতে চাইলে, তিনি জানান প্রায় অর্ধেক। আয়ের সঙ্গে মেলাতে গিয়েই এই সিদ্ধান্ত তার।
পেশায় মুদ্রণশিল্প ব্যবসায়ী ইমরান বলেন, ‘খুব কষ্টে আছি ভাই। আগে তো সবকিছুর দাম এতো বাড়তি ছিলো না। এখন তো ভয়াবহ অবস্থা। নিম্নবিত্তদের ঘরে ঘরে এখন নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। এইসব দেখার কেউ নাই।’
এদিকে- সিলেট নগরের সুবিদবাজরের বাসিন্দা শাহীন আহমদ বাজার থেকে এক সপ্তাহের জন্য ঘরের বাজার কিনতে গিয়ে একদিনের কিনেই ফিরেছেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান- ৪ জনের পরিবারের জন্য ৫০০ গ্রাম করে কয়েক পদের সবজি কিনেই ৯০০ টাকার ওপর খরচ হয়ে গেছে। তাই আজকের জন্য আর তিনি আর বাজার করতে আগ্রহ হারান।
সাংবাদিক পরিচয় জেনে তিনি উল্টে প্রশ্ন করেন- মধ্যবিত্তদের যদি এই অবস্থা হয় তখন নিম্ন আয়ের মানুষরা কিভাবে খাচ্ছে?
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার কাপড়ের দোকানের কর্মচারী শফিউল ইসলাম জানান, মাত্র আট হাজার টেকা (টাকা) বেতন পাই। কলোনির বাসা ভাড়া দেওয়া লাগে (দিতে হয়) সাড়ে ছয় হাজার। আব্বা-আম্মা আর হুরু ভাই লইয়া (বাবা-মা আর ছোট ভাই নিয়ে) বাকি ১৫শ দিয়া চলি কিলান?
অন্যদিকে- সিলেটে প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। ক্রমেই ভোজ্যতেল, ডিম, মাংস, শাক-সবজিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজার কারো নিয়ন্ত্রণে নেই। ফলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো দাম বাড়াচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের বাজার কিছুটা বেড়েছে। লিটারে ১৪ টাকা কমেছে সয়াবিন তেলের দর। দাম বাড়ার তালিকায় আছে চাল, ডাল, কাঁচামরিচ, আলু ও আদার রয়েছে। কাঁচামরিচ ছাড়া প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ থেকে সাত টাকা করে। তবে কাঁচামরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। এছাড়া সব ধরনের সবজির দামও বাড়ছে ৫ থেকে ১০ টাকা করে।
নগরীর আম্বরখানা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজিতে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকায়। হাঁসের ডিমে ডজনে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। আর সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত ১৮৫ টাকা লিটার দরে।
এদিকে- মাছ, গরুর মাংসের দামও বেড়েছে কিছুটা। গরুর মাংস ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। তবে গরু ও খাসির কলিজা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজিতে। যে গত সপ্তাহে কেজিতে ৩০ টাকা কম ছিলো বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
অপরদিকে- মাছের দামও বেড়েছে হুহু করে। সব ছোট মাছ কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে। আর বড়মাছ কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমারা সবসময় বাজার তদারকি করছি। কেউ যাতে দাম অতিরিক্ত বাড়াতে না পরে সেদিকে আমাদের নজরদারি আছে। একাধিক দল বাজার মনিটরিং করছে।’
শেয়ার করুন